এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১১ নভেম্বর : আগামী ১৫ই ডিসেম্বর শিলিগুড়ি কেওখালি ময়দানে বিশ্ব বাংলা হাটের নিচে সকাল দশটা থেকে লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠের আয়োজন করা হয়েছে । ওই অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা হলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার বামশোর গ্রামের বাসিন্দা ইনামুল ইক । তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একজন স্বেচ্ছাসেবক । গত ১৯ অক্টোবর ‘এইদিন’ কে পাঠানো একটা ভিডিও বার্তায় এই খবর জানিয়ে শিলিগুড়ি কেওখালি ময়দানে আয়োজিত গীতা পাঠের আসরে সকলকে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি । কিন্তু তারপর থেকেই তাকে নিজের স্বজাতীয়দের কটাক্ষের শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ । তাদের কটাক্ষের উত্তরে আজ সোমবার ইনামুল হক বলেছেন,’কোরান আমার মাথায়, আর শ্রীমদভগবদগীতা আমার বুকে’ । পাশাপাশি তিনি তার সমালোচকদের ভালোভাবে কোরান পাঠের পরামর্শও দিয়েছেন ।
জানা গেছে,বামশোর গ্রামের ডাক্তারপাড়ায় বাড়ি ইনামুল হকের (৫৪)৷ তার বাবা গোলাম কাদের মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ১৯৭৮ সালে মারা যান । মা হানুফা বিবি প্রয়াত হয়েছেন ১৯৯১ সালে । ইনামুল হকের ২০০১ সালে বিয়ে হয় ৷ কিন্তু তার স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র সংসার করার শর্ত দিলে তাদের অশান্তি শুরু হয় । শেষ পর্যন্ত বিয়ের ৩ মাস পরে স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হয়ে যায় ইনামুলের । তারা দু’ভাই । ভাই বিবাহিত । বাড়িতে রয়েছেন ভাই, ভাতৃবধূ, দুই ভাইপো এবং এক ভাইঝি । কৃষিজীবী ইনামুল হক ভাইয়ের সংসারেই থাকেন ।
তিনি জানান,আরএসএস-এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ২০০৬ সালে ওই সংগঠনে যোগ দেন । তারপর থেকেই ওই জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন । সংগঠনের সংখ্যালঘু মোর্চার গুরুত্বপূর্ণ পদও সামলেছেন তিনি । ইনামুল হক বলেন,’আরএসএস সম্পর্কে অনেক মানুষের কিছু ভুল ধারনা আছে । আমাদের সংগঠনে যেমন শ্রীমদভগবদগীতা নিয়ে চর্চা হয় তেমনি কোরান নিয়েও হয় । একথা বহু মানুষেরই অজানা ।’
জানা গেছে,গত বছরের ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে লক্ষকন্ঠে গীতাপাঠের আসরেও উপস্থিত ছিলেন ইনামুল হক । ওই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ব্রহ্মচারী জগদ্ধাত্রী নামে এক সন্ন্যাসী । তিনিই শিলিগুড়ি কেওখালিতে গীতা পাঠের অনুষ্ঠানের প্রচারের জন্য তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইনামুল । তিনি এও জানিয়েছেন যে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের মতই অনুষ্ঠানকে সফল করতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । সেই উদ্দেশ্যেই গত ১৯ অক্টোবর ‘এইদিন’কে ওই ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন তিনি ।
কিন্তু খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তার গ্রামের নিজের সম্প্রদায়ের লোকজনের বিভিন্ন কটুক্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইনামুল হক । আজ সেই কটুক্তির উত্তরে তিনি বলেন,’আমি কোরানের আদর্শে চলি ৷ কোরানেই বলা আছে মানুষকে ভালবাসতে । কিন্তু ভারতবর্ষে মেরুদন্ড হচ্ছে সনাতন ও সাধুসন্তরা । কোরান যেমন আমার মাথায় থাকবে তেমনি শ্রীমদ্ভাগবতগীতাকে আমি বুকে চেপে রাখবো। গীতাকে অসম্মান করার কোন অধিকার আমার নেই । আমি কোরাকে মানি, গীতাকে মানি, আমি নিজের মতো করে চলি । আমি পীরজাদারদের কথা মানি না ।’
এরপর তিনি নিজের সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, আপনারা কোরান মেনে চলুন । কোরানে কি বলা হয়েছে জানুন । কারোর কথা শুনে কোরান বুঝতে পারবেন না । নিজেকে ভালো রাখতে গেলে কোরান পড়ুন । কোরান পড়লে একজন যোগ্য সন্তান হতে পারবেন… একজন যোগ্য স্বামী হতে পারবেন… একজন যোগ্য পিতা হতে পারবেন । কোরান পড়লে আপনি দেশের সেবা করতে পারবেন ।’
প্রসঙ্গত,আগের দিনের ভিডিও বার্তায় ইনামুল হক বলেছিলেন,’আপনারা গীতা পাঠ করুন। গীতা পাঠ করলে মন মেজাজ ভালো থাকবে । গীতা পাঠ করলে মানুষ স্বাবলম্বী হবে । গীতা পাঠ করলে স্বামী-স্ত্রীর সুখ থাকবে। গীতা পাঠ করলে ভালো মা তৈরি হয় । গীতা পাঠ করলে ভালো বাবা তৈরি হয় । গীতা পাঠ করলে ভালো দেশ তৈরি হয়।’ আর তার এই বক্তব্যের পরেই গ্রামের একাংশের জাতীয় মানুষরা ক্ষুন্ন হন বলে অভিযোগ ।।