প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ নভেম্বর : আরজি কর কাণ্ডের পর থেকে বাংলার পুলিশের ভবমূর্তি নিয়ে সমালোচনার বন্যা বইয়ে যাচ্ছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা। এমন আবহের মধ্যেই বাংলার পুলিশকে আরও একবার যেন দাগিয়ে দিলেন খোদ পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়।তিনি নিজে বৃহস্পতিবার অভিযানে নেমে তোলাবাজি সহ বিভিন্ন দুস্কর্মে নাম জড়ানো পূর্বস্থলী থানার আইসির গাড়ির চালক গোপাল দাসকে পাকড়াও করেন।তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়ে দেন। আর তাতেই বেকায়দায় পড়ে যায় গোপাল দাস ওরফে ব্রজগোপাল এবং তার সহযোগী হোটেল মালিক বরুণকান্তি ঘোষ ওরফে বাপন।দু’জনকেই পুলিশ রাতে গ্রেপ্তাররে।তাদের শুক্রবার কালনা মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ নিজেদের হেপাজতে নিয়েছে।
বিধায়ক ও এলাকার মানুষজনের কথায় অনুযায়ী, পূর্বস্থলী থানার আইসির গাড়ির চালক গোপাল দাসের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে।পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কোন পদেই গোপাল চাকরি করে না। তবু প্রায় এক দশক কাল ধরে গোপাল’ই হয়ে আছেন পূর্বস্থলী থানার আইসির গাড়ি চালক।আইসি বদল হলেও আইসির গাড়ি চালকের পদ যেন গোপালের জন্য বাঁধা হয়ে থাকে।এর জন্য সামান্য পারিশ্রমিক পেলেও গোপালের বাহ্যিক কামানি নাকি চোখ ধাঁদিয়ে দেওয়ার মতনই ছিল।
এলাকাবাসীর অভিযোগ,পুলিশ লেখা নম্বরপ্লেট বিহীন ঝাঁ চকচকে একটা বোলেরো গাড়ি গোপাল পূর্বস্থলী থানায় খাটায়।সেই গাড়িতেই আইসি চাপেন। শুধু এইটুকুই নয়, গোপালের বিরুদ্ধে আরও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর । নিজেকে থানার ‘ডাকমাস্টার’ বলে পরিচয় দিয়ে গোপাল বালি বোঝাই ট্রাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পন্যবাহী গাড়ি থেকে মোটা টাকা তোলা আদায় করাতেও নাকি সিদ্ধহস্ত। গোপাল কিংবা তার বাহিনীকে বালির ট্রাক পিছু ১ থেকে ২ হাজার টাকা না দিলে পূর্বস্থলীতে কোন বালির ট্রাকের চাকা গড়াতে পারে ন। অভিযোগের এখানেই মেষ নয় । পূর্বস্থলীর পারুলিয়া এলাকায় নিজের বাড়ি তৈরীর জন্য জমি কেনা থেকেশুরু দোকান থেকে ইমারতি দ্রব্য নেওয়া সবেতেই গোপাল তাঁর তোলাবাজি বিদ্যেকে পুরোদস্তুর কাজে লাগিয়েছে। এনিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ’মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গোপাল দমিয়ে রাখতো,এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর । পূর্বস্থলী থানার আইসির গাড়ির চালক গোপাল দাসের এইসব দুস্কর্ম নিয়ে পূর্বস্থলীর বাসিন্দারা ক্ষোভে ফুঁষছিলেন।তাতে ঘৃতাহূতি পড়ে পূর্বস্থলীর কালেখাঁতলা এলাকার একটি হোটেলে “মধুচক্রের’ আসর বসা শুরুহলে। গোপাল দাসের তোলাবাজির ডেরা হিসাবে পরিচিতি পাওয়া হোটেলে নিয়মিত মধুচক্রের বসার বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষজন বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় এবং পূর্বস্থলী থানায় অভিযোগ জানান। এমন অভিযোগ পেয়ে বিধায়ক বেজায় চটে যান । এলাকার মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যার বৃহস্পতিবার বেলায় ওই হোটেলে পৌছে যান । সেখান থেখে গোপাল দাসকে পাকড়ও করে তিনি পূর্বস্থলী থানার পুলিশের হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি গোপালের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বিধয়ক তপন চট্টোপাধ্যায় পুলিশ কে জানিয়ে দেন ।
তোলাবাজ কে শায়েস্তা করতে বিধায়ককে আশরে নামতে হওয়ার প্রসঙ্গে তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, পূর্বস্থলী থানার আইসির গাড়ির চালক গোপাল দাসের দুস্কর্ম সীমা ছাড়িয়ে ছিল ।ওই ড্রাইভারের তোলাবাজি সহ নানা দুস্কের পরিপ্রেক্ষিতে এলাকার মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। বুধবার রাতে আইসির গাড়ির চালকের নানা অপকীর্তি জানতে পারার পর বিধায়ক হিসাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। দস্কর্ম এলাকায় চলতে দেওয়া যায় না। তাই গোপাল দাসকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।পূর্বস্থলী থানার আইসি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এর পড়েই নড়ে চড়ে বসেন। তিনি গোপাল দাস ও তার সাগরেদ হোটেল মালিক বরুণকান্তি ঘোষকে ওইদিন রাতেই গ্রেপ্তার করেন।
এই ঘটনা নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা । জেলা বিজেপির সহ- সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন , বাংলার পুলিশ নিজেরই যে তোলাবাজ পোষে সেটা তৃণমূল বিধায়ক নিজে প্রমাঢ করে দিয়েছেন ।মৃত্যুঞ্জয় বাবুর দাবি করেন,তৃণমূলের রাজত্বে বাংলায় আইনের শাসন বলে কিছু নেই । তাই আইনের রক্ষকরাই ভক্ষক বনে গিয়েছে। এর কারণেই বাংলার পুলিশের ভাবমূরতি নিয়ে এখন শুধুই সমালোচনার বন্যা বইছে ।।