এইদিন ওয়েবডেস্ক,আগ্রা,১৯ মে : উত্তরপ্রদেশের আগ্রা জেলায় ‘লাভ জিহাদ’-এর ঘটনা সামনে এসেছে । অর্গানাইজ উইকলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক পাঞ্জাবি মহিলাকে ফাঁদে ফেলার পর জোর করে ধর্মান্তরিতে বিয়ে করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে রাজা খান নামে এক মুসলিম ব্যক্তি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে । পরে ওই মহিলা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় । মহিলা তার পুত্রের খৎনা করাতে অস্বীকার করলে তাকে তার স্বামী তিন তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় বলে অভিযোগ ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী,বছর ত্রিশের ওই মহিলার নাম প্রিয়াঙ্কা বক্সি । আগ্রা জেলার রাকাবগঞ্জ থানার বাসিন্দা মৃত ভানু বক্সীর মেয়ে তিনি । গত ১৩ মে রাকাবগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগে প্রিয়াঙ্কা পুলিশের কাছে জানান,২০১৭ সালে একটা অজানা নম্বর থেকে তার মোবাইলে একটি ফোন আসে । ওই ব্যক্তি নিজেকে রাজা হিসাবে পরিচয় দিয়েছিল । ওই ব্যক্তি ‘রং নম্বর’ বলে ফোনটি কেটে দেওয়ার আগে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার আগ্রহ প্রকাশ করে । তারপর অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রতিদিন তাকে ফোন করতে থাকে এবং বলে সে তার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায় । মহিলাটি তার প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং ক্রমে তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । রাজা নামে ওই ব্যক্তি মহিলাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় । কয়েক বছর পর, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, রাজা তাকে আগ্রার দারগাইয়া বালুগঞ্জে তার বাড়িতে নিয়ে যায় । সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন রাজা হিন্দু নয়, বরঞ্চ মুসলিম । তার নাম রাজা খান । এই দেখে তিনি পালিয়ে আসার চেষ্টা করেন । কিন্তু রাজা, রাজার বাবা মোহাম্মদ রিয়াজ খান,মা জরিনা, রাজার তিন বোন বুশরা, তনু ও মুসকান মিলে তাকে একটি ঘরে আটকে রাখে এবং তাকে জোর করে ইসলামে ধর্মে ধর্মান্তরিত করে । তার নতুন নাম দেওয়া হয় নিশা খান । পরে ২০১৮ সালে ২৮ নভেম্বর তারিখে রাজার সঙ্গে তার নিকাহ করানো হয় । মহিলা জানান,তখন তার আর কোনও উপায় ছিল না । এছাড়া রাজার কাছে তার কিছু আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও ছিল,যেগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার হুমকি দিয়ে ব্লাকমেল করত । সেই ভয়ে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করতে সাহস করেননি । তিনি রাজার ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার এবং ওই সমস্ত ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হন ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী,মহিলা দাবি করেছেন তাকে একটি ঘরের মধ্যে সর্বদা আটকে রাখা হয় । রাজা ও রাজার পরিবার প্রতিনিয়ত হিন্দু দেবদেবীকে গালাগালি ও ইসলামের গুণকীর্তন করত । তারা দাবী করতো মানুষের একটাই উপাস্য আর তা হলো আল্লাহ। সমস্ত মূর্তিপূজারী জাহান্নামের আগুনের সম্মুখীন হবে । মহিলা জানা, ইতিমধ্যে তিনি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন । বর্তমানে তার পুত্র সন্তানের বয়স ৩ বছর । ছেলের খৎনা করাতে অস্বীকার করায় রাজা তাকে তিন তালাক দিয়ে দেয় এবং ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী রাজা ও তার পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় । তারপর তিনি ছেলেকে নিয়ে মায়ের কাছে চলে যান । এদিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর থেকেই রাজা খান ও তার পরিবার তাকে ও ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ ওই মহিলার । সেই ভয়ে তিনি থানায় এফ আই আর দায়ের করতে যাননি ।
মহিলার আরও অভিযোগ, বছর খানেক পর তিনি
রাকাবগঞ্জ থানায় যান । কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি । আগ্রা কমিশনারের কাছেও গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানেও তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি । শেষ পর্যন্ত তিনি গত ৩ মে আদালতের দ্বারস্থ হন । অবশেষে আদালতের নির্দেশে রাজা খান ও তার পরিবারের ৫ সদস্যের বিরুদ্ধে গত ১৩ মে এফ আই আর নথিভুক্ত করে রাকাবগঞ্জ থানা ।
জানা গেছে,অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইপিসি ৪২০ (প্রতারণা),৫০৬ (অপরাধমূলক ভয় দেখানো), ৩২৩ (স্বেচ্ছায় আঘাত করা), ৫০৪ (ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান) এবং ১২০-বি (অপরাধী ষড়যন্ত্র) প্রভৃতি ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে । পুলিশ জানিয়েছে,অভিযুক্তরা পলাতক , তাদের সন্ধান চলছে । এদিকে প্রিয়াঙ্কা খৎনাকে এটি ‘বিপজ্জনক প্রথা’ বলে অর্গানাইজ উকলিকে জানান, তিনি বর্তমানে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে কাজ করছেন । তিনি একাই তার ছেলেকে মানুষ করবেন।।