এইদিন ওয়েবডেস্ক কলকাতা,২১ ফেব্রুয়ারী : ভাষা দিবস পালন মঞ্চে ‘খালিস্তানি’ বিতর্ককে উসকে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । আজ বুধবার কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে ভাষা দিবস অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী কোন দলের নাম না করেও বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ‘পাঞ্জাবি পাগড়ি পরে বলে খালিস্তানি, আর মুসলিম হলেই পাকিস্তানি ?’ এদিকে নিজের ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে পালটা বছর চারেক আগে রাজ্য পুলিশের দ্বারা শিখ নিগ্রহের ভিডিও পোস্ট করলেন শুভেন্দু অধিকারী ।
প্রসঙ্গত,বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে পুলিশ আধিকারিক জসপ্রীত সিংকে ‘খলিস্তানি’ বলে কটাক্ষ করার অভিযোগ উঠেছে । মঙ্গলবার বিকাল থেকেই মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ দেখান শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ। বুধবারও বিক্ষোভ চলে ।
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’সমালোচনা করার অধিকার সকলের আছে কিন্তু যদি কেউ মনে করেন চ্যানেলে বসে বাংলাকে অপমান করবেন,বাংলা ভাষাকে অপমান করবেন, ভাষা বাংলায় হোক, ভাষা উর্দুই হোক, ভাষা গোর্খাই হোক…..একটা পাঞ্জাবি অফিসারের কি অপরাধ ছিল? সে ডিউটি করছে । ফোর্সে পাঞ্জাবির রেজিমেন্ট নেই? গোর্খা রেজিমেন্ট নেই? হ্যাঁ, বাঙালি রেজিমেন্ট নাই, যদিও সবচেয়ে বেশি আন্দোলন বাঙালীরাই করেছিল । সব ধর্মকেই তো আমরা ভালবাসি । তাই বলে,একজন পাঞ্জাবি পাগড়ি বলে পরে বলে তাকে খালিস্তানি বলে দেবে? কত মুসলিম আইপিএস আইপিএস, আইএএস অফিসার আছে। তাই বলে মুসলিম বলে তাকে পাকিস্তানি বলে দেবে?
আমাকে তো কতবার কত নামে ব্যঙ্গ করা হয়েছে, কিন্তু আমি মানামানি করি না।’
শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী তাকে নিশানা করে বলেন,’ দু’একজন হঠাৎ গজিয়ে উঠেছে । সবচেয়ে বড় কলঙ্ক বাংলার, যারা বাংলাকে কলুষিত করছে । কলঙ্কিত করছে, পর্যুদস্ত করছে,লাঞ্ছিত করছেন, অত্যাচারিত করছেন….. তাদের আমি বলি আগামী দিন ভালো থাকবেন । আপনারা আমাদের খারাপ চাইলেও আমরা আপনাদের খারাপ চাই না । কিন্তু বাংলার অধিকার ও মর্যাদা কিভাবে রক্ষা করতে হয় এটা আমরা জানি । আমরা মাথা নত করতে জানিনা,আমরা মাথা উঁচু করে চলি, এটা বাংলা বারবার প্রমাণ করে চলেছে, আজও করে চলবে ।’
এদিন ফের সিএএ ও এনআরসির বিরোধিতা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । আধার বাতিল বিতর্কের রেস ধরে তিনি বলেন,’আমরা আধারে বিশ্বাস করিনা । আধার কার্ড নিয়ে যে জঘন্য চক্রান্ত হলো, সেই চক্রান্ত আমরা রুখে দিলাম । মাথায় রাখবেন, এটা বাংলা অন্য জায়গা নয় । সূর্য যখন উদিত হয়, আমাদের বিবেক তখন জাগ্রত হয় । আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে এক সেকেন্ড লাগে । এনআরসি করা প্ল্যান, ডিটেনশন ক্যাম্প করার প্লান, সমস্ত মতুয়াদের আধার কার্ড ডিএক্টিভেটেড করে দেওয়া হয়েছে । কোন অধিকারে? একটা লোক জানতে পারল না তার কি অপরাধ! আধার কার্ড ডিএক্টিভেটেড করে দেওয়া অর্থ তাকে বিদেশি তকমা দেওয়া । তারপর পাঁচ বছর বাদে তাকে শুনতে হবে ফরেনার….ফরেনার…. ফরেনার । তারপরে হবে, একটা কার্ড দিয়ে দেবো । এটা রাজনীতির খেলা,ভোটের খেলা। আমি ভোটের অঙ্কে বিশ্বাস করি না, মানবিকতার অংকে বিশ্বাস করি, অধিকারের অংকে বিশ্বাস করি ।’
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর ২০২০ সালে রাজ্য পুলিশের দ্বারা শিখ নিগ্রহের ভিডিও পোস্ট করে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ‘২০২০ সালে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কলকাতায় ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার প্রতিবাদের সময় শ্রী বলবিন্দর সিংকে হেনস্থা করে, তার পাগড়ি টেনে নামিয়ে দেয় এবং তার চুল ধরে টেনে নিয়ে যায়। সেই পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ যারা এখনও শ্রী বলবিন্দর সিংয়ের কাছে ক্ষমা চায়নি এবং তাকে ন্যায়বিচার পেতে সাহায্য করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুসরণ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে যাতে সন্দেশখালী থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায় ।’।