নীহারিকা মুখার্জ্জী,দক্ষিণ ২৪ পরগণা,১৮ অক্টোবর : এতদিন ওদের পৃথিবী ছিল ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার’। পাড়ার ঠাকুর দেখেই মনের ইচ্ছে পূরণ করত। জানতনা পাড়ার বাইরেও বহু জায়গায় দুর্গাপুজো হয়। এরজন্য ওদের মনে একটা আফসোস থেকে গিয়েছিল। ওরা সব দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ফলতা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। ওদের সৌভাগ্য ওরা এমন একটা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে যেখানে লিপিকা করণ, ধরিত্রী পুরকাইত, সবিতা মিস্ত্রী, মণিশ চক্রবর্তী, শুভাশিস হালদার, কুন্তল মণ্ডল, মৌসুমী প্রামাণিক, জয়দেব নস্করের মত ছাত্র দরদী শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং তিলক নস্করের মত প্রধান শিক্ষক আছেন যারা তাদের মনস্তত্ত্ব ভালভাবেই বুঝতে পারেন। তাইতো তাদের অবচেতন মনের সুপ্ত ইচ্ছে বারবার পূরণ হয়। এবারও ব্যতিক্রম ঘটল না ।
বিদ্যালয়ের উদ্যোগে ১৮ ই অক্টোবর শুরু হয় পুজো পরিক্রমা। ছাত্রদরদি হলেও বিদ্যালয়টি নিয়ম শৃঙ্খলার বিষয়ে খুব কড়া। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সাড়ে চার শতাধিক হলেও নির্দিষ্ট সময়ে প্রায় দেড়শ জন উপস্থিত হয়। তাদের নিয়েই শুরু হয় পুজো পরিক্রমা। বিদ্যালয়ের আশেপাশে প্রায় চার কিলোমিটার ব্যাসার্ধ যুক্ত এলাকায় আটটির মত পুজো মণ্ডপ তারা দর্শন করে। এতেই অরিত্র, সমাপ্তি, তিথি, মৌবনী, সুইটি, অঙ্কিতা, শামিম, দিশা, রিশিতা প্রমুখদের মন খুশিতে ভরে ওঠে। তাদের চোখে-মুখে দেখা যাচ্ছিল খুশির ঝিলিক। খুশি তাদের অভিভাবকরাও।
বিদ্যালয়ে ফিরে আসার পর শারদোৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয় ছোট্ট একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিতা, নৃত্য, নাটক প্রভৃতির মাধ্যমে আগমনীর আগমন বার্তায় মুখরিত হয়ে ওঠে বিদ্যালয় চত্বর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক শঙ্কর কুমার নস্কর, ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ আতিকুল্লা মোল্লা, ফলতা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সঞ্চিতা মণ্ডল, ফলতা পঞ্চায়েত প্রধান শর্বরী সরদার, বিশিষ্ট সমাজসেবী রবিয়াল জমাদার ও রানা কাঞ্জী সহ এক ঝাঁক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তবে এখানেই শেষ নয়। বিশিষ্ট অতিথি, ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষিকা- সব একসাথে বসে ইলিশ মাছের একাধিক পদ যেমন ইলিশ মাছের তেল, ইলিশ মাছ ভাজা, ইলিশ মাছ ভাপা সহযোগে পালন করা হয় ইলিশ উৎসব। এটা ছিল বাড়তি পাওয়া। শঙ্করবাবু বললেন, ‘এই বিদ্যালয়ের আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করে। আমন্ত্রণ পেলেই ছুটে আসি। যাবার সময় নিয়ে যাই একরাশ আনন্দ।’ তিলকবাবু বললেন,ওরা আমাদের সন্তান। তাই আমরা ওদের জন্য পুজো পরিক্রমার আয়োজন করলাম। পুজোর প্রাক্কালে ইলিশ উৎসবও পালন করলাম। ওদের মুখের সরল ও পবিত্র হাসি আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্য ।’।