প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২১ মার্চ : তিন শিক্ষকের কু-কীর্তিতে মুখ পুড়লো শিক্ষক কুলের।স্কুলে ক্লাস চলাকালীন ছাত্রীদের শরীরের গোপন জায়গায় হাত দেওয়া থেকে শুরু করে অশ্লীল কথাবার্তা,অঙ্গভঙ্গি কিছুই বাদ রাখতেন না ওই তিন শিক্ষক। এমনকি রাতে ছাত্রীদের ফোনে অশ্লীল মেসেজ করেও উত্তক্ত করতেন গুনধর ওই তিন শিক্ষক।ছাত্রীদের আনা এমনই সব অভিযোগ ঘিরে বৃহস্পতিবার উত্তাল হয়ে ওঠে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর কাষ্ঠশালী নিভাননী উচ্চ বিদ্যালয় চত্ত্বর। কু-কীর্তিতে নাম জড়ানো তিন শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণের পড়ুয়া, অভিভাবক স্থানীয়রা স্কুলে বিক্ষোভ দেখান। সেই বিক্ষোভ চরমে পৌছালে বিশাল পুলিশবাহিনী স্কুলে পৌছায় । একই সময়ে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কৃষ্ণকান্ত কীর্তনীয়া সহ প্রশাসনের কর্তারাও পৌছান স্কুলে। সকলের উপস্থিতিতে পদত্যাগের সিদ্ধান্তে কথা ঘোষণা করে ভারপ্রপ্ত প্রধান শিক্ষক স্কুলের চাবি পরিচালন সমিতির সভাপতির হাতে তুলে দিলে এদিনের মত ক্ষোভ বিক্ষোভে বিরাম পড়ে।
ছাত্রীদের আনা অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে বিজয় সর্দারকে গ্রেফতার করেছে। পলাতক বাকি দুই অভিযুক্ত শিক্ষকের সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ । সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ আজ শুক্রবার ধৃত বিজয় সর্দারকে কালনা নহকুমা আদালতে পেশ করে ।
পড়ুয়া এবং অভিভাবকরি পূর্বস্থলীর কাষ্ঠশালী নিভাননী উচ্চ বিদ্যালয়ের যে তিন শিক্ষকের বিরূদ্ধে আশালীন ব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন তাঁরা হলেন আলমগীর হোসেন, বিজয় সর্দার ও সত্যজিৎ চৌধুরী। ছাত্রীদের অভিযোগ,বেশ কিছুদিন ধরে ক্লাস চলাকালীন এই তিন শিক্ষক ছাত্রীদের গোপনাঙ্গে হাত দিয়ে যাচ্ছিলেন ।এমনকি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী করা থেকে শুরু করে ছাত্রীদের ফোনে অশ্লীল মেসেজও করে যাচ্ছিলেন ওই তিন শিক্ষক । ইদানিং সেটা চরমে ওঠে।
স্কুলের তিন শিক্ষকের এই কু-কীর্তি আর মেনে নিতে না পেরো ছাত্রীরা বুধবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানায়। তার পরেও কোন সুরাহা না মেলায় বৃহস্পতিবার স্কুল ছাত্রীরা স্কুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।তাদের সঙ্গে সঙ্গত দেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা।সময় গড়ানোর সাথে সাথে শিক্ষকদের ঘরের সামনে শুরু হয় বিক্ষোভ । তপ্ত হয়ে ওঠে স্কুল চত্ত্বর ।
এক ছাত্রী জানায়,অঙ্কের শিক্ষক সত্যজিৎ স্যর গত বুধবার তাঁর ফোনে উল্টোপাল্টা মেসেজ করেন। তাঁর ছবি,সেলফি পাঠাতে বলে ওই শিক্ষক । ভূগোলের শিক্ষক আলমগীর স্যর স্কুলে ক্লাস চলাকালীন গাল টিপে দেওয়া থেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বহুবার হাত দিয়ে ‘ব্যাড টাচ’ করেছেন। ম্যাপ পয়েন্টিং করা শেখানোর অছিলায় তিনি ছাত্রীদের হাত চেপে ধরেন।” ওই দুই শিক্ষক এদিন স্কুলে না আসায় তাদের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এ নিয়ে অভিভাবকরা ওই শিক্ষকদের ফোন করে চেপে ধরতেই তারা এই ঘটনার জন্য ক্ষমা স্বীকার করে নেন। অন্যদিকে স্কুলে আসা আরও এক অভিযুক্ত শিক্ষক বিজয় সর্দারের দাবি, এইরকম ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
যদিও অভিভাবকদের অভিযোগ করেছেন শিক্ষিত সমাজ গড়ার কারিগররি যদি শিক্ষাঙ্গনে এমন নোংরামি করেন তাহলে মেয়েরা কিভাবে সুশিক্ষিত হবে । স্কুলও কি এখন ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ নয় ! বিষয়টিকে হালকা ভাবে না নিয়ে দুপুরে স্কুল পরিচালন সমিতির স্কুলে জরুরী বৈঠকে বসে। সেই বৈঠকের পরেও সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন মণ্ডল তাঁড় পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা সর্বসমক্ষে ঘোষণা করেন।
পরিচালন সমিতির সভাপতি অলোক নাথ স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে জানান,টিআইসি পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষনা করে আমার হাতে স্কুলের চাবি তুলে দিয়েছেন ।তারপরেই বিক্ষোভ ওঠে। প্রশাসনকে ঘটনার কথা জানানো হয়েছে। ওনারা যা সিদ্ধান্ত নেবেন তা মেনে নেওয়া হবে।” এই কথা শোনার পর পড়ুয়াও অভিভাবকরা বিক্ষোভ প্রত্যাহার করেন । কালনা মহকুমা সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক কৌশিক ঘোষ জানিয়েছেন,ছাত্রীদের আনা অভিযোগের বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্টও চাওয় হয়েছে।।