এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেহেরান,০৪ মার্চ : ইরানের বিভিন্ন এলাকার গার্লস স্কুলগুলিতে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে ৷ মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, কমপক্ষে ২৬ টি অল-গার্লস হাইস্কুল এবং কিছু মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার রাসায়নিক গ্যাস হামলা হয়েছে । বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি তেহরানে অবস্থিত। উত্তর-পশ্চিম ইরানের আরদাবিল থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে সাতটি স্কুল থেকে অন্তত ৪০০ জন মেয়েকে ফাতেমির জরুরি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়েছে । তাদের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলা হচ্ছে । এছাড়া কারাজ শহরের অন্তত একটি স্কুল, ইস্ফাহান ও আরদাবিলের বেশ কয়েকটি এবং কেরমানশাহ ও ইস্ফাহান প্রদেশের শাহিনশাহরের আরেকটি স্কুলে বিষাক্ত গ্যাস হামলার খবর পাওয়া গেছে । কিন্তু রাসায়নিক গ্যাস হামলার পরেও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে ইরানে ।
শুক্রবার জাহেদানে নতুন সমাবেশের খবর পাওয়া গেছে । সেখানে ইরানের বেলুচিদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে । সিস্তান ও বেলুচেস্তান প্রদেশের রাজধানীতে স্থানীয়রা শাসকদের নিপীড়নমূলক দমন ব্যবস্থা এবং গ্রেপ্তার সত্ত্বেও রাস্তায় নামছে । অনেককেই দেখা যায়, ‘অত্যাচারীর মৃত্যু হোক, শাহ হোক বা নেতা হোক!’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিলে পা মিলিয়েছেন । ইরানের ক্ষমতাসীন প্রাক্তন ও বর্তমান স্বৈরশাসকের কথা উল্লেখ করে অন্যান্য স্লোগানের মধ্যে রয়েছে “খামেনির মৃত্যু” এবং “আইআরজিসির মৃত্যু” প্রভৃতি ।
কর্তৃপক্ষ তাদের অনেক নিরাপত্তা ইউনিটকে জাহেদানের রাস্তায় পাঠিয়েছে এবং শাসন-বিরোধী সমাবেশ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সারা শহরে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে। স্থানীয় কর্মীদের মতে, শহরের গ্র্যান্ড মক্কি মসজিদের কাছে সরকারী নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে । ইরানের সাধারণ মানুষ বিশেষভাবে মোল্লাদের সুপ্রিম লিডার আলী খামেনিকে তাদের দুঃখ-দুর্দশার জন্য দায়ী করছে, একইসাথে নিপীড়ক ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পস (IRGC) এবং আধাসামরিক বাহিনী বাসিজ ইউনিটের পাশাপাশি অন্যান্য নিরাপত্তা ইউনিট যারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের দমন করছে তাদের নিন্দা করছে ।
এযাবৎ ইরানে অন্তত ২৮২টি শহরে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়েছে । ইরানের বিরোধী দল পিপলস মোজাহেদিন অর্গানাইজেশন অফ ইরানের (পিএমওআই/এমইকে) সূত্রে জানা গেছে,এখনো পর্যন্ত ৭৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৩০,০০০ এরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । যদিও পিএমও/এমইকে দ্বারা ৬৭৪ জন নিহত বিক্ষোভকারীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব ইরানের গালিকেশ শহরে বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার রাস্তায় নেমে আসে এবং তাদের স্থানীয় বেলুচ সম্প্রদায়ের নেতাদের সমর্থনে এবং মোল্লাদের শাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করে ।
এদিকে সরকারী নিরাপত্তা বাহিনী শহরের গ্র্যান্ড মক্কি মসজিদে জোরপূর্বক প্রবেশ করতে এবং মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে মসজিদের স্থানীয় লোকজন এবং কর্মীদের উপর আক্রমণ করে বলে খবর পাওয়া গেছে । মসজিদের কর্মীদের মারধর ও গ্রেফতার করা হয়েছে । যদিও স্থানীয় লোকজন নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রতিহত করে ।
ইরানের বিরোধী জোট এনসিআরআই-এর প্রেসিডেন্ট মরিয়ম রাজাভি বেলুচিদের বিক্ষোভের প্রশংসা করেছেন এবং ইরানের অন্যান্য শহরকে মোল্লাদের শাসনের বিরুদ্ধে তাদের সাথে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ।
শুক্রবার জাহেদানে ‘খামেনির মৃত্যু!’ এবং ‘অত্যাচারীর মৃত্যু হোক, সে শাহ হোক বা মোল্লাদের সর্বোচ্চ নেতা হোক !’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে । বৃহস্পতিবার রাতে আরদাবিল শহরের স্থানীয়রা শাসক বিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করে, যার মধ্যে রয়েছে “খামেনির মৃত্যু”, সরকারের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উপর তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিক্ষোভকারীরা । তেহরানের উত্তর আমিরাবাদ এবং নরমাক জেলার স্থানীয়রা বৃহস্পতিবার রাতে “শিশু হত্যাকারী শাসনের মৃত্যু”,”একনায়কের মৃত্যু”,”ফাঁসির রাজ্যে মৃত্যু” প্রভৃতি স্লোগান দেয় ।
প্রসঙ্গত, বছর বাইশের কুর্দি তরুনী মাহসা (ঝিনা) আমিনি মৃত্যুর পর ইরানে বিক্ষোভ শুরু হয়। পশ্চিম ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশের সাক্কেজ শহরের বাসিন্দা ওই তরুনী ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পরিবারের সাথে তেহরানে ভ্রমণ করেছিলেন । কিন্তু হাক্কানি হাইওয়েতে প্রবেশের সময় তাকে শাসকদের দ্বারা গ্রেপ্তার করা হয়েছিল । তারপর তাকে তথাকথিত “গাইডেন্স পেট্রোল” এবং “নৈতিক নিরাপত্তা” এজেন্সিতে স্থানান্তরিত হয় । নৈতিকতা পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে । পরে ১৬ সেপ্টেম্বর তেহরানের একটি হাসপাতালে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় মারা যায় মাহাসা । এই ঘটনাটি বিক্ষোভের সূত্রপাত করে । ইরানের কট্টর মৌলবাদী শাসন ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু আলি খোমেনির পতনের দাবিতে সোচ্চার হয় আমাপন মানুষ ।।