প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৯ জানুয়ারি : ভূয়ো ব্যক্তিকে জমির মালিক সাজিয়ে জমি বিক্রির দলিল করে নিয়ে ভূমি দফতরে রেকর্ড করতে গিয়ে ধরা পড়লো এক জমি মাফিয়া । এই ঘটনা জানাজানি হতেই পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের বাসিন্দা মহলে ব্যপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।খণ্ডঘোষের শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের সালুন গ্রাম নিবাসী প্রতারিত ইন্দ্রজিৎ ঘোষের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ জমি মাফিয়া মনোজকান্তি মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে । পুলিশ জেনেছে, ধৃত ব্যক্তি উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় আগে থাকতেন । সেখান থেকে ২০০৯ সালে তিনি সপরিবার খণ্ডঘোষের কামালপুর গ্রামে চলে এসে বসবাস শুরু করেছেন । জালিয়াতির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ শনিবার ধৃতকে পেশ করে বর্ধমান আদালতে । অপরের জমি হাতিয়ে নেওয়ার চক্রের জাল কতদূর বিস্তৃত রয়েছে এবং চক্রে আরও কারা যুক্ত রয়েছে তা জানতে তদন্তকারী অফিসার এদিন ধৃতকে ৫ দিন পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন আদালতে জানান । বিচারক যদিও ধৃতকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ছেন ।
প্রতারিত ইন্দ্রজিৎ ঘোষ এদিন জানিয়েছেন ,
খণ্ডঘোষের কামালপুর মৌজায় তাঁর ৬০ শতক
চাষ জমি রয়েছে ।ওই জমি তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ বিক্রী করেন নি ।অথচ জাল দলিল তৈরি করে ওই জমি বিক্রী হয়েছে বলে কুখ্যাত জমি মাফিয়া মনোজকান্তি মণ্ডল ব্লকের ভূমি দফতরে নথি দাখিল করেছে । ভূমি দফতর মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জানতে পেরে শুক্রবার রাতে খণ্ডঘোষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ।পুলিশ জমি জালিয়াত মনোজকান্তি মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে । ইন্দ্রজিৎ বাবু এও দাবি করেন ,আগে তাঁর ওই ৬০ শতক সম্পত্তির যাঁরা মালিক আগে যাঁরা ছিলেন তাঁরা প্রায় ৫০-৬০ বছর আগে মারা গিয়েছেন ।তাঁদের জীবিত দেখিয়ে জাল ভোটার কার্ড তৈরি করে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। ইন্দ্রজিৎ বলেন, এমন জালিয়াতি করেই খণ্ডঘোষের প্রায় ১৬-১৭ জন ব্যক্তির সম্পত্তির বিক্রী দলিল করে নিয়েছে ধৃত জালিয়াত ব্যক্তি । ভূয়ো ভোটার কার্ড তৈরি চক্র এই জমি জালিয়াতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে ইন্দ্রজিৎ ঘোষ জানিয়েছেন“ । ইন্দ্রজিৎ বাবু ছাড়াও খণ্ডঘোষের তিলডাঙ্গা এলাকা নিবাসী সুরজ মাহাতো জানিয়েছেন,’তিলডাঙ্গা মৌজায় ২৪০ দাগে তাঁর দাদু দুষ্টু মাহাতোর নামে ১বিঘা সম্পত্তি রয়েছে । সেই সম্পত্তিতে তাঁদের বাড়ি ঘর রয়েছে । ৫৫ বছর ধরে তাঁদের পরিবার সেখানে বসবাস করছে ।দাদুর নামে সেই সম্পত্তির সরকারী দলিল ও পর্চা সব রয়েছে । দিন ১০ আগে তিনি জানতে পারেন তাঁদের সেই সম্পত্তি জনৈক চারুবালা মণ্ডলের নামে রেকর্ড হয়ে গিয়েছে। সুরজ মাহাতো দাবি করেন জাল দলিল তৈরি করে মনোজকান্তি মণ্ডল তাঁদের সম্পত্তি নিজের লোকের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছে’। মনোজকান্তির কঠোর সাজার দাবি করেছেন সুরজ মাহাতো ।
ধরা পড়ার পর মনোজকান্তি মণ্ডল সংবাদ মাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন , বহু বছর আগে মারা যওয়া ব্যক্তির ভোটার কার্ড জোগার করে তাঁকে জীবিত দেখিয়ে বর্ধমান রেজিস্ট্রী অফিস থেকে তিনি জমির বিক্রী দলিল করিয়ে নিয়েছেন।জালিয়াতি করেই একাধীক ব্যক্তির জমির বিক্রী দলিল করেছেন বলেও সংবাদ মাধ্যমের কাছে কবুলও করেন মনোজকান্তি ।এই কাজে তাকে যাঁরা যাঁরা
সাহায্য করেছে তাঁদের নামও তিনি জানান । পুলিশ তাদের বিষয়েও খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছে ।
খণ্ডঘোষ ব্লক বিএলআরও রহিত রঞ্জন ঠাকুর জানিয়েছেন ‘ মনোজকান্তি মণ্ডল নামে ওই ব্যক্তি একটা সম্পত্তি দু’বার দলিল করে রেকর্ড করতে এসেছিল । দ্বিতীয়বার যখন রেকর্ড কতে আসে তখনই তার জালিয়াতি ধরা পড়ে । জালিয়াতি করে অপরের প্রায় ১৬ একরের মত সম্পত্তি মনোজকান্তি হাতিয়ে নেওয়ার কাজ হাসিল করতে চেয়েছিল বলে এখন অবধি জানা গিয়েছে । বর্ধমান রেজিস্ট্রী অফিসে (এডিএসআর ১) কিভাবে মনোজকান্তি জাল লোককে জমি মালিক সাজিয়ে দলিল তৈরি করতো তাঁর তদন্ত হলেই জালিয়াতির পর্দাফাঁস হয়ে যাবে বলে বিএলআরও জানিয়েছেন ।’।