এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৫ অক্টোবর : শনিবার রাতে ভারী বর্ষণে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে উত্তরবঙ্গ ৷ এখনো পর্যন্ত অন্তত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে । তার মধ্যে মিরিকে ৯ জনের,সুখিয়াপোখরিতে ৭ জনের এবং বিজনবাড়িতে একজনের মৃত্যু হয়েছে । ধসের নীচে এখনও অনেকে চাপা পড়ে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে । যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন যে তার কাছে খবর আছে অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে । এদিকে দার্জিলিংয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ সেই সাথে তিনি সর্বোতভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে । প্রধানমন্ত্রী এক্স-এ লিখেছেন, ‘দার্জিলিংয়ে সেতু দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি গভীর সমবেদনা। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন—এই কামনা করি।প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের প্রেক্ষিতে দার্জিলিং ও আশেপাশের এলাকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সমস্ত সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রধানমন্ত্রীর এই পোস্ট ট্যাগ করে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছিলেন,’মাননীয় প্রধানমন্ত্রী; শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়া, নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং কেন্দ্রীয় সহায়তা প্রদান দার্জিলিং-এর এই মর্মান্তিক ঘটনার সময় গভীরভাবে আশ্বস্ত করে। প্রবল বৃষ্টিপাত এবং ভূমিধসের মধ্যে ত্রাণ প্রচেষ্টার প্রতি কেন্দ্রের অঙ্গীকার এখন সময়ের দাবি। আমি রাজ্য সরকারকে NDRF, SDRF, ITBP, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে কার্যকরভাবে সমন্বয় করার জন্য অনুরোধ করছি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে দ্রুত সাহায্য এবং ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হল মিরিক। আমার তথ্য অনুসারে এখন পর্যন্ত ২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা।’ এর আগে তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে আবেদন জানিয়ে লিখেছিলেন, উত্তরবঙ্গে অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে, দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়ংয়ের পাহাড়ি অঞ্চলগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ভূমিধস এবং বন্যার কারণে শিলিগুড়ি, তরাই এবং ডুয়ার্সের সমভূমির সাথে যোগাযোগ এবং পরিবহন যোগাযোগ প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শিলিগুড়ি এবং মিরিকের সংযোগকারী দুধিয়ায় বালাসন নদীর উপর লোহার সেতুটি ভেঙে পড়েছে। এটি এমনই একটি উদাহরণ যা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে। হাজার হাজার বাসিন্দা আটকা পড়েছেন, প্রয়োজনীয় সরবরাহ এবং পরিষেবা না পেয়ে কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছেন। হতাহতের খবরও আসছে, বিস্তারিত এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিবকে অবিলম্বে সম্পদ সংগ্রহ এবং এই অঞ্চলগুলিতে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করছি। এছাড়াও, এই সংকটের আরও তীব্রতা রোধ করার জন্য দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করার জন্য খাদ্য, জল, ওষুধ এবং অস্থায়ী আশ্রয় সহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। উত্তরবঙ্গে আমাদের সহ-নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা সর্বাগ্রে থাকা উচিত।
এদিকে উত্তরবঙ্গের যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তা খুবই ভয়াবহ । মিরিক, দুধিয়া, সুখিয়াপোখরি, নাগরাকাটা, বানারহাট, রামসাই প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপক প্রভাব পড়ে । এছাড়া জলমগ্ন হয়ে গেছে কোচবিহারের দিনহাটা, আলিপুরদুয়ারের বিস্তীর্ণ এলাকা ।বালাসন, তিস্তা, তোর্ষা, জলঢাকা, রায়ডাক, সংকোশ সহ পাহাড়ের নদিগুলিতে হঠাৎ করে জলস্তর প্রচুর বেড়ে গেছে । শালকুমারহাটের শিসামারা নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে নেপালিবস্তি, নতুনপাড়া, জলদাপাড়া বাজারে। হাজার খানেক মানুষ বাসিন্দা জলবন্দি হয়ে গেছে ।অন্যদিকে কামাখ্যাগুড়িতে একাধিক বাড়ি জলমগ্ন হয়ে গেছে । বন্যার জলে ভেসে আসছে বন্যজন্তু । রামসাইয়ে জলঢাকার জলে একটি গন্ডার ভেসে আসতে দেখা গেছে । ফলে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে । প্রবল বৃষ্টিতে দুধিয়ার বালাসন নদীর উপর আয়রন ব্রীজের একাংশ ভেঙ্গে পড়েছে । বন্ধ হয়ে গেছে দার্জিলিং-মিরিক সড়ক যোগাযোগ ।রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ জলের তোড়ে হলং নদীর উপরে থাকা কাঠের সেতুটির প্রায় ৩০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ে। এই ঘটনায় আটকে পড়েছেন জলদাপাড়া টুরিস্ট লজে থাকা প্রায় শতাধিক পর্যটক। কারণ এই হলং নদীর উপরে থাকা কাঠের সেতুটিই হল জলদাপাড়া টুরিস্ট লজে যাওয়ার একমাত্র পথ । তাই সেতু ভেঙে পড়ায় তাদের ফেরার রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে । তারই মাঝে জলবন্দী মানুষদের উদ্ধারে নেমে পড়েছে সিভিল ডিফেন্স । আগামীকাল উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাবেন বলে জানিয়েছেন ।।