এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম,০১ অক্টোবর : আজ মহানবমীর ভোর রাতে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার রাজুর গ্রামের বড়াল পরিবারের পারিবারিক প্রায় পাঁচ শত বছরের মন্দিরে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে । বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মন্দিরের দুটি গেটের অন্তত ৩টি তালা ভেঙে দেবী দুর্গাপ্রতিমার শরীর থেকে কয়েক লক্ষ টাকার সোনারুপোর গহনা লুটপাট চালানো হয় । পরিবারের দাবি যে জেনারেটর অপারেটরকে চুরির ঘটনার সময়ে কিডন্যাপ করা হয়েছিল এবং ভয় দেখিয়ে তার মুখ বন্ধ রেখে দেওয়া হয়েছে । এই দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় খোদ কেতুগ্রাম থানার পুলিশের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন পরিবারের বর্ষীয়ান সদস্য তপন বটব্যাল ।
তিনি আরও একটা চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন । তপনবাবু অভিযোগ করেছেন, ‘আমরা চুরির বিষয়টি জানতে পারার পর তখনো কেতুগ্রাম থানায় কিছু জানাইনি । কিন্তু কেতুগ্রাম থানার আইসি আজ বুধবার সকাল প্রায় সাড়ে ৬ টা নাগাদ হঠাৎ আমাদের মন্দিরে চলে আসেন । এতে আমরা অবাক হয়ে যাই । তখন আমি আইসির কাছে জানতে চাই যে কিভাবে তিনি চুরির খবর পেলেন ? কিন্তু তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি । তখন আমি কেতুগ্রাম থানার আইসি পার্থসারথি মুখার্জির মুখের উপর বলে দিই যে পুলিশের দাবি মত টাকা না দেওয়ায় আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি ৷’ তার অভিযোগ যে দুর্গাপূজার আগে সিসিটিভি লাগানোর জন্য নগদ ৩,৫০০ টাকা ও সরকারি প্রচারের হোর্ডিং খরচ বাবদ আরও ৩,২০০ টাকা দাবি করেছিল কেতুগ্রাম থানার পুলিশ । কিন্তু তারা ওই টাকা দিতে অস্বীকার করেন। যেকারণে খোদ পুলিশই তাদের পারিবারিক দেবী প্রতিমার গহনা চুরি করিয়েছে বলে অভিযোগ তার ।
যদিও এই অভিযোগ প্রসঙ্গে কেতুগ্রাম থানার আইসি পার্থসারথি মুখার্জির কোনো মতামত পাওয়া যায়নি । তবে কাটোয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কাশীনাথ মিস্ত্রি বলেন,’সর্বজনীন পুজোকমিটিগুলিকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কথা বলা হয়েছিল।ওটা পারিবারিক পুজো। যেহেতু ওনাদের পুজোর সময় প্রতিমাকে দামি অলঙ্কার পড়ানো হয় তাই তাদের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সিসিটিভি লাগানোর জন্য। কিন্তু ওনারা রাজি হননি।’
জানা গেছে,কেতুগ্রামের রাজুর গ্রামের বড়াল বাড়ির দুর্গাপূজো প্রায় ৪৮৩ বছরের প্রাচীন । দৌহিত্র বংশ বটব্যাল ও মুখার্জি পরিবার মিলে বাৎসরিক পুজো পরিচালনা করেন । পরিবারের সদস্যরা প্রায় সকলেই বাইরে থাকেন । তবে শারদোৎসবের সময় সকলেই গ্রামে এসে জড়ো হন । পরিবার সূত্রে জানা গেছ, দেবীর প্রায় ৬ ভরি সোনার গহনা ছিল । এছাড়া পায়ে পরানোর জন্য রুপোর দামি মল ছিল । পুজোর ক’টা দিন সেই সমস্ত গহনা দেবীকে পরানো হত । নিরঞ্জনের আগে পিতলের বাক্সে ভরে গহনাগুলি কলকাতায় বসবাসকারী এক শরিকের কাছে রেখে দেওয়া হয়৷ এবারেও যথারীতি দেবীকে সমস্ত গহনার সাজে সাজানো হয়েছিল ।
কলকাতার বাসিন্দা তপন বটব্যাল জানান,মহালয়ার পর থেকেই সরকারি প্রচারের হোর্ডিং খরচ বাবদ ৩,২০০ টাকা এবং সিসিটিভি লাগানোর জন্য নগদ ৩,৫০০ টাকা দেওয়ার জন্য তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছিল কেতুগ্রাম থানার পুলিশ । আর সেই টাকা আদায় করতে লাগানো হয় থানার দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকে । কিন্তু তারা টাকা দিতে অস্বীকার করেন । এজন্য ওই দুই সিভিক ভলান্টিয়ার সাফ জানিয়ে দেয় যে পুজোর সময় তাদের মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেতুগ্রাম থানার পুলিশ নিতে পারবে না।
তিনি বলেন,’ষষ্ঠীর দিন রাত্রে মিস্টার মণ্ডল নামে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ অফিসার আমাদের মন্দিরে আসে । সেই সময় মন্দিরের পাহাড়ায় ছিল আমাদের পরিবারের এক যুবক । ওই পুলিশ কর্মী তাকে দিয়ে কোনো কিছুতে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় । অষ্টমীর দিন রাত প্রায় ১:১০ নাগাদ দুই পুলিশ কর্মী টহলদারির নাম করে বাইকে চড়ে ফের আমাদের মন্দিরে আসে । তারা চলে যাওয়ার পরেই প্রায় ১:৩০ নাগাদ বিদ্যুৎ অফ হয়ে যায় । জেনারেটর থাকলেও অপারেটরকে বারবার ফোন করে পাওয়া যায়নি । শেষ পর্যন্ত ২:৫০ নাগাদ সে ফোন ধরে । এদিকে ভোর ৩টের সময় বিদ্যুৎ চলে আসে । আর ওই সময়টুকুর মধ্যেই দেবীর সমস্ত গহনা চুরির ঘটনা ঘটেছে । কিন্তু জেনারেটর অপারেটর কোথায় গিয়েছিল তা বারবার জিজ্ঞেস করা হলেও সে কোনো সদুত্তর দিচ্ছে না ।’
তিনি আরও বলেছেন,আমাদের পারিবারিক মন্দিরের ঠিক পিছনেই রয়েছে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ট্রান্সফর্মারটি । জানতে পারি যে চুরির সময় ট্রান্সফর্মারের জাম্পারটি নামানো ছিল । পুরো ঘটনাটি পরিকল্পনামাফিকই ঘটানো হয়েছে । আর পুলিশের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এতবড় দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয় ।’
জানা গেছে,আজ খুব সকালের দিকে দেবীর পুজোর ফুল দিতে আসেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মালি । তপনবাবুরা তার হাতে মন্দিরের চাবিটি তুলে দেন । এরপর তিনি মন্দিরে গিয়ে দেখেন দুটো গ্রিলের গেটে দুটো তালা এবং কোলাপ্সেবেল গেটের একটি তালা গায়েব হয়ে গেছে । এই দেখে তিনি ছুটে গিয়ে বাড়ির লোকজনদের খবর দেন । এরপর পরিবারের লোকজন এসে মন্দিরে ঢুকে দেখেন দেবীর অঙ্গ থেকে সোনার টিকলি, মুকুট, হাতের দু’জোড়া বালা ও রুপোর ঝুমুর উধাও হয়ে গেছে । শুধুমাত্র সোনার গহনাই ছিল ৬ ভরির মত এবং কয়েক হাজার টাকার ঝুমুর দেবীর পায়ে ছিল বলে জানান তপনবাবু । তিনি আরও জানান,পিতলের দানবাক্সের তালাও কুড়ুল দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছিল । কিন্তু ভাঙতে পারেনি । আরও দাবি সামগ্রী খুঁজতে মন্দিরের সমস্ত জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে ।
জানা গেছে,কেতুগ্রাম থানার রাজুর গ্রামের বড়াল পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী পুজোর দিনে দেবীর শরীর স্পর্শ করা নিষেধ । কিন্তু চোরের দল দেবীকে স্পর্শ করায় আজ ফের নতুন করে ঘট এনে পুজো শুরু করা হয় । এদিকে এই দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় খোদ কেতুগ্রাম থানার পুলিশের দিকেই আঙুল ওঠায় থানায় এফআইআর করার কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানান তপন বটব্যাল । বরঞ্চ তিনি জানিয়েছেন যে এই বিষয়ে তারা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে অভিযোগ জানাবেন।।