প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৬ জুন : নির্বাচনি আচরণবিধি জারি থাকলেও যেন নেই । দাবানলের মতো রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ভোট পরবর্তী হিংসা।এবার সেই হিংসার কবলো পড়লো বর্ধমানে বিজেপির জেলা অফিস। বৃহস্পতিবার বেলায় বাইকে চেপে এসে তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃতীরা ইট ও লাঠি নিয়ে বিজেপির জেলা অফিসে হামলা চালায় বলে অভিযোগ বিজেপি নেতৃত্বের।অশান্তি এড়াতে বিজেপির পার্টি অফিসের সামনে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। একই সময়ে আবার রায়নায় তৃণমূল কংগ্রেসের আভ্যন্তরিন দ্বন্দ্বও চরমে উঠেছে।চলছে এক নেতাকে আর এক নেতার হুঁশিয়ারি দেওয়া । এই হুঁশিয়ারি যে কোন সময়ে সংঘর্ষের রুপ নিতে পারে, এমন আশঙ্কায় শঙ্কিত রায়নার বাসিন্দারা ।
,
“ভোট হিংসা”- এই কথাটার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের আট থেকে আশি সকলেই বিশেষভাবে পরিচিত । তাই পঞ্চায়েত কিংবা বিধানসভা বা লোকসভা আসলেই ’আতঙ্ক’ পিছু তাড়া করে বেড়ায় বঙ্গের বাসিন্দাদের । ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর’ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় সারা দেশে ১৬ জন রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যু হয় । তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যু হয় ৭ জনের। আহত হন বারোশোর বেশী রাজনৈতিক কর্মী।আর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় বঙ্গে ৬৯৩ টি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছিল।নিহত হয়েছিলেন ১১ জন।ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর’ তথ্য অনুযায়ী,১৯ শের লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পরেও হিংহা মেটেন নি।১৯ শে রাজনৈতিক খুনের তালিকায় শীর্ষে ছিল বাংলা।রাজনৈতিক হিংসার একই প্রতিচ্ছবি বঙ্গের ২০২১ শের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৩ শের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ফুটে ওঠে।এবার ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের পরেও পূর্ব বর্ধমান সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মাথাচাড়া দিয়েছে ভোট পরবর্তী হিংসা।
বর্ধমানের বিজেপি নেতা সুমিত দত্ত এদিন বলেন, ’তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃতিরা আমাদের পার্টি অফিসের সামনে এসে হামলা করে। জেলা সভাপতির গাড়িতেও হামলা চালানো হয়।নির্বাচনের ফল ঘোষণা হওয়ার পর জেলার বিভিন্ন জায়গার দলীয় কর্মী সমর্থকরা পার্টি অফিসে আশ্রয় নিয়েছে।এদিন হামলার সময় আমাদের দলীয় কর্মীদের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।বাইরে থেকে দলীয় কার্যালয় লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়।আমাদের কর্মীরা প্রতিরোধ করলে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা পালিয়ে যায়।’ বিজেপির অপর নেতা দেবজ্যোতি সিংহ রায় বলেন,’বর্ধমান উত্তর বিধানসভা এলাকায় আজ তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের বাইক মিছিল হয়। সেই মিছিল শেষে আমাদের পার্টি অফিসে হামলা করে ।’
যদিও বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলেন,’জেলায় বিজেপি সাফ হয়ে গেছে। তাই ওদের তৃণমূল কেন আক্রমণ করবে? বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে গণ্ডগোল হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন ঘটনা খতিয়ে দেখছে ।’ এর পাল্টা বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন,’জেলার বিভিন্ন জায়গার বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা করা হচ্ছে। ভাতারে পানীয় জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে।’ তিনি বলেন,প্রশাসনের উপর ভরসা আছে। দুস্কৃতীদের গ্রেফতার করার আবেদন আমরা পুলিশকে জানিয়েছি।
এদিকে জেলা বিজেপি পার্টি অফিসে তৃণমূলের হামলা চালানোর অভিযোগ ঘিরে যখন উত্তাল বর্ধমান তখন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে উঠছে রায়নায় । রায়নার বিধায়ক শম্পা ধরা ও রায়না-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বামদাস মণ্ডল গোষ্ঠীর বিবাদ ঘিরে এখন তপ্ত রায়না । রীতিমত সাংবাদিক বৈঠক করে এখন চলছে একে অপরকে হুঁশিয়ারি দেওয়া। এদিন বামদাস মণ্ডল হুঁশিয়ারি ছুড়ে দেন রায়নার বিধায়ক শম্পা ধারা গোষ্ঠীর তিন তৃণমূল নেতা শেখ ইসমাইল ওরফে শান্ত ,দীপ দত্ত এবং সোমনাথ সোম ওরফে বাপ্পার উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন,’আমাকে মার্ডার করার জন্যে শান্ত এক মাফিয়াকে টাকা দিয়েছিল । তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। এছাড়াও এরা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রায়নায় তৃণমূলকে হারানোর সমস্ত রকম পরিকল্পনা চালিয়ে গেছে। এঁদের আমি ছাড়বো না ।’ পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে শেখ শান্ত বলেন,’রায়নায় লুটেপুটে খাচ্ছে বামদাস মণ্ডল । শম্পা ধারার সঙ্গে যাঁরা রাজনীতি করে তাঁদের কারুর গায়ে এক ইঞ্চি কাঁটার আঁচর লাগলে ওর (বামদাস) শরীরে দশ ইঞ্চি দাগ করো দেব।’।