এইদিন বিনোদন ডেস্ক,০২ জুলাই : বাংলাদেশের জনপ্রিয় গানের দল “জলের গান”-এর ভোকাল রাহুল আনন্দ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন । গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের নামে ইসলামি জিহাদের সময় তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় । পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায় গোটা বাড়ি ৷ বহুমূল্যবান তার সব বাদ্যযন্ত্র পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়,যেগুলি তিনি তিল তিল করে সংগ্রহ করেছিলেন । তার কদিন পরই সপরিবারে দেশান্তরি হন এই জনপ্রিয় শিল্পী। গত ৩০ জুন তার জন্মদিন ছিল । কিন্তু দেশান্তরে কেমন আছেন শিল্পী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র ছিলেন রাহুল আনন্দ। আঁকতেন ছবি। তবে চিত্রশিল্পী না হয়ে তিনি হয়েছেন কণ্ঠশিল্পী। ছাত্রজীবন থেকে নিজ হাতে তিনি তৈরি করেন নানান রকম বাদ্যযন্ত্র । এ ছাড়া থিয়েটারেও অভিনয় করেছেন তিনি। থিয়েটার গ্রুপ প্রাচ্যনাটের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এই শিল্পী।
জানা গেছে যে বর্তমানে সপরিবারে ফ্রান্সে আশ্রয় নিয়েছেন শিল্পী রাহুল আনন্দ। বাড়ি ও প্রিয় সুরবাদ্যযন্ত্রগুলো হারানোর বিভীষিকাময় স্মৃতি এখনো দগদগে তার হৃদয়ে। ফ্রান্সে অবস্থানরত বাঙালি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর একটি সূত্র জানিয়েছে, সেখানে আপাতত নিরাপদে আছেন রাহুল আনন্দ। স্ত্রী ঊর্মিলা শুক্লা ও কিশোর সন্তান তোতাকে নিয়ে আনন্দে দিনযাপনের চেষ্টা করছেন। তবে দেশ ছাড়ার শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি এই শিল্পী।
কথিত ছাত্র-জনতার নামে বাংলাদেশের জিহাদি অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে ঘটনার পরপরই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে জিহাদিরা । তখনই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় রাহুল আনন্দের বাড়িতেও, যেটিকে শিল্পী রাহুল ডাকতেন ‘ভাঙ্গাবাড়ি’ নামে। সেদিন পরিবার নিয়ে এক কাপড়ে ভাঙ্গাবাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে। তারপর থেকে আর কোথাও দেখা যায়নি তাকে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কনসার্টে অংশ নিয়েছে তার দল জলের গান। সেসব অনুষ্ঠানে ছিলেন না রাহুল।
ভাঙ্গাবাড়িতে হয়েছে বহু সাংস্কৃতিক আড্ডা, ‘জলের গান’-এর বহু গান ওই বাড়িতে বসেই বেঁধেছেন রাহুল । বাড়িটিকে স্টুডিও হিসেবেও ব্যবহার করতেন তারা। সেখানে রেকর্ডিং, মিক্সিং, এডিটিং সব কাজই করেছে জলের গান। ঢাকায় এসে বাড়িটিতে ঘুরতে গিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।
১৯৭৬ সালের ৩০ জুন হবিগঞ্জে মামারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রাহুল আনন্দ। তার স্কুলজীবন কেটেছে নারায়ণগঞ্জে, কলেজজীবন সিলেটে। সেখানেই প্রথম থিয়েটারে যুক্ত হন তিনি। এরপর ঢাকায় এসে ভর্তি হন চারুকলায়। আস্তে আস্তে গানে ঝুঁকতে থাকেন তিনি। ২০০৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় গানের দল ‘জলের গান’-এর ।।

