সূচনা গাঙ্গুলি,দক্ষিণেশ্বর,০৭ জুন : গায়ে আধুনিকতার নামাবলী ও মুখে আধুনিক বুলির খই ফুটলেও আজও যে আমরা সত্যিকারের সমাজ সচেতন হতে পারিনি তার প্রমাণ প্রতি মুহূর্তে রেখে যাচ্ছি। ব্যক্তিগত বিলাসিতার দিকে নজর দিলেও সমাজের উন্নতির দিকে লক্ষ্য না রেখে আমরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি। আমাদের উদাসীনতার জন্য বিশ্ব পরিবেশ দিবস এবছর শুধু সুবর্ণ জয়ন্তী বছরে পদার্পণ করলনা উল্টে তার সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শাখাপ্রশাখা বৃদ্ধি করল। নবীন প্রজন্মকে সচেতন করার জন্য পথে নামতে হলো প্রবীণদের। বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে সামনে রেখে এরকমই একটি দৃশ্য দেখা গেল দক্ষিণেশ্বরের আড়িয়াদহে।
এলাকাবাসীদের বিভিন্ন ধরণের দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘আড়িয়াদহ দক্ষিণেশ্বর নাগরিক সমিতি’-র উদ্যোগে আয়োজিত হয় এক পদযাত্রা। স্থানীয় ‘বাটার বাটারফ্লাই স্কুল’ থেকে শুরু হয়ে এই পদযাত্রা কালাচাঁদ স্কুলমোড়, আদ্যাপিঠ মন্দির সহ এলাকার বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ৩৪ নং বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়। চলার পথে এলাকাবাসীদের বৃক্ষরোপণ,পানীয় জলের অপচয় রোধ, যত্রতত্র আবর্জনা না ফেলা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে সচেতন করা হয়।
শতাধিক মানুষের পদযাত্রার একেবারে সামনে ছিলেন এলাকার জনপ্রিয় ৮৪ বছরের ‘যুবক’ মাস্টারমশাই নিতাইমোহন চ্যাটার্জ্জী। হ্যামলিনের বাঁশির মত তাকে অনুসরণ করেছে সমিতির সদস্য সহ বহু সাধারণ মানুষ। ক্লান্তিহীন মাস্টারমশাইয়ের নেতৃত্বে পদযাত্রা শুরুর স্থানে ফিরে আসে এবং দক্ষিণেশ্বর রামকৃষ্ণ মঠের মহারাজের উপস্থিতিতে মঠ চত্বরে বেশ কয়েকটি বৃক্ষরোপণ করা হয়।
নিতাইবাবু ছাড়াও সমিতির সমিতির পক্ষ থেকে সুশান্ত কুমার দাস, রেখা মণ্ডল, কল্যাণ চ্যাটার্জ্জী, সঞ্জয় চ্যাটার্জ্জী, অভিজিৎ চৌধুরী প্রমুখ পদযাত্রায় পা মেলান।
প্রসঙ্গত ‘আড়িয়াদহ দক্ষিণেশ্বর নাগরিক সমিতি’ সীমিত সামর্থ্য নিয়ে গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বার্থে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির, চক্ষু পরীক্ষা শিবির, দুস্থদের কম্বলদান সহ বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক কাজ করে চলেছে।
নিতাইবাবু বললেন,’যেভাবে দূষণ বাড়ছে তাতে সচেতন না হলে আগামী দিনে এই বৃদ্ধি মাত্রাছাড়া হয়ে যাবে। সঙ্কটে পড়ে যাবে মানুষ সহ অন্যান্য জীবদের অস্তিত্ব। বাঁচতে হলে গাছ কাটা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। একইসঙ্গে এসির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তিনি আরও বললেন- পানীয় জলের অপচয় রোধ করতে না পারলে আগামী দিনে চরম বিপদে পড়তে হবে। সময় কিন্তু ঘনিয়ে আসছে। বিপদের ঘণ্টা বাজতে শুরু করে দিয়েছে। তবে সেইভাবে যুব সমাজ এগিয়ে না আসার জন্য তার কণ্ঠ থেকে আক্ষেপ ঝরে পড়ে।’।