এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৭ জুলাই : লোকসভার ভোটে সাফল্যের পর চার বিধানসভা উপনির্বাচনেও বাজিমাত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস । বিগত বিধানসভায় বিজেপির জেতা ৩ টি আসন পর্যন্ত ছিনিয়ে নিয়েছে তারা । এদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একটা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে । তাঁর অভিযোগ,রায়গঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে বুথে বুথে মুসলিম পোলিং অফিসার নিয়োগ করে দেদার ছাপ্পা ভোট দিয়ে জেতানো হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে । ১৮০ জন পোলিং অফিসারের নামের তালিকাও প্রকাশ করেছেন তিনি । সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উত্তেজিত শুভেন্দুর প্রশ্ন,’এটা কি বাংলাদেশে ভোট হচ্ছে ?’
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে চার পাতার ওই তালিকা প্রকাশ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তাতে পোলিং অফিসারদের নাম, পোলিং স্টেশনের নাম এবং তারা কোন সরকারি দপ্তরে কর্মরত তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে । শুভেন্দু অধিকারী টুইট করেছেন, ‘রায়গঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের জন্য ভোটদানের দায়িত্ব অর্পণ করা পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের নাম নিচে দেওয়া হল। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের “নিষ্পাপ” বোঝার কারণে, তথাকথিত “ভোটারদের” ইপিআইসি (নির্বাচনী ফটো আইডেন্টিটি কার্ড) এবং অন্যান্য আইডি কার্ড যাচাই ছাড়াই তাদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, বরং হাতে লেখা ভোটার স্লিপগুলি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা হয়েছিল। রায়গঞ্জে রেকর্ড ব্যবধানে জয়লাভ করার জন্য টিএমসি প্রার্থীকে অবশ্যই এই পোলিং অফিসারদের অবদান স্বীকার করতে হবে, যা বিজেপির ঘাঁটি বলে পরিচিত ।’
এরপর তিনি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জের ফলাফল প্রকাশ করে লিখেছেন, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন:-বিজেপি – ৭৯,৭৭৫, তৃণমূল -৫৯,০২৭ । ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন (রায়গঞ্জ বিধানসভা বিভাগ):- বিজেপি -৯৩,৪০২ এবং তৃণমূল -৪৬,৬৬৩ ।
ভোট দিতে না পারা কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার রাজভবনে গিয়েছিলে শুভেন্দু অধিকারী । পরে রাজভবনের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন,’চারটে বিধানসভা উপ নির্বাচনে নতুন ট্রেন্ড, হিন্দুদের ভোট দিতে দেব না । রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা, মানিকতলার কোন হিন্দু ভোটারকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি । এটা অ্যালার্মিং । যারা ভোট দিতে পারেননি এমন ১০০ জনের অধিক ভোটারকে নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু পুলিশবাবুরা সকলকে রাজভবনে ঢোকার অনুমতি দেয়নি । এই বিষয়টা নিয়ে আমরা কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ দায়ের করব ।’
তিনি বলেন,’আমরা মাননীয় রাজ্যপালকে বলেছি হিন্দু হলে ভোট দিতে পারবে না, আমরা কোন রাজ্যে বসবাস করছি ? এটা খুব এলার্মিং এবং এর খুব বড় ইস্যু । আমি মহামান্য রাজ্যপালের কাছে তিনটে জিনিস চেয়েছি । আমি বলেছি, ডায়মন্ড হারবারের ফলতা, ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং, মিনাখা, বাদুড়িয়া হারোয়া, আর চারটি উপ নির্বাচনের যে কোন হিন্দু গ্রামের বা কোন পুরো এলাকার যেকোন একটা ওয়ার্ডে গিয়ে আমাদের এই অভিযোগের সত্যতা টা আপনি দেখে আসুন । দশ তারিখে ভোট দেওয়ার পর আঙুলের কালী তো এখন উঠে যাবে না, আমি ২৫ তারিখে ভোট দেওয়ার পর আমার কালি এখনো আছে ।দ্বিতীয়তঃ,এই মুখ্যমন্ত্রীর এত ঔদ্ধত্য যে কোন প্রশ্নের উত্তর পর্যন্ত দেয় না৷ আমি একটা আরটিআই করেছি, উত্তর পাওয়ার পর আমি আইনত ব্যবস্থা নেব । আমি রাজ্যপাল মহোদয়কে বলেছি,আজ আপনার কাছে যারা এসেছে তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি দেখা করার ব্যবস্থা আপনাকে করে দিতে হবে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘মমতা আর তার চৌদ্দগুষ্টি আমাদের ভোটদানের অধিকার দেয়নি ৷ আমাদের ভোটদানের অধিকার দিয়েছেন বাবা সাহেব আম্বেদকরের রচিত সংবিধান । আমরা রাষ্ট্রপতি মহোদয় কে বলতে চাই আপনি দেখুন পশ্চিমবঙ্গে কি চলছে । এই প্র্যাকটিস যদি বন্ধ না করেন সব নির্বাচনে একই জিনিস করবে । ভারতবর্ষের কোথায় ইভিএম এর উপরে শুধু চোরেদের প্রতীক ঘাসফুল ছাড়া বাকি প্রতীকের ওপরে সেলোটেপ লাগিয়ে দেওয়া হয় কোথায় ? কোন রাজ্যে এমন হয় ?’
তিনি বলেন,’পাঁচজন ভোট দিতে পারেনি এমন ভোটার কে নিয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে যাব, যদি তারা সময় দেয় । আমি ইসিআইকে বলতে চাই নর্মস বদলে দেন, আপনার ওয়েব কাস্টিং এর এক্সেস সব প্রার্থীদের দিতে হবে । কাউন্টিং থেকে লাইভ করতে হবে । সিএপিএফকে এপিক কার্ড দেখার অধিকার দিতে হবে । এই চারটি উপনির্বাচনে কোথাও এপিক কার্ডে ভোট হয়নি, সব শ্লিপে ভোট হয়েছে । আনসার ভোট করেছে রায়গঞ্জে । চাপরা আর চাকদার গুন্ডারা ভোট করেছে রানাঘাট দক্ষিনে৷ মানিকতলা থেকে শচীন, রাজু নস্কররা বেলেঘাটা থেকে ভোট দিয়েছেন । বিজেপির একটা জেনুইন ভোটারকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি । ডেমি এজেন্টের নামে আটটা করে তৃণমূল এজেন্ট বসাচ্ছে । ওই আটজন মিলে গুন্ডামি করছে । ডালখোলা, ইটাহার, চাকুলিয়া থেকে ৩৭১ জনকে নিয়ে এসে রায়গঞ্জে ভোট করিয়েছে । এরা কারা ?’ শুভেন্দু অধিকারী উত্তেজিত হয়ে বলেন,’এটা কি বাংলাদেশের ভোট ? এটা কি বাংলাদেশের ভোট হচ্ছে নেত্রকোনাতে ? এটা কি গোপালগঞ্জে ভোট হচ্ছে ? আমি ছাড়বো না । ডু অর ডাই । সেভ ডেমোক্রেসি ।’।