এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৪ জুন : দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার মেটিয়াবুরুজ বিধানসভার রবীন্দ্রনগর থানার বিতর্কিত আইসি মুকুল মিঁয়াকে বদলি করা হয়েছে ৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাকে গত বুধবার ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হিংসার “মূলাধার” বলে অবিহিত করে মুকুল মিঁয়াকে গ্রেপ্তারের জন্য দাবি জানালেন । তিনি বলেন,’পুলিশ তৃণমূল আর জিহাদী এক হয়ে গেছে৷ আমি মুকুল মিঁয়ার গ্রেপ্তার গ্রেফতার চাই৷ ঠ্যালায় পড়ে বদলি করেছে৷ এই তো আসল কারিগর । এই তো আসল মূলাধার৷ ওই রিপোর্টিং অথরিটি এসডিপিও বা এসপি ছিল না । ওই রিপোর্টিং অথরিটি ছিল ভাইপোর পিএ । মুকুল মিঁয়াকে সরাসরি পরিচালিত করা হত ক্যামাক স্ট্রিটের ভাইপোর অফিস থেকে । এটাই তো অরিজিনাল ডাইভার মডেল । এই মডেলেই তো ৭ লক্ষ ১৫ হাজার ভোট লুট করে জেতা । আমাদের প্রার্থী হাইকোর্টে লড়ছে, ওখানে ভাইপোর সঙ্গে দেখা হবে।’
আজ শনিবার মেটিয়াবুরুজ বিধানসভার রবীন্দ্রনগর থানার মহেশতলা পুরসভার বীন্দ্রনগর এলাকায় আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের দক্ষিণ কলকাতায় দলীয় কার্যালয়ে ডেকে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন শুভেন্দু অধিকারী । পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি বলেন, ‘আজ মোট ২৬ জন ক্ষতিগ্রস্তকে আমরা ডেকেছিলাম । তার মধ্যে ২৩ জন আমাদের কাছে এসেছে । এর মধ্যে মাথায় আঘাত রয়েছে, জানলার কাঁচ ভাঙা, সিসিটিভি ভাঙা, দোকানে লুট,গ্যাস লুট এবং গৃহস্থালি জিনিসপত্র ভাঙচুরের ঘটনা । কিভাবে মোট ২৬ জন আহত হয়েছে, লুটপাটের শিকার হয়েছে অথবা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় । আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে পুলিশের ধমক এবং জিহাদী বাহিনীর চমকানির পরেও ২৩ জন আজকে বিজেপির কার্যালয়ে আমার হাত থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে গেছেন ।’ তিনি অভিযোগ করেন,ঘটনার তিন দিন পরেও পুরসভা বা রাজ্য সরকারের তরফে আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি ।
“ইহ্যাঁ ভি এক মিনি পাকিস্তান হ্যায়” : ফিরহাদ হাকিম
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘এখানে এত ভয়ের পরিবেশ আছে যে আক্রান্তদের ছবি দেখাতে গিয়ে তো আমাদের ভাবতে হচ্ছে৷ মেটিয়াবুরুজ এলাকায় মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হিন্দু রয়েছে । রবীন্দ্র নগর এলাকায় যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে সেখানে এত বেশি মুসলিম জনবসতি রয়েছে যাতে তাদের ছবি এবং নাম প্রকাশ করলে তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে ।’ তিনি বলেন,’রবীন্দ্র নগরে এমন ভয়ের পরিবেশ যে এখানে একজন আসা এক আক্রান্তকে একটি ফোনে ধমক খেয়ে এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন । তার মানে বুঝতে পারছেন ফিরহাদ হাকিম যে কথা বলেছিল, কিছুদিন আগে ডন পত্রিকার সাংবাদিকের সামনে, “ইহ্যাঁ ভি এক মিনি পাকিস্তান হ্যায়”, এটা প্রমাণিত হচ্ছে । এখানে হিন্দু জনসংখ্যা কম সেখানে রাজ্য পুলিশ এবং মমতা ব্যানার্জির প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ।’
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ,’একদিকে ২৬৩ ধারা করে আটকে দেওয়া হচ্ছে জনপ্রতিনিধি এবং বিরোধী দলের লোকদের এবং রিলিফের কাজ করতে চাওয়া সামাজিক এবং নানা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে । আর অন্যদিকে ওখানে ত্রাসের পরিবেশ করে রাখা হয়েছে । একজন আক্রান্ত যিনি আমার হাত থেকে ক্ষতিপূরণ নিলেন তিনি আমাকে বললেন, আজকে যাকে বদলি করা হয়েছে,সেই মুকুল মিঁয়া মাথায় অশোক স্তম্ভ আর বুকে ঘাসফুলের ব্যাচ, তিনি ফোন করে ক্ষতিপূরণের তালিকা চেয়েছিলেন । আমি আমার এই গরীব হিন্দু ভাই-বোন এদের, যারা আর্থিকভাবে দরিদ্র কিন্তু মন থেকে ধনী, তাদেরকে হ্যাটস অফ দেব । তারা বলে দিয়েছেন যে হরগোবিন্দ দাস, চন্দন দাসের মত পশ্চিমবঙ্গের যে পুলিশ আমাদের সুরক্ষা দিতে পারে না এই পুলিশ এবং শাসক দলের কাছ থেকে আমরা ক্ষতিপূরণ নেব না । তাই তালিকা তাদের দেয়নি আমাদের দিয়েছিল । আমরা ২৬ জনকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করে তাদের মধ্যে ২৩ জনের হাতে ক্ষতিপূরণের অর্থ তুলে দিয়েছি ।’ তিনি বলেন,
‘আমরা তাদের বলেছি, আপনাদের যা পরিস্থিতি তাতে আপনাদের আসার দরকার নেই । শুধু আমাদের পাশে থাকুন । আমরাই আপনাদের খোঁজ করব, পাশে থাকবো, লড়াই করব ।’
রবীন্দ্রনগরে প্যারামিলিটারি ফোর্স মোতায়েনের দাবি
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’যেভাবে মহিলাদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে যে “তোরা ভিডিও করে ছেড়েছিস, আমাদের ছবি করে ছেড়েছিস, পুলিশ কতদিন এখানে থাকবে, পুলিশ চলে যাওয়ার পর তোদের দেখে নেব” । আমরা মনে করি ওখানে যেমন ভয় পরিবেশ আছে তাতে ধুলিয়ান এবং সামশেরগঞ্জের মতো ওখানেও প্যারামিলিটারি ফোর্স এর ক্যাম্প করার দরকার আছে বলে আমরা মনে করি । কিন্তু রাজ্য সরকার এটা করবে না । আইন অনুযায়ী কেন্দ্র সরকার সরাসরি মোতায়েন করতে পারে না । আমরা আদালতে গেছি । আদালতে বিচারপতি স্পেশাল বেঞ্চ বলেছিলেন যে আপনারা কেস ফাইল করুন । আমার আশা যে সোম অথবা মঙ্গলবারের মধ্যে ধুলিয়ান এবং সামশেরগঞ্জের মতো এখানেও আদালত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেবে।’
রবীন্দ্রনগরে হিংসায় এনআইএ তদন্ত
বিরোধী দলনেতা বলেন,’আমরা মনে করি, ২০২২ সালে মমিনপুর ইকবালপুরে লক্ষ্মীপুজোর দিন যে ঘটনা ঘটেছিল তাতে আমার আবেদনে তৎকালীন হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এনআইএ দিয়েছিলেন এবং ২৫ জন গ্রেফতার হয়েছিল ৷ আমরা দেখেছি যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রবাদী সংগঠন আরএসএসকে কালিমালিপ্ত করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার রাহুল গোস্বামীকে দিয়ে প্রেস কনফারেন্স করানো হয়েছে । তবে একটা সত্যি কথা সেখানে এসপি বলে দিয়েছেন যে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক নাকি উদ্ধার হয়েছে । সেই বিস্ফোরক রোহিঙ্গারা নিয়ে এসেছে নাকি ভারতে থাকা টুকরে টুকরে গ্যাং, নাকি অন্য কেউ রাখলো এটা প্রমাণ করার জন্য এনআইএ তদন্ত হওয়া উচিত ।’
রবীন্দ্রনগরে যেতে বাধা
শুভেন্দু বলেন,’আমাকে ওখানে যেতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না । আমি পরপর দুটো চিঠি করেছি । শুক্রবার মাননীয় বিচারপতির সুব্রত ভট্টাচার্যের বেঞ্চে বিষয়টি আমার আইনজীবী তুলে ধরেছিলেন ৷ তিনি এর শুনানি সোমবার রেখেছেন । আমি আশা করব আদালতের অনুমতি নিয়ে মোথাবাড়ি, সন্দেশখালি, ধুলিয়ান,সামসেরগঞ্জ প্রভৃতির মত এখানেও আক্রান্ত হিন্দু পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলা এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিতে পারার পাশাপাশি ভাঙচুর হওয়া শিব মন্দির পরিদর্শন করতে পারব ।’
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হলেও আজ বাংলায় চরম দুরাবস্থা
শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ করেন যে আক্রান্ত লোকজনের ছবি বা ভিডিও নিলে তাদের মুখ যেন আবঝা করে দেওয়া হয় । তিনি বলেন, খুব কষ্টের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল । আর আজ এই বাংলায় চরম দুরাবস্থা । এটা দেখে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে । আবারও বলি যে মেটিয়াবুরুজের যে জনবিন্যাস আছে তার মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টিকে যারা ভোট দেয় তাদের সংখ্যা কুড়ি থেকে ২৫ শতাংশ । আর ওদেরকে যারা ভোট দেয় তাদের সংখ্যা ৭০% এর বেশি । তাই খুব পরিষ্কার যে ভোটের জন্য আমরা এই লড়াই লড়ছি না । আমরা হিন্দুদেরকে সুরক্ষা এবং তাদের বাঁচানোর জন্য লড়াই করছি । পরিশেষে বাংলার হিন্দুদেরকে বলবো “হিন্দু যদি বাঁচতে চাও বিভেদ ভুলে এক হও”।
তিনি এও আবেদন জানান যে রবীন্দ্রনগরে আক্রান্ত হিন্দুদের পেটিএম নম্বর প্রকাশ করা হবে তাতে হিন্দুরা যেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন । ধুলিয়ান এবং সামশেরগঞ্জের ৭৪ জন আক্রান্তকে এভাবে পেটিএম এর নাম্বারের মাধ্যমে গোটা বিশ্বজুড়ে হিন্দুরা ৩৫ লক্ষ টাকার বেশি দিয়েছিল বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘আমরা এজন্য হিন্দুদের কাছে কৃতজ্ঞ৷ সঙ্ঘবদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধ হিন্দু সমাজই একমাত্র আমাদেরকে রক্ষা করতে পারবে আর এই অপশাসন ও অত্যাচার থেকে বাংলা মানুষকে রক্ষা করতে পারে ।’।

