প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ নভেম্বর : নদ নদী থেকে বালি চুরি হওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরেই আ্যাকশনে নেমে পড়েছে পুলিশ। আর পুলিশ অ্যাকশনে নামতেই এক রাতে ধরা পড়লো বালির অবৈধ কারবারে জড়িত ৯ জন। মেশিনের সাহায্যে দামোদর থেকে অবৈধভাবে বালি তুলে লরিতে করে পাচারের অভিযোগে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পুলিশ শনিবার গভীর রাতে ওই ৯ জনকে পাকড়াও করেছে । পুলিশের এহেন সক্রিয়তা দেখে এখন তটস্থ বালির অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,ধৃতদের নাম জুম্মান আলি মোল্লা,গোলাম মোস্তফা খান, পার্থ মাঝি, সুকুমার ভৌমিক, সোহেল আলি শেখ, সাহেব হাজরা, ইমরান মণ্ডল, হাফিজ মল্লিক ও শেখ সইফুল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুর, বীরভূমের খয়রাশোল, হুগলির পাণ্ডুয়া, নদীয়ার তেহট্ট, পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়, জামালপুর প্রভৃতি থানা এলাকায় ধৃতদের বাড়ি। ধৃতদের বেশিরভাগই লরির চালক । এছাড়া রয়েছে অবৈধ খাদানের ম্যানেজার এবং যন্ত্র দিয়ে দামোদর থেকে বালি তোলার কাজে যুক্ত মেশিনের চালকরা । লরি ও মেশিন পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে।
জামিন অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ ৯ ধৃতকেই রবিবার বর্ধমান সিজেএম আদালতে পেশ করে তদন্তের প্রয়োজনে হাফিজ, সইফুল ও ইমরানকে সাতদিন জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে পুলিশ আদালতে আবেদন জানায়।ভারপ্রাপ্ত সিজেএম তিনজনকেই দু’দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি ধৃতদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
পুলিশের দাবি অনুযায়ী,শনিবার রাতে জামালপুর থানার বেরুগ্রাম অঞ্চলের চলবলপুরে দামোদর থেকে মেশিনের সাহায্যে অবৈধভাবে বালি তুলে তা লরিতে লোডকরে পাচারের প্রস্তুতি চলছিল। সেই খবর জামালপুর থানায় পৌছায়েই থানার পুলিশ কর্তারা নড়ে চড়ে বসেন । তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় থানার বিশাল পুলিশবাহিনী । তাদের হাতে একে একে ধরা পড়ে ছয় লরি চালক এবং নদী থেকে বালি তোলার মেশিনের চালকরা ।পুলিশ
স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু এদের সবাইকেই গ্রেপ্তার করে ।
পুলিশের এই অভিযান প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের ভূমি কর্মাধ্যক্ষ নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চল জুড়ে দামোদর থেকে অবাধে বালি চুরি হওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ উঠে আসছে । সেইসব অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে জেলা ও রাজ্য প্রশাসনেরূ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বালি চুরির বিষয়টিকে এবার কড়া ভাবে দেখা হচ্ছে। সেইমত পুলিশ ও প্রশাসন অ্যাকশনে নেমে পড়েছে।বেরুগ্রাম অঞ্চল সহ জেলার কোন জায়গাতেই কেউ যাতে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালির অবৈধ কারবার আর করতে না পারে তার জন্য প্রশাসন এভাবেই কড়া পদক্ষেপ নিয়ে যাবে ।’
যদিও জামালপুর নিবাসী জেলা বিজেপি নেতা জীতেন্দ্রনাথ ডকাল বলেন,এসব আই ওয়াশ ছাড়া আর কিছুই নয়। জীতেন্দ্রনাথবাবু দাবি করেন,’নদ-নদী থেকে বালি চুরি বন্ধ করার কথা মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম বললেন এমনটা নয় । বেশ কয়েক বছর ধরেই মুখ্যমন্ত্রী বালি চুরি নিয়ে হুশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন। তার পরেও অবৈধ খাদান খুলে দামোদর থেকে বালি চুরির ঘটনা পূর্ব বর্ধমান জেলায় কমেনি ,বরং বেড়েছে। গত বছর জামালপুর ব্লকে ১৩ খাদানের লিজ অনুমোদন হয়েছিল । কিন্তু খাদান চলেছিল আরও অনেক বেশি সংখ্যায়। জামালপুর ১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জোড়বাঁধ, নতুনগ্রামের কাঁঠালতলা,পুলমাথার তেলকুপি ঘাট ও তার সংলগ্ন জায়গায় রমরমিয়ে অবৈধ খাদান চলেছিল । একই রকম ভাবে বেরুগ্রাম, পাঁচরা ও জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলেও একাধিক অবৈধ খাদান চলেছিল । শাসকদল বা প্রশাসনের কেউ তা নিয়ে টু-শব্দটিও করেননি ।’ তাই মুখ্যমন্ত্রী আবারো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে বালি লুট একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে ,এমনটা বাংলার কোন মানুষই বিশ্বাস করেন না বলে জীতেন্দ্রনাথ ডকাল জানিয়েছেন।।