প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ অক্টোবর : রায়নায় ব্যাবসায়ীকে নৃশংস ভাবে খুনের ঘটনার তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিল এক চায়ের দোকানদারের নজরে আসা ক্যানেলে পড়ে থাকা একটি পিঠ ব্যাগ । খুনের ঘটনার পরদিন অর্থাৎ গত শনিবার দুপুরে উদ্ধার হওয়া ওই ব্যাগ থেকে মিলেছে দুটি আগ্নেআস্ত্র,কিছু কার্তুজ, ধারালো অস্ত্র ও পোষাক।পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার পুলিশ সেগুলি নিজেদের হেপাজতে নিয়েছে।গত শুক্রবার রাতে রায়না থানার দেরিয়াপুরের দেশ বাড়িতে বেড়াতে এসে নৃশংস ভাবে খুন হন কলকাতার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডল(৩৮)। তাঁকে খুনের ঘটনায় জড়িত দুস্কৃতিরাই এইসব অস্ত্র ব্যবহার করেছিল কিনা সেই বিষয়টি পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে।উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলি ও পোষাকটি ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠিয়ে পুলিশ সেই ব্যাপারে নিশ্চিৎ হতে চাইছে ।
রায়না থানার মুগুরা পঞ্চায়েতের উচিৎপুর গ্রামে বাড়ি পেশায় চায়ের দেকানদার বিজন ঢালির । চায়ের দোকান চালানোর পাশাপাশি তিনি সামান্য কিছু জমিও ভাগে চাষ করেন । বিজন বাবু জানিয়েছেন, গত শুক্রবার দুপুর ৩ টে নাগাদ চায়ের দোকান খোলার আগে তিনি তাঁর চাষ জমি ঘুরে দেখে আসতে যান । জমি দেখে ফেরার পথে ক্যানেলের ধারে জলের মধ্যে তিনি কালো রঙের একটি পিঠ ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন। ব্যাগটির চেন খুলতেই তিনি দেখেন ব্যাগের ভিতরে একটি দামি পোষাক ও অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে । বিজন বাবু বলেন, এমনটা দেখার পরেই তিনি ভয় পেয়ে যান । এরপর ছুটে গ্রামে গিয়ে তিনি গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য উৎপল মাঝি কে ঘটনার কথা জানান । পঞ্চায়েত সদস্যও ক্যানেল পাড়ে গিয়ে ব্যাগটির চেন খুলে অস্ত্রশস্ত্র , পোষাক দেখতে পান । তারপরেই পঞ্চায়েত সদস্য বিষয়টি এলাকার পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিপ্লব গুহকে ও রায়না থানায় জানান । রায়না থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই ব্যাগটি উদ্ধার করে রায়না থানায় নিয়ে যায় ।
পঞ্চায়েত সদস্য উৎপল মাঝি জানান , বাগটির মধ্যে তিনি ২ টি আগ্নেআস্ত্র , কিছু কার্তুজ ,ভোজালি , খুর , একটি মোবাইলের চার্জার ভরা থাকতে দেখা যায় । নামি ব্র্যান্ডেড কোম্পানির একটি জিনসের প্যান্টও ক্যানেলের একই জায়গার জল থেকে উদ্ধার হয়েছে বলে পঞ্চায়েত সদস্য দাবি করেছেন ।
উপ-প্রধান বিপ্লব গুহ এদিন বলেন ,অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটি তাঁদের খুবই ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ উচিৎপুরের ক্যানেল থেকে ব্যাগে বোঝাই অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার ঠিক আগেরদিন রাতে স্থানীয় দেরিয়াপুর গ্রামের বাড়িতে নৃশংস ভাবে খুন হন কলকাতার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডল। বিপ্লববাবু বলেন,“ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনায় জড়িত দুস্কৃতিরা এইসব অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে প্রমাণ লোপাটের জন্য ঘটনাস্থল থেকে ৮ কিমি দূরে উচিৎপুরের ক্যানেলে ফেলে পালায়নিতো!এইসব অস্ত্রশস্ত্র খুনের ঘটনার তদন্তের মোড় একপ্রকার ঘুরিয়ে দিয়েছে । উদ্ধার হওয়া অস্ত্রই খুনিদের নাগাল পেতে পুলিশকে সাহায্য করতে পারে বলেই মনে করছেন উপ-প্রধান“ । ভোজালিতে রক্তের ছাপ ও পিস্তলে কার্তুজের গন্ধ থাকায় তদন্তকারীরাও অনুমান করছেন ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনায় এইসব অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে ।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খাঁন জানিয়েছেন,’দেরিয়াপুর থেকে কিছুটা দূরে নয়ানজুলিতে পড়ে থাকা একটি ব্যাগের ভিতর থেকে কিছু অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি নয়ানজুলিতে কিভাবে এল তা এখনও জানা যায়নি । এই বিষয়ে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হবে ।’।