প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ সেপ্টেম্বর : চোরাই রাইস ওয়েলের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি করা হত ভেজাল সরষের তেল ।গোপন সূত্রে সেই খবর পেয়ে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার পুলিশ মঙ্গলবার রাতে ছিনুই এলাকায় গজিয়ে ওঠা ওই ভেজাল সরষের তেলের কারবারী ডেরায় হানা দেয় । সেখান থেকে পুলিশ ভেজাল সরষের তেল তৈরিতে যুক্ত তিন জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি ৫২ টি টিনের ড্রামে ভর্তি ভেজাল সরষের তেল ও রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করেছে।এছাড়াও রাইস ওয়েল সমেত একটি ট্যাঙ্কারও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে । পুলিশ নড়েচড়ে বসাতেই ভেজাল সরষের তেলের কারবারী চক্রের পর্দাফাঁস হল বলে মনে করছেন মেমারির বাসিন্দারা ।
পুলিশ জানিয়েছে ,ধৃতদের নাম অসীম মিত্র, গোবিন্দ সরকার ও পঙ্কজ সিং । অসীম ও গোবিন্দর বাড়ি মেমারির ছিনুই গ্রামে । অপর ধৃত পঙ্কজ সিং বাজেয়াপ্ত হওয়া ট্যাঙ্কারটির চালক ।তাঁর বাড়ি হাওড়ার বালি এলাকায় । সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ বুধবার তিন ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করে তদন্তের প্রয়োজনে তাঁদের ১০ দিন নিজেদের হেপাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায়।বিচারক ধৃতদের ৫ জানুয়ারী পর্যন্ত পুলিশি হেপাজত মঞ্জুর করেছে।জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যান সিংহরায় বলেন ,“ভেজাল সরষের তেল তৈরি চক্রের জাল কতদূর বিস্তৃত রয়েছে এবং চক্রে আরও কারা করা যুক্ত রয়েছে তা ধৃতদের হেপাজতে নিয়ে খতিয়ে দেখা হবে । বাজেয়াপ্ত হওয়া সমস্ত সামগ্রীও ল্যাব টেস্টিংয়ে পাঠানো হবে ।’ যে গোডাউনে ভেজাল সরষের তেল তৈরি করা হত সেই গাডাউনের মালিক কে সেই বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন ।
মেমারির ছিনুই শীতলাতলা এলাকায় ভেজাল সরষের তেল তৈরি হওয়ার খবর মঙ্গলবার গোপন সূত্রে পায় মেমারি থানায় পুলিশ।ওই এলাকায় হানা দিতেই পুলিশের নজরে আসে একটি ট্যাঙ্কার থেকে তেল বের করে ড্রামে ভরা হচ্ছে । পুলিশ ওই ট্যাঙ্কারের চালককে ধরার পাশাপাশি ট্যাঙ্কারটি বাজেয়াপ্ত করে । পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ,ট্যাঙ্কার থেকে রাইসয়েল ড্রামে ভরে নিয়ে গোডাউনে রাখা হত । এই রাইসয়েও চুরি করা রাইসয়েল । এছাড়াও আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে রাইসয়েল সংগ্রহ করতো কারবারীরা । তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে ,গোডাউনের মধ্যে ওই রাইসয়েল প্রথমে একটি বড় পাত্রে ঢালা হত । পরে তাতে সরষের তেলের রঙ আনার জন্য কাঠ পালিশে ব্যবহৃত ’কামধেনু’ রঙ সহ নানা ভেজাল দ্রব্য মেশানো হত। এছাড়াও সরষের তেলের ঝাঁজ আনার জন্য ওই রাইসয়েলে ক্ষতিকারক রাসায়নিকও মেশানো হত। এইসব ভেজাল দ্রব্য মিশিয়ে কারবারীরা রাইসয়েলকে সরষের তেলের রুপ দিত । পরে সেই তেল ১৫ কেজির খালি টিনের ড্রামে ভরে টিনের ছিপি দিয়ে শিল করে দেওয়া হত । এরপর ওই টিনের ড্রামে বিভিন্ন নামি দামি কোম্পানির স্টিকার আঁঠা দিয়ে এঁটে কারবারীরা বিভিন্ন দোকানে বিক্রী করতো । মেমারি থানার পুলিশ দাবি করেছে , ভেজাল সরষের তেলের এই কারবারী ডেরা থেকে ৫২ ড্রাম ভর্তি ভেজাল সরষের তেল ,৭৪ টি খালি টিনের ড্রাম ও নগদ ৫০ হাজার টাকা পুলিশ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে । এছাড়াও ভেজাল তেল তৈরিতে ব্যবহৃত সমস্ত উপকরণ ও রাইস ওয়েল সমেত ট্যাঙ্কারটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে মেমারি থানার পুলিশ জানিয়েছে ।।