প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ মে : মেদিনীপুরে এক এসএফআই নেত্রী ও এআইডিএসও নেত্রীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা সংক্রান্ত মামলা এখন চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। এআইডিএসও নেত্রীদের উপর পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্ট “সিট“ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। এসবের মধ্যেই ফের উঠলো পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ। এবার পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে মারধর সহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও কুপ্রস্তাব দেওয়ার বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন এক বধূ । শুধু অভিযোগ আনাই নয়,ঘটনার বিহিত চেয়ে ওই বধূ জেলার পুলিশ সুপারের দ্বারস্থও হয়েছেন। যদিও বধূর আনা এমন অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে এখনই কোন মন্তব্য করতে চাননি জেলা পুলিশের কোনও শীর্ষ কর্তা।
পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানানো বধূর
বাবার বাড়ি জেলার রায়না থানার অন্তর্গত একটি গ্রামে।তাঁর বিয়ে হয়েছিল জেলার মন্তেশ্বর থানা এলাকার এক যুবকের সঙ্গে। বধূ গত ২১ এপ্রিল জেলার পুলিশ সুপারের কাছে দুই পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন । তাতে তিনি দাবি করেছেন,’তিনি পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে পারেননি। পর পর দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় তিনি তাঁর স্বামী সহ শ্বশুর বাড়ির অন্য সকল সদস্যদের বিষনজরে পড়েন।তখন থেকেই তাঁর উপর শ্বশুর বাড়ির অত্যাচার শুরু হয় ।’
বধূ জানিয়েছেন,’তিনি তাঁর শিশু কন্যাদের মুখ চেয়ে অত্যাচার সহ্য করেই ১২টা বছর স্বামীর ঘরেই থাকেন। তবুও সুখ ফেরে না। উল্টে গত বছরের ২৫ নভেম্বর তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। কোনরকমে তিনি বেঁচে যান। পরে তাঁর দুই শিশু কন্যাকে নিজেদের কাছে রেখে দিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাঁকে শ্বশুর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়’।বাবার বাড়ি ফিরে এসে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি রায়না থানায় বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন ।
বধূর অভিযোগ অনুযায়ী,’রায়না থানায় মামলা চলা অবস্থাতেই গত ১৪ এপ্রিল তাঁর স্বামী তাঁকে শ্বশুর বাড়িতে ডেকে পাঠায় । সেই মত তিনি ওইদিন বেলায় তাঁর শ্বশুর বাড়িতে পৌছান।সেটা মেনে নিতে না পেরে তাঁর দেওর,জা,শ্বশুর, শাশুড়ি ও তাদের কয়েকজন সাগরেদ মিলে টেনে হিঁচড়ে তাঁকে শ্বশুর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বেরুতে না চাইলে তারা তাঁকে মারধর করে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দেয়।সেখানে তাঁর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে দিয়ে তারা আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন তিনি চিৎকার শুরু করে শ্বশুর বাড়ির অন্য একটি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেদিয়ে কোন রকমে নিজের প্রাণ বাঁচিয়েই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন । শ্বশুর বাড়ি গ্রামের লোকজন সেই খবর মন্তেশ্বর থানায় পৌছে দেয়।তার পরেই তাঁর শ্বশুর বাড়িতে এসে পৌছায় মন্তেশ্বর থানার পুলিশ অফিসার (Sub-Inspector) সোহেল আহমেদ। তিনি’ই শ্বশুরবাড়ির ঘরের দরজা ভেঙে অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে ওই ঘর থেকে বের করেন বলে বধূ দাবি করেছেন’।
পুলিশ সুপারকে বধূ এও জানিয়েছেন,তাঁর জ্ঞান ফেরার পর অকথ্য ভাষায় তাঁকে গালিগালাজ করা শুরু করে পুলিশ অফিসার সোহেল আহমেদ। এমনকি তাঁর স্বামী সহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে দিয়ে তাঁকে মারধোর পর্যন্ত করানো করায় ওই পুলিশ অফিসার। এরপর তাঁকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁর উপর অত্যাচার চালানোর পাশাপাশি তাঁকে কুপ্রস্তাবও দেয় পুলিশ অফিসার সোহেল আহমেদ। বধূর আরও অভিযোগ,এতসব কিছুর পরেও কোন চিকিৎসা না করিয়ে সারা দিন- সারা রাত তাঁকে থানায় রেখে দেওয়া হয়। পরদিন তাঁর শ্বশুর ও স্বামীকে ডেকে পাঠিয়ে তাদের দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করিয়ে তাঁকে থানা থেকে কালনা আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করলে তবে তিনি রেহাই পান বলে বধূ জানিয়েছেন ।
বধূর আনা এই অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে তাঁর
স্বামীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি দাবি করেন,অভিযোগ ’’মিথ্য ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত’। বধূর স্বামীর কথা অনুযায়ী,সব দোষের দোষী তাঁর স্ত্রী“।কন্যা সন্তান হয়েছে বলে তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ মনক্ষুন্ন হননি। বরং তাঁর স্ত্রীর দ্বারা তিনি এবং তাঁর বাবা-মা নির্যাতনের শিকার বলে হাবিবুর রহমান দাবি করেছেন ।
একই ভাবে বধূর আনা অভিযোগ নিয়ে সদ্য মঙ্গলকোট থানায় বদলি হওয়া পুলিশ অফিসার (SI) সোহেল আহমেদ কে ফোন করা হলে তিনিও সব মিথ্যা বলে দাবি করেন । সোহেল আহমেদ বলেন,কুপ্রস্তাব দেওয়া বা মারধর করা তো দূরের কথা ,ওই বধূর সঙ্গে কোন বাক্যালাপ পর্যন্ত তিনি কখনও করেননি।বধূকে নিয়ে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে যেদিন অশান্তি হয়েছিল বলা হয়েছে,সেদিনও তিনি সেখানে যান নি। মন্তেশ্বর থানার এক ASI সহ লেডি কনস্টেবলরা সেখানে গিয়ে ছিলেন বলে সোহেল আহমেদ দাবি করেছেন । একই সঙ্গে তিনি এও বলেন,ওই দিন তিনি ওই বধূকে থানায় বসে থাকতে দেখেও কোন কথা বলেননি । গোটা থানা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় মোড়া রয়েছে। ওই বধূ আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ এনেছেন ,তা প্রমাণ করতে পারবেন তো?এই প্রশ্ন সামনে এনে পুলিশ অফিসার সোহেল আহমেদ ওই বধূর বিরুদ্ধেও পাল্টা অভিযোগ এনেছেন। তিনি জানান,তাঁকে একদিন ফোন করে ওই বধূ নানা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছিল। তা নিয়ে আইনি যা ব্যবস্থা যা নেওয়ার দরকার তা তিনি নিয়ে রেখেছেন।সোহেল আহমেদ এত কিছু জানালেও মন্তেশ্বর থানার আইসি বিপ্লব পতি এ নিয়ে বিশেষ কিছু ’খোলসা’ করতে চাননি। বিষয়টি নিয়ে জেলার পুলিশ সুপার সায়ক দাসকে ফোন করা হলে তিনি বলেন,বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে বিষদে জেনে তার পর প্রতিক্রিয়া দিতে পারবেন বলে পুলিশ সুপার জানিয়ে দেন।।