প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ মার্চ : আইনজীবীরা একজোট হয়ে আন্দোলনে নামতেই সক্রিয় হল পুলিশ।গ্রেপ্তার হল পুলিশ পরিচয় দিয়ে বর্ধমান আদালতের মহিলা আইনজীবীকে মারধর ও তার গর্ভের সন্তান নষ্টের ঘটনার মূল অভিযুক্ত। ধৃতের নাম রোহিত দাস ওরফে রাজীব।বর্ধমান থানার পুলিশ মঙ্গলবার রাতে শক্তিগড় এলাকা থেকে অভিযুক্ত রোহিতকে গ্রেপ্তার করে।শক্তিগড় থানার অন্তর্গত গাংপুর দিঘিরপাড় এলাকায় ধৃতের বাড়ি।ধৃতের ভাই হাওড়া জেলা পুলিশে কনস্টেবল পদে কর্মরত রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশ ধৃত রোহিতের ব্যবহার করা মোটর সাইকেল ও মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ বুধবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করলে বিচারক তাকে ৩ দিন পুলিশী হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন
বর্ধমান আদালতের আইনজীবীদের কথায় জানা গিয়েছে,১৫ মার্চ হোলির দিন।ওইদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ স্বামীর সঙ্গে বাইকে চড়ে বর্ধমান শহরের জেলখানা মোড় হয়ে বিজয়রাম হরিনারায়ণপুরে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন মহিলা আইনজীবী। জেলখানা মোড়ের কাছে একটি বাইক তাঁদের বাইকটিকে ধাক্কা মারে।তখন ধাক্কা মারা বাইকটির চালককে আস্তে বাইক চালানোর জন্য পরামর্শ দেন মহিলা আইনজীবী ও তাঁর স্বামী।ঠিক ওই সময় অপর একজন ঘটনাস্থলে পৌছে নিজেকে পুলিশের লোক বলে পরিচয় দিয়ে ওই মহিলা আইনজীবীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা শুরু করে।এমনকি অন্তঃসত্ত্বা মহিলা আইনজীবী কে রাস্তায় ফেলে মারধর করে। তাঁর স্বামীকেও মারধর করে। মহিলা আইনজীবী ও তাঁর স্বামীকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয় পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি।
এমন হামলা ও মারধরের শিকার হয়ে মহিলা আইনজীবী বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানাতে যান । কিন্তু তাঁদের অভিযোগ পুলিশ নেয় না। উল্টে পুলিশ মহিলা আইনজীবীকে হাসপাতালে চিকিৎসা করতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে দায় সারে বলে অভিযোগ।হাসপাতালের কাগজ না পেলে অভিযোগ নেওয়া হবে না বলেও মহিলা আইনজীবীকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।এরপর মহিলা আইনজীবী হাসপাতালে গেলে সেখানে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়,পুলিসের দেওয়া কোনও নথি না পেলে চিকিৎসা করানো হবে না।এই বলে হাসপাতাল থেকেও মহিলা আইনজীবীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে মহিলা আইনজীবীকে নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে যেতে হয়। অন্তঃসত্ত্বা থাকা সত্ত্বেও তাঁর উপর হওয়া হামলার ঘটনার কথা বলার পরেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকেছে বলে ওই মহিলা আইনজীবীর অভিযোগে জানিয়েছেন।
মহিলা আইনজীবীর উপর বর্বরোচিত হামলা এবং সেই হামলার বিষয়ে পুলিশের অভিযোগ নিতে অস্বীকার প্রতিবাদে সরব হয় বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশন । ঘটনার বিচার পেতে বারের সদস্য ও কার্যকর্তারা মঙ্গলবার বিকালে মহিলা আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠকে বসেন । সেই বৈঠকে বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশন সিদ্ধান্ত নেয়, বুধবার তাঁরা কোনও কাজ করবেন না, বিচার প্রক্রিয়াতেও অংশ নেবেন না।বারের এই সিদ্ধান্তের কথা জেলা জজকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।এই সিদ্ধান্তের কথা এবং ঘটনা বিবরণ মুখ্যমন্ত্রী সহ পুলিশ প্রশাসনের উপর মহলেও তারা জানিয়ে দেন ।মারধরের ফলে মহিলা আইনজীবীর গর্ভপাত হয়ে যায়ওয়ার বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকেও জানানো হয়ে।একই সঙ্গে আইনজীবীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখেন,তাঁরা চিঠি দেওয়ার ৭২ ঘন্টার মধ্যে কোনও ব্যবস্থা গৃহীত না হলে শুরু হবে বৃহত্তর আন্দোলন।বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা ,অভিযুক্ত রোহিত দাসের দৃষ্টান্ত মূলক সাজার দাবি করেছেন।।