এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২২ আগস্ট : ফের বাংলাদেশে খুন হয়ে গেলেন এক হিন্দু যুবক ৷ এবারে কক্সবাজারের চকরিয়া থানা হাজতে দুর্জয় চৌধুরী নামে ২৭ বছর বয়সী এক শিক্ষককে নৃশংসভাবে পিটিয়ে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে । দুর্জয় চৌধুরী চকরিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম কমল চৌধুরী। দুর্জয় ছিলেন চকরিয়া সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর। এই ঘটনায় চকরিয়া পাইলট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানমের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠছে ।
পরিবারের দাবি, দুর্জয় চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে ওই বিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অবগত ছিলেন। এসব দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় হেডমাস্টার রাবেয়া খানম পরিকল্পিতভাবে দুর্জয়কে ফাঁসানোর জন্য তার নামে চেক জালিয়াতির একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার সূত্র ধরে দুর্জয়কে থানায় ডেকে নেওয়া হয়, যেখানে রাতের অন্ধকারে পুলিশকে দিয়ে তাকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে । দুর্জয়ের পরিবার দৃঢ়ভাবে দাবি করেছে, এটি কোনো আত্মহত্যার ঘটনা নয় বরং সুপরিকল্পিত হত্যা । তারা অভিযোগ করেছেন, থানার ভেতরেই দুর্জয়কে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা হিসেবে রাবেয়া খানমকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং তার ফাঁসির জোর দাবি জানানো হয়েছে।
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও সৎ মানুষ। তার বিরুদ্ধে চকরিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা কমল চৌধুরীর ছেলে দুর্জয় চৌধুরী চকরিয়া বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন । জানা গেছে, স্কুলের হিসাব নিকাশ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে গন্ডগোল হয় এবং দুর্জয়ের উপর সমগ্র দায় চাপিয়ে দেয় । টাকা আত্মসাৎ করার মিথ্যা অভিযোগ তুলে শিক্ষককে স্কুলে কাল সারাদিন ধরে হেনস্থা করা হয় । এরপর তাকে থানায় আনা হয় । দুর্জয় চৌধুরী হামলাকারী দের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে গেলে থানার ওসি তার অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে । কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তা গ্রহণ করে এবং দুর্জয়কে গ্রেপ্তার দেখানো হয় । তার ঠিক কয়েক ঘন্টার মধ্যেই লক আপের গ্রিলের দরজায় সাইকেলের টিউবের সাহায্যে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় যুবককে ঝুলতে দেখা যায় । যুবকের দু’হাত গ্রিলে রাখা ছিল এবং মাটিতে ঠেকে ছিল তার দু’পা । মৃতের পরিবার নিশ্চিত যে দুর্জয়কে পিটিয়ে বা শ্বাসরোধ করে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ । যদিও পুলিশ দাবি করছে এটি আত্মহত্যা । তবে স্থানীয়রা নিশ্চিত যে এই খুন করা হয়েছে দুর্জয়কে এবং এর পেছনে বড় কোনো গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে।
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে দুর্জয় চৌধুরী ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও সৎ মানুষ। এমন একজন মানুষের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের অভিযোগ এবং হঠাৎ থানা হাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অঙ্গ বুধবার রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে দুর্জয়কে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তাদের অনুমান । এই ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন,’ও এত নম্র ভদ্র যে, গ্রেপ্তারের মতো কোনো অপরাধ সে করতে পারে না। যদি কোনো অফিসিয়াল ত্রুটি থেকেও থাকে, তা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।’ জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—কোন মামলার ভিত্তিতে দুর্জয়কে গ্রেপ্তার করা হলো? কেন তাঁকে থানায় নেওয়া হয়েছিল? থানা হাজতের নিরাপত্তা ও নজরদারি থাকলে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? অনেকেই বলছেন, “হঠাৎ নিবে গেলে এক জলন্ত প্রদীপ। এটি আত্মহত্যা হতে পারে না। এই ঘটনার সঠিক জবাব দেবে কে?”
ঘটনার পর দুর্জয়ের পাড়ার বাসিন্দারা শোকস্তব্ধ । পরিবারের পক্ষ থেকেও দাবি উঠেছে যে, প্রশাসন যেন ঘটনার সঠিক তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করে। স্থানীয়দের মধ্যে একটাই দাবি—এটি শুধু একটি মৃত্যু নয়, এর পেছনে যদি কোনো ষড়যন্ত্র থাকে, তবে তা বের করে আনতে হবে। চকরিয়া থানার পক্ষ থেকে এখনো কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় মানুষ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে । কিন্তু পুলিশই যদি হত্যা করে তাহলে ঘাতকের আদপেই কি শাস্তি হবে ? এই প্রশ্নও উঠছে ।।

