জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),১১ জুন : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাত ধরে মানব সভ্যতা যত আধুনিক হচ্ছে তত বেশি বিপদ ডেকে আনছে মানব জীবনে। মানুষের অতিরিক্ত মুনাফার লোভে সৃষ্ট দূষণের আঘাতে জর্জরিত মানব সভ্যতার অস্তিত্ব চরম সংকটের মুখে। নিজের তৈরি ফ্রাংকেস্টাইনকে ফিরিয়ে এনে নিজের সাধের বিশ্বকে আগামী প্রজন্মের বাসযোগ্য করার জন্য শেষ পর্যন্ত পথে নামতে হলো প্রশাসনকে। উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা ।
কাগজ বা চটের ব্যাগের পরিবর্তে মানুষ একদিন প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরি করেছিল নিজের স্বার্থে। প্রথম দিকে সেগুলো ছিল যথেষ্ট পুরু এবং মূলত পোশাকের দোকানে দেখা যেত। ধীরে ধীরে সেগুলো পাতলা হতে হতে খুবই পাতলা আকার ধারণ করে। এই পাতলার পাল্লায় পড়ে মানব সভ্যতা গোল্লায় যেতে বসেছে। বাজার থেকে হাল্কা জিনিস কিনতে গেলেই হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই প্লাস্টিকের ব্যাগ। এই ব্যাগ অপচনশীল এবং যত্র তত্র উড়ে গিয়ে দূষণ সৃষ্টি করছে। ড্রেনের মুখ আটকে রেখে নিকাশি ব্যবস্থাকে প্যারালাইস করে দিচ্ছে । রাজ্য দূষণ পর্ষদের পরামর্শে গত কয়েকদিন ধরেই পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা পৌরবাসী ও তৎসংলগ্ন বাসিন্দাদের সচেতন করার লক্ষ্যে পৌর কর্তৃপক্ষ একনাগাড়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
তখনও গুসকরার প্রায় মাঝখানে অবস্থিত বাজার ভালভাবে শুরু হয়নি। ধীরে ধীরে বাজারে ভিড় বাড়ছে। ১১ ই জুন সাত সকালে গুসকরা বিট হাউসের ওসি অরুণ কুমার সোম, পুরসভার কয়েকজন কর্মী এবং কয়েকজন কাউন্সিলর সহ চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জীকে দেখে চমকে ওঠে বাজারে আগত মানুষরা। দেখা গেলো প্রতিটি দোকানে ঘুরে ঘুরে তারা একইসঙ্গে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়কেই ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার না করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কিভাবে এই ব্যাগ মানব সভ্যতার অস্তিত্বকে প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে সেটাও তারা ব্যাখ্যা করেন। অধিকাংশ মানুষ মনোযোগ দিয়ে শুনলেও কেউ কেউ তির্যক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছে,’উৎপাদন বন্ধ করলেই ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে ।’ প্রসঙ্গত, পঁচাত্তর মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করলে ক্রেতা ও বিক্রেতার কত টাকা জরিমানা হতে পারে সেটা বুঝিয়ে বলা হয় ।
পরে ওসি বললেন,’পুলিশ হিসাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার যেমন আমাদের দায়িত্ব তেমনি সৎ নাগরিক হিসাবে মানুষকে সচেতন করাটা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাই পৌর প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই সচেতনার কাজে নেমেছি। এক জনকেও যদি সচেতন করতে পারি তাহলে তার হাত ধরে আরও পাঁচজন সচেতন হবে। সেটাই সমাজের লাভ ।’ তিনি আরও বলেন,’জরিমানাটা মুখ্য ব্যাপার নয় মূল দরকার মানুষের সচেতন হওয়া।’
অন্যদিকে কুশল বাবু বলেন,’সমাজকে দূষণ মুক্ত করতে হলে শুধু প্রশাসনিক উদ্যোগ যথেষ্ট নয় সমস্ত মানুষের সচেতনতা দরকার। প্রশাসন নাড়া দেবে মানুষ সাড়া দেবে তবেই তো আমরা পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পাব। আশা করা যায় নিজের স্বার্থে আমরা সচেতন হব ।’।