এইদিন ওয়েবডেস্ক,পোল্যান্ড,১৭ মার্চ : কট্টরপন্থা ও সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার কারনে মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের কোনো অমুসলিম দেশই আর বিশ্বাস করতে চাইছে । জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মতো যে সমস্ত ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিতে বামপন্থী সরকার রয়েছে, মুসলিম শরণার্থীদের প্রতি তাদের দুর্বলতার কারণে তারাও দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে । বাড়ছে দক্ষিণপন্থী দলগুলির জন সমর্থন । এদিকে পোল্যান্ড ও বেলারুশ সীমান্তে একজন মুসলিম শরণার্থী ব্যক্তির বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে । ওই ব্যক্তিকে ইংরাজিতে বলতে শোনা গেছে, ‘আমরা যদি পোল্যান্ডে ঢুকি তাহলে ওদের সেনা আমাদেরকে মারবে বলছে, হত্যা করবে বলছে..সত্যি । কিন্তু আমি যদি ইংল্যান্ড এবং জার্মানিতে যাই তাহলে ভালো জীবন যাপন করতে পারব৷ আমি এখন বেলারুশ ও পোল্যান্ড সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছি । আমরা একটা জঙ্গলে আছি এবং এখন বৃষ্টি হচ্ছে,আর খুব ঠান্ডা । আমরা আগুন জ্বালাতেও পারছি না । আমাদের সঙ্গে বাচ্চারাও আছে । এভাবে থাকলে তো মরে যাব কারণ এখানে খুব ঠান্ডা । আমাদের সাহায্যের দরকার । বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে ।’
এদিকে পাশাপাশি পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মারিউস ব্লাসজ্যাকের একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে । একটি বৈদ্যুতিক চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে তাকে বলতে শোনা গেছে,’আপনি যদি মুসলিম অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কথা বলেন তাহলে একটাও পোল্যান্ডে আসতে পারবেনা৷ আমরা কুড়ি লক্ষ্য পোল্যান্ডবাসী শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছি । আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একজন মুসলিম কেউ আশ্রয় দিইনি । দেশের মানুষ আমাদের সরকারের কাছে যেগুলি প্রত্যাশা করে তার মধ্যে প্রথমত হল, যে কারণে আমাদের সরকার নির্বাচিত হয়েছে, যে কারণে আমাদের পোলান্ড আজ নিরাপদ, যে কারণে আমাদের এখানে একটাও সন্ত্রাসী হামলা হয়নি, পোল্যান্ডের সড়কের দিকে তাকিয়ে দেখুন, আমরা পপুলারিস্ট-ন্যাশনালিস্ট-রেসিস্ট যাই হই না কেন আমার কিছু যায় আসে না, আমাকে আমার পরিবার এবং দেশের যত্ন নিতে হবে ।’
উল্লেখ্য,গত বছর জুলাই মাসে পোল্যান্ড এবং বেলারুশ সীমান্তে, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা মুসলিম অভিবাসীরা পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় পোলিশ সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পুলিশ সীমান্ত রক্ষা বাহিনীরা গুলি পর্যন্ত চালায় । প্রসঙ্গত,
পোল্যান্ডে মুসলিম অভিবাসীদের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ নীতি রয়েছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে পোলিশ সংবাদ সংস্থা পিএপি জানায় যে পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মারিউস ব্লাসজ্যাক বলেছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন কর্মসূচির অংশ হিসেবে পোল্যান্ড শরণার্থীদের গ্রহণ করবে না। আমরা আমাদের সম্মতি দেব না কারণ আমরা ইতিমধ্যেই ইউক্রেনীয়দের গ্রহণ করেছি। আমাদের জন্য অগ্রাধিকার এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নিরাপত্তা। পুনর্বাসন এবং স্থানান্তরের মতো আদর্শিকভাবে অনুপ্রাণিত ধারণাগুলির জন্য পোল্যান্ডকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা উচিত নয় । লুক্সেমবার্গে ইইউ দেশগুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রীদের সাথে বৈঠকের পর পোলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান এই মন্তব্য করেছিলেন ।
ওই বছর সেপ্টেম্বরের শেষে, ইউরোপীয় কমিশন একটি নতুন ইইউ পুনর্বাসন কর্মসূচি তৈরির প্রস্তাব করে যার মাধ্যমে আগামী দুই বছরে ৫০,০০০ এরও বেশি আশ্রয়প্রার্থীকে ইউরোপে গ্রহণ করা যাবে। এই কর্মসূচি ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলির জন্য বাধ্যতামূলক হবে না তবে তাদের এটি গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হবে।
এই কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে, ইইউ ইউরোপে শরণার্থী আবেদনকারীদের জন্য একটি আইনি প্রক্রিয়া চালু করে ।ব্লাসজ্যাক তখন বলেছলেন,এই পুনর্বাসন ব্যবস্থা কার্যকর হবে না। এটি এমন একটি ব্যবস্থা যা আবারও ইউরোপে অভিবাসীদের আরও ঢেউ আকর্ষণ করবে ।
রিপোর্ট অনুসারে, ব্লাসজ্যাক ইইউ সদস্য দেশগুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রীদের বলেছেন যে পোল্যান্ডে বর্তমানে ১০ লক্ষেরও বেশি ইউক্রেনীয় নাগরিক রয়েছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ রাশিয়ার আগ্রাসনের পর যুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন এবং কেউ কেউ অর্থনৈতিক অভিবাসী।
পোলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান বলেছিলেন, ‘মুসলিমদের বিপরীতে, ইউক্রেনীয় নাগরিকরা নিজেদেরকে খুব ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে ।
অন্যদিকে পশ্চিম ইউরোপের মুসলিম সম্প্রদায়গুলি কয়েক দশক ধরে ইউরোপের সাথে একীভূত হয়নি, এমনকি তারা ইউরোপীয়দের উপর তাদের মূল্যবোধ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ।’ তার মতে, এই শরণার্থী গোষ্ঠীগুলিতে কোনও সন্ত্রাসী না থাকলেও,এই লোকেরা মুসলিম সন্ত্রাসীদের সহায়তাকারী। তাই আমরা আরও ২০ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিককে আশ্রয় দিতে রাজি আছি,কিন্তু একটাও মুসলিম শরণার্থীকে আশ্রয় দেব না আমাদের দেশে৷’।