তখন আমি সদ্য মায়ের হাত ধরে পা রেখেছি রাস্তায়,
চেনা পৃথিবীর বাইরে এক অচেনা জগতে। মনে ভয় ছিল অনেক,
অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা ছিল তীব্র।
দুরু দুরু বুকে, অশান্ত চিত্তে
আমার শৈশব পা রেখেছিল এক অন্য আঙ্গিনায়।
যদিও সেদিন তারাদের মাঝে
সাদরে গৃহীত হয়েছিলাম আমি,
এক উষ্ণ আলিঙ্গনে, ভালোবাসার ছোঁয়ায়।
ওরা কারা?
ওরা যে ভালোবাসার দূত, আলোর দিশারী।
তোমার দেখানো পথে পা রেখে পৌঁছে গেছে এক নতুন সূর্যের দেশে।
আমিও আলো চাই, আকাশ চাই, চাই দুটো ডানা।
সহজ হতে চেয়ে আমি ও চেয়েছি একটা সরল মন,
আমিও উদার হয়ে আনন্দকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছি বারংবার।
অনেক অনেক চাই’য়ের শেষে
সেদিন আমি ছুঁয়েছিলাম আলো,
আমার প্রাণের ঠাকুর,
সেদিন আমার হাতে ছিল তোমার জীবন দর্শন,
সবার প্রিয় রবিঠাকুরের ‘সহজপাঠ’।
সেই শুরু।
জীবনের অলিতে গলিতে, পথ চলতে চলতে
যখনই টালমাটাল হয়েছে মন,
ততই আঁকড়ে ধরেছি তোমায়।
জীবন-জীবিকায়, প্রেমে-ব্যর্থতায় শুধু তুমি আর তুমি।
যখন আমি আরও একটু বড়।
সদ্য শৈশবের গন্ডি পেরিয়ে কৈশোরের দোরগোড়ায় উঁকিঝুঁকি।
মনে ছিল হাজার গল্পের আকুতি।
জীবন কে জানার এক অনন্য কৌতুহল।
সম্পর্কের অজানা অচেনা অলিগলির গোলকধাঁধায় হারানোর এক তীব্র আকাঙ্খা।
একবুক খিদে নিয়ে,
অমিমাংসিত হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি এক একাকী কৈশোর।!
মরুদ্যানের মতো সেদিন আবারও পেয়েছিলাম তোমায় আমার জীবন মরুতে।
বর্ষার প্রথম বৃষ্টির মতো আবারও
আমায় সবুজ, সতেজ করেছিল তোমার ছোঁয়া,
তোমার’গল্পগুচ্ছ’!
জীবনটাকে যেন তখনই মনে হয়েছিল পরিপূর্ণ।
তবে
সময়ের স্রোতে, ভেসে যেতে যেতে
যখন খেদ জমেছিল মনেও,
একটু একটু করে।
জীবনের ভালোর ছায়ায় আটকে পড়া আমি, আমার মন, এক ধাক্কায় যখন নিঃস্ব হয়ে ছিল,
যখন অসীম কষ্টে জর্জরিত জীবন
ভাঙা গড়ার খেলায় প্রতারিত হয়েছিল বারবার,
নিজেকে নিংড়ে বিলিয়ে দেওয়ার পরও ব্যর্থ হৃদয়ে ফিরতে হয়েছিল যৌবনের চৌকাঠে,
তখনই, ঠিক তখনই তুমি আবার এলে,
দুঃসাহসিক এক স্বপ্নের মতো,
দুরন্ত এক স্পর্ধার মতো।
আবার আমায় জিতিয়ে দিতেই উপুড় করলে তোমার সৃষ্টি সম্ভার।
জীবনের অজানা এক অধ্যায় আবারও উন্মোচিত হল গভীর জীবন দর্শনের সাথে।
প্রেম, পূজা, রাগ অনুরাগ, আঘাত প্রত্যঘাত, এমনকি ব্যর্থতা পূর্ণতার আর্তি নিয়ে ও মন কি করে ভালো রাখে, মানুষ কি করে ভালো থাকে,
জানলাম চোখের বালি থেকে, শেষের কবিতা পড়ে।
জীবন হল সহজ, আরও সুন্দর,
তোমার সৃষ্টিতে, সংস্কৃতিতে, তোমার ঐতিহ্যে।
এখন আমি ‘গীতবিতান’ এর পূজারী।
জীবনের অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে, ঘাত প্রতিঘাত সয়ে
ঠিক এইক্ষণে এসে আজ মনে হয়
অপ্রাপ্তি যা কিছু আছে
কম বেশি যতটুকু বেঁচে
অধরাই থাক।
আর জীবন?
গীতবিতানের ধারায় ধারায় পূর্ণতা পাক, পূর্ণতা পাক ।।