কালবোশেখীর ঝড় উঠেছে আয় রে ছুটে আয়
আমগুলি সব পড়লো ঝড়ে ছেলেরা সব ধায়।
কালবোশেখীর ঝড় যে আসে চৈত্র-ফাগুন এলে
বৈশাখে ঝড় হয় না, তবু কালবৈশাখীই বলে।
শিবের জটার মতন কাল- ভৈরব মেঘ আসে
মাঝে মাঝে বিজলীছটা দাঁত খিঁচিয়ে হাসে।
কড়্ কড়্ কড়্-গড়্ গড়্ গড়্ যুদ্ধ ভেরী বাজে
মা বলতেন, দেবতা-অসুর সাজছে যুদ্ধ সাজে।
আকাশটা আজ দৈত্য সেজে আসছে যেন তেড়ে
ধূলোর ঝড়ে চোখ যে কানা, দে ,ওরে ছুট, দে রে।
রাত্রি বুঝি এলো নেমে, কেউ কোথ্থাও নাই
পাখিরা সব বাসায় ফেরে, বাচ্চা ডাকে মা’য়।
ওপারের ঐ গাঁয়ে দেখি মুষলধারা ঝরে
গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালি সবাই ভয়ে মরে।
রাখাল গরু নিয়ে ফেরে মাথায় বড় ছাতি
হাওয়ার বেগে উড়ে পালায়, বাড়ে ঝড়ের গতি।
ময়না টিয়া, ডাহুক-ডাহুকী ভিজে ডালে বসে
ব্যাঙরা ভাবে বরষা এলো ডাকে তারা কষে।
তালগাছটা উথালপাথাল উড়বে যেন মেঘে
ঝড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুলতে থাকে রেগে।
আমের মুকুল, জামের মুকুল, সব যে ঝরে পড়ে
রাস্তা-ঘাটে আবর্জনা, গাছের ডালে ভরে।
কালো মেঘের গুমর দেখে বকনা বাছুর হাঁকে
থাকবে না আর বাইরে তারা গৃহস্থকে ডাকে।
মা-ঠাকুমা দুগ্গা বলে রামনাম জপ করে,
বাইরে কোথাও যাস্ না বলে হাতটি চেপে ধরে।
সূয্যিমামা মেঘের ভয়ে ডুব দিয়ে দেয় যেন
সন্ধ্যে হতে অনেক দেরী রাত্রি হলো কেন?
চিলে-কোঠায় বসে বসে ঝড়ের মাতন দেখি,
ওদের বাড়ির টিনের চালটা উড়ছে কেন? একি?
লোডশেডিং-এর ঠ্যালায় মায়ের ওষ্ঠাগত প্রাণ
রান্না-ঘরে লম্ফ জ্বেলে করছেন আনচান।
বাবা বলেন, “কি করছো?, চা দিয়ে যাও, ওগো”
আমি বলি, “গরম পকোড়া ভাজছো নাকি মা গো”?
শান্ত হলো রুদ্রমূর্তি, প্রলয় নাচন নেচে
একটু পরেই সূয্যিমামা উঠলেন যে সেজে।
বাল্যকালের ঝড়ের দিনের কথা মনে পড়ে
শিশুরা এখন বসে থাকে মোবাইলটি ধরে।।