আমার মনের ঘরের চালরাস্তায় মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে একটা রঙীন ক্যানভাস।
ছড়ানো ছেটানো কিছু আটপৌঢ়ে জীবন। কিছু ছোটখাটো চাওয়ার স্পর্ধায় বুঁদ হয়ে থাকা সকাল বিকেল, দুপুর এবং রাত্রি।
কাকভোরে মাথা উঁচু এক কুহকের অহরহ ডাকে আমার হাতের গয়না গুলো টুং টাং শব্দে গান গায়। সাবধানী আড়মোড়ায় জেগে ওঠে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। ঘুম ঘুম চোখে হিসেবী যাপনের দৌড়ে মাটিতে শরীর ফেলে আমি তখন ছুটে যাই নতুন সূর্যের দেশে।
গায়ে মাখি আলো, উষ্ণতায় ভরে দিই উদ্দাম ব্যস্ততা।
আমার স্বপ্নের প্রজাপতি গুলো রঙীন আলোর ঝাড়বাতি হয়ে সাজিয়ে তোলে রাত্রির অধ্যায়।মাঝে মাঝে ক্লান্তির শরীরে কল্পনায় আঁকতে থাকি ভালোবাসার সাতরঙ। শূন্য খাতার পাতায় পাতায় ভরে ওঠে সুখলতার বিস্তীর্ণ শাখাপ্রশাখা।
অদূরেই দেখি অকাতর ঘুমে নিমজ্জিত তুমি। আমার চোখে অনুরাগ, ঠোঁটে প্রশ্রয়ের হাসি। চোখের নিচের ছোপ ছোপ কালো দাগগুলো কাজলের কাহিনী হয়ে রাত জাগে জানলার ফোকর দেখে।
কত সাধ, কত সাধনার সাক্ষী ওই রাতজাগা জানলার পাল্লা, পাঁচ ছয় সিক, দু একটা টিকটিকি আর জোনাকির আলো।
এবার ওরা ঘুমোক। ঘুমপাড়ানিয়া গানের সুরে সুরে ওরা এবার ঢলে পড়ুক ঘুমের দেশে, তৃপ্তিতে আমার ক্যনভাসটাও নাহয় আস্তে আস্তে জীবন্ত হয়ে উঠুক।
দ্বিপ্রহরের নিত্যাচার শেষে আমি পা মেলে দিই উঠোনে। মনের মতোই রাঙা হয়ে ওঠে দুখানি পা। এয়োস্ত্রীর পাঁচালি শুনতে শুনতে কল্পনায় ভাসিয়ে দিই বেখেয়ালী মন। চোখ চলে যায় দূরে, আলপথ, মেঠো সুর, তালসারির শেষে যেখানে শহুরে কায়দার অধিবেশন বসে রোজ নিয়মমাফিক, ঠিক সেখানেই।
আমার আকুলতা শূন্যতার বাতাসে যেন আশার বার্তা হয়ে চক্কর কাটে।
সন্ধ্যে হয়। আমার উঠোন পবিত্রতার আল্পনায় রহস্যাবৃত। চোখের আলোয় প্রদীপ জ্বালিয়ে অন্ধকারের নাগপাশ থেকে ছিনিয়ে আনি সাংসারিক কিছু তুচ্ছাতিতুচ্ছ সুখ আর সাচ্ছন্দ্য। তৃপ্ততার চুম্বনে জেগে ওঠে ঝিমিয়ে পড়া পায়ের নুপুর। পাড়া জাগিয়ে হঠাৎ তোমার আগমনী সুখে কেঁপে ওঠে হাত, বিশ্বাসঘাতী হয় অসাবধানী পা। চোখ বুজবার আগেই নিজেকে আবদ্ধ দেখি তোমার আবেগী আলিঙ্গনে।
বুক চিরে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাসে কেঁপে ওঠে কল্পনার ক্যানভাস। আমি অভ্যস্ত হাতে মাপতে থাকি জীবনের না পাওয়া স্বপ্ন গুলোর ভার ঠিক কতটা।
দেখি, মনের জোরে জয় করবার তাগিদে ছুটতে ছুটতে আমি ঠিক কতটা পথ পার হয়ে এসেছি।
আরও কতটুকু পথই বা বাকি ওই দূরের দিগন্তরেখা ছুঁ’তে ।।