আমি কুন্তী, চিনেছো আমাকে?
সেই যে, আজ থেকে বহুদিন আগে,
মহাভারতের কালে, ভারতেরই নারী,
গৃহবধূ ছিলাম আমি হস্তিনা নগরে
পঞ্চসতীর মাঝে আমি একজন
আমি পাণ্ডব জননী, আমিই সে পৃথা।
সেই কবে কোন কালে আশ্রিতা ছিলাম
মহারাজ কুন্তীভোজের রাজ অন্তঃপুরে
কন্যা রূপে কুন্তীভোজ পেলেছিল মোরে
কত বা বয়স, ঋতুমতীকাল সবে করে গেছি পার,
তখনো পুতুল খেলার মত মন, পুতুলেরই মত।
এরই মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে গেছি,
পালক পিতার অনুরোধে।
সূর্যসম মহামতি দুর্বাসা, এলেন রাজ সমীপে।
একে মুনি, চিরকুমার, অধিকার পাওয়াটাই তার
অধিকার।
সেবায় সন্তুষ্ট না হন যদি তিনি,
রসাতলে যাবে রাজ্যপাট, ধন, প্রাণ, সব যাবে
ধ্বংসের খেরোর খাতায়।
মনে মনে ক্ষতির হিসাব কষে,
পিতা মোরে পাঠালেন
কুকথায় যশস্বী দুর্বাসার কাছে,
সেবা দিয়ে শান্ত করি যাতে।
দোর্দণ্ড প্রতাপ, সূর্যসম তেজ ধরে, মননে ও দেহে,
লালসার লোল রসে ভিজে গেল সমস্ত শরীর,
সেবায় নিযুক্ত থাকা কন্যাসম সেই কুমারীর।
ভয়ের আবহে, বিড়াল যেমন তার শিকারের সাথে
খেলে যায় অনেক সময়…
প্রাণ ভয়ে ভীত সে শিকার
কৌতূহলে ভেবে থাকে, শিকারীর হাত থেকে বুঝি
নিস্তার পাওয়ার সময় হোলো এই বেলা,
সেই কৌতুহলে যতবার ছুটে যাই জীবনের দিকে, ততবারই থাবার থাবায় পুনরায় প্রাণ ভীত হয়।
মত্ত হাতীর মত কোমল কমল দল ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে,
সূর্য্য স্পর্শ করে অসূর্য্যস্পর্শা এই নিখাদ শরীর,
তারপর ফেলে যায় চির মনানল, দুশ্চিন্তার মাঝে।
পরে থাকে ঝলসানো পুতুলের মন।
দিন যায়, রাত যায়, ঘুম যায়, চিন্তা থাকে শুধু
প্রানের ভিতর প্রাণ রেখে যায়, দেবতার দান।
একে যদি প্রেম বলো, বলো একে দেবতার দান,
ধর্ষণের সংজ্ঞা তবে কি?
প্রথম ধর্ষিতা গর্ভে প্রথম সে জারজ সন্তান।
কুমারী মেয়ের গর্ভে বেড়ে চলে লালসার ভ্রূণ।
অপমান বেড়ে চলে শম্বুক গতিতে জরায়ু আঁধারে।
কুরুযুদ্ধের তরে, বপিত হোলো প্রথম এ বীজ ।।