বেশ কিছু বছর হলো পেরিয়ে এসেছি
স্কুলের সেই ছকে বাঁধা জীবন,
মাঝে মাঝেই মনে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে
ঐ স্বর্ণময় দিনের স্মৃতি ।
সবার মাঝে আলাদা করে তোমাকেই আজও খুব বেশি মনে পড়ে,
তোমার ঠিকানা ছিল সেই শেষ বেঞ্চের
ঐ একদম কোনের জায়গাটা।
আমার মনে পড়ে ,
এক বছরের সিনিয়র ছিলে তুমি।
প্রতি বছর পরিক্ষায় ভালো ফলাফল করি আর নাই করি ,মাথায় থাকতো পাশ করতেই হবে ।
পাশ করেছি ও।
সবাই যখন ক্লাসরুমে প্রথমের বেঞ্চ দখলের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতো ,
আমি চুপিচুপি তোমার সেই জায়গায় গিয়ে বসতাম ।
আর মনে মনে এই ভেবে শিউরে উঠতাম ,
তোমার শরীরে মিলেমিশে গেছে এই শরীর।
একাত্মা হয়ে গেছে দুই শরীরের দূরত্ব।
পরে বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা ছাঁইচাপা আগুনের মতো।
শরীর মন পুড়ে ভষ্মে পরিনত হয় কিন্তু হারানোর ভয় চেপে বসে থাকে বুকে।
তুমি কোনো দিন বোঝোনি,
কেউ তোমায় খুব সঙ্গপনে ভালোবাসে।
যে বছর তোমার স্কুলের শেষ হলো ,
তুমি ভালো জীবন গড়তে আমার সীমান্ত ছাড়িয়ে উড়ান ভরলে অজানার।
আমি কেঁদে ছিলাম ,
তোমার ঐ জায়গা আমি আর নিতে পারবো না ভেবে,
এখন থেকে ঐ জায়গা অজানা কেউ পূরণ করবে।
আমি পরের বছর ও তোমার বসা শেষ বেঞ্চে শেষ বার বসেছিলাম।
তোমার বসার ঐ জায়গা টা আমার কাছে মন্দিরের মতোই পবিত্র শান্তির জায়গা মনে হতো।
স্কুল পাশ করতেই বাড়ির লোকজন ভালো পাত্র দেখে বিয়ের কথা বলতে শুরু করেছে,
আমি উচ্চশিক্ষা লাভের জেদ ধরে ছিলাম। সবাই পরে আমার জেদের কাছ হেরে ছিল
আর আমি হেরে ছিলাম তুমি নামক অদৃশ্য শক্তির কাছে।
আজ অনেক বছর হলো যখন কাজের চাপ আর হাজার কাজের ব্যাস্ততা,আর মন খারাপে ভীষন একা,
তখন আবার হঠাৎ করেই তুমি ফিরে এলে ,
একা নও, পরিপূর্ণ সংসার নিয়ে।
এতো অপেক্ষা,
এতো দিন একাকী দিন যাপনের রুপকথারা চুপ ছিল বুকের গভীরে।
আজ আবার নতুন করে যন্ত্রণার প্রবল তুফান উঠেছিল মনে।
কোনো দিন তোমাকে স্বহস্তে ছুঁয়ে দেখা হয়নি,
আজ আবার বহু দিন পর সেই স্কুলের সামনে।
সব দ্বিধা ভুলে ধীরে ধীরে আবার গিয়ে বসেছিলাম সেই শেষ বেঞ্চের একদম কোনের জায়গায়।
দুহাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছি ,
গন্ধ মেখেছি স্তরে স্তরে ধূলো জমে থাকা সেই বেঞ্চের,
শ্বাস নিয়েছি প্রান ভরে।
তোলা থাক ভালোবাসা মনের গভীরে চিরকাল,
তোমার অজানা হয়ে ।।