আজ তিনদিন হলো হিমঘরের এক অন্ধকূপে রয়েছি আমি
কিছু লোক বলাবলি করছে, ৩১৯ নম্বর টা কি শনাক্ত হলো??
কেউ কেউ একটু মাথা নেড়ে ,নাকে কাপড় দিয়ে সরে গেল
আচ্ছা, আমি কিন্তু দিব্যি মনে করতে পারছি সব মুখগুলো।
মনে পরে, ছোটবেলায় মা একটা কালো টিপ দিত কপালে
কোকড়ানো চুলগুলো মুখ থেকে সরাতো খুব ধীরে যত্ন করে,
পাশের বাড়ির কাকিমারা হেসে বলতো,’লক্ষী মেয়ে তোমার’
বড়ো জেঠিমা বলতো, ‘তবে বেশি দিন রাখা যাবে না ঘরে’!
যেমন মেয়ের রূপ, তেমনই অতি লক্ষ্মীমন্ত তার চালচলন
ডাগর চোখ মেলে আমি অবাক হয়ে শুনতুম সে কথা,
মা যেন কেমন বিষন্ন হয়ে যেত সবার সে সব কথা শুনে
কাছে টেনে বলতো, ‘কেমন করে সইবো তুই না থাকার ব্যথা’?
সবার আদরে, স্নেহে ছোট্ট বালিকা শরীর খানি বাড়তে বাড়তে
একদিন হয়ে উঠেছিল চন্দ্রকলার মতো পূর্ণ যৌবনবতী,
নতুন পোশাকে অপরূপা হয়ে বাবা দাদার হাতটি ধরে
বর্ষবরণ দেখছিলাম তখন একটু বেশিই হবে রাত্রি।
ভিড়ের মাঝে হঠাৎ আমার হাতে পড়লো ভীষণ জোরে টান
দেখি বাবা দাদা নয় তো তারা ভয়ানক পশুর মত লোক,
চিৎকারে ডাক দিলাম ছেড়ে ‘বাঁচাও গো কেউ আমায়
আমি না থাকলে মা যে আমার পাবে যে ভীষণ শোক’,
কেউ এলো না, শুনলো না কেউ আমার সেই চিৎকার
বর্ষবরণের কোলাহলে সকল আর্তচিৎকার গেল ঢেকে
শয়তানগুলো হিংস্রনখে খুবলে খেলো শরীরটাকে
বললো শেষে ‘কি হবে এই প্রমাণটাকে বাঁচিয়ে রেখে’?
তখন আমি রক্ত স্রোতে, গিয়েছি ভেসে গোটা শরীর ময়
দেখছি ওরা আগুন জ্বালালো গোপন যোনী দ্বারে,
পুড়েছি আমি প্রবল ব্যথায়, ঘৃণায় ,যন্ত্রণায় হয়ে একাকার
মনে মনে করেছি শপথ দেখিস আবার ঠিক আসবো ফিরে।
সেই জনমে লক্ষ্মী নয় মা, জেনে রাখিস মহাকালীর রূপে
আসবো আমি দুহাত ভরে যুদ্ধ জয়ের সকল অস্ত্র লয়ে,
ডাকিস আমায় কালী বলে, যাতে শক্তি বাড়ে মনে
নারী শুধু রূপে নয়, বাঁচবে সে মা,প্রতিবাদের সাহস নিয়ে।।