এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৮ জানুয়ারী : আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসক ‘অভয়া’র ধর্ষণ-হত্যার কান্ডে টালা থানার সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করল শিয়ালদহ আদালত । সঞ্জয় রায়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার(বিএনএস) ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের সময় প্রাণঘাতী হামলা),১০৩(১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় । কিন্তু দোষী সব্যস্ত করার পর সঞ্জয় চিৎকার করে যা বলেছে তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন মৃতা ‘অভয়া’র মা-বাবা ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সঞ্জয় রায় চিৎকার বলেছে,’আমি নির্দোষ । আমি যদি এই অপরাধ করি তাহলে আমার গলায় যে রুদ্রাক্ষের মালা ছিল, তা ছিঁড়ল না কেন ? আমাকে ফাঁসানো হয়েছে । পুলিশ অফিসাররা আমাকে যা বলেছে, আমি তাই করেছি । যারা করেছে তাদের কেন ছাড়া হল? আমার কোনও দোষ নেই। সবাই মিলে করেছে।’ তখন বিচারক বলেন,’সিবিআইয়ের তদন্ত অনুযায়ী আপনিই দোষী, সোমবার আপনার কথা শুনব’৷’ সোমবারই আদালত জানাবে যে সঞ্জয়ের শাস্তি কী হবে-মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন ।
এদিকে সঞ্জয়ের এই দাবির পর প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে সেই নৃশংস বর্বরোচিত ধর্ষণ- হত্যাকাণ্ড কি তার পক্ষে একা করা সম্ভব ? সঞ্জয় রায় কি একাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে নাকি সঞ্জয়ের সঙ্গে ছিল আরও কেউ ? একই প্রশ্ন তুলেছেন নিহত ‘অভয়া’র মা-বাবাও । তাঁরাও আজ আদালতে হাজির ছিলেন । তবে আদালত শুরুর আগের দিন নিহতের মা সন্দেহ প্রকাশ করে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছিলেন, সঞ্জয় (রায়) দোষী, এবং আগামীকাল তার বিরুদ্ধে রায় হবে। কিন্তু অন্য অপরাধীদের কি হবে যারা এখনও ধরা পড়েনি? আমি তাদের অবাধে ঘুরে বেড়াতে দেখতে পাচ্ছি। আমি তাদের হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। তাই, তদন্ত অর্ধ সম্পূর্ণ । হয়ে আছে ।’ মা আরও উল্লেখ করেছেন যে জৈবিক প্রমাণ সঞ্জয়ের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, তবে অপরাধের সাথে জড়িত অন্যদের রক্ষা করছে কর্তৃপক্ষ ।’ তিনি বলেছেন,’সমস্ত প্রমাণ হয় হারিয়ে গেছে বা লোপাট করে দেওয়া হয়েছে। তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল যখন অপরাধস্থল পরিদর্শন করেছিলেন তখন বিপুল সংখ্যক মানুষ সেমিনার হলে উপস্থিত ছিলেন। এটিকে মেছোবাজারের মতো দেখাচ্ছিল । অপরাধের জড়িত সকলের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে ।’ তিনি তার মেয়ের হত্যাকাণ্ডে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন, প্রশ্ন করেছেন কেন তার মেয়েকে এমনভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ কিছু লুকিয়ে রাখতে চেয়েছে কিনা তা তিনি উদঘাটনের দাবি তুলেছেন ।
পাশাপাশি আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যায় সঞ্জয় ছাড়াও একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল বলে অনুমান করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । আজ সকালে তিনি এই বিষয়ে এএনআইকে বলেছেন,’আমরা আশাবাদী যে বিচার বিভাগ কঠোর পদক্ষেপ নেবে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত, যাতে এই ধরনের ঘটনা কখনও না ঘটে৷ তবে আমরা সন্দেহ করি যে এটি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির কাজ নয় এবং অনেক লোক জড়িত ছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ , এবং রাজ্য পুলিশও জড়িত । আমরা সিবিআইকে এই মামলাটি আরও খতিয়ে দেখার অনুরোধ করছি এবং যারা অপরাধ করেছে প্রমাণ লুকানোর চেষ্টা করেছে তাদেরও শাস্তি দেওয়া উচিত ।’।
গত বছরের ৯ অগস্ট আরজি করের সেমিনার হল থেকে ‘অভয়া’র ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। দু’পা ধরে চিড়ে দেওয়ার চেষ্টা এবং শরীরের একাধিক ক্ষতচিহ্ন থাকার কথা শুনে সাধারণ মানুষ প্রথম থেকেই এই ঘটনায় একাধিক জনের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছিল৷ যদিও দেহ উদ্ধারের প্রায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআইকে । শিয়ালদা কোর্টে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। যদিও সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও একরাশ প্রশ্ন উঠছে । প্রশ্ন উঠেছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ,টালা থানার ওসি এবং তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের ভূমিকা নিয়েও ।
যদিও আজ শনিবার সঞ্জয় রাইকে দোষীসাব্যস্ত করেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। আগামী সোমবার দুপুরে সাজা ঘোষণা করবেন। বিচারক জানিয়েছেন, সর্বনিম্ন ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে আর সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।।