দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২০ জুলাই : দীর্ঘদিন বৃষ্টির দেখা নেই । এদিকে যত দিন যাচ্ছে আমন ধানের বীজ পাতার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে । তাই প্রাচীন রীতি মেনে বৃষ্টিপাতের কামনায় ব্যাঙের বিয়ে দিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার বরমপুর গ্রামবাসী । গ্রামের শিবমন্দিরে রীতিমতো শাস্ত্রীয় বিধি মতে বিয়ে দেওয়া হল ব্যাঙ যুগলের । ছিল প্রীতিভোজের আয়োজন । ব্যাঙের বিয়ে ঘিরে বুধবার দিনভর চরম উন্মাদনার মধ্যে কাটালেন বরমপুর গ্রামের আপামর মানুষ ।
কাটোয়ার বরমপুর গ্রামের বাসিন্দারা মূলত কৃষিজীবি । গ্রামবাসী মানবচন্দ্র সাহা, অসীম চক্রবর্তীরা বলেন, ‘চাষবাসই আমাদের পেশা । সেই উপার্জনেই সারাবছর আমাদের সংসার চালাই । এদিকে শ্রাবন মাস চলে এলেও এখনও বৃষ্টির দেখা নেই । জমি ফেটে গেছে । যত দিন যাচ্ছে বীজ রোপনের সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছে । চাষ না হলে খাবো কি ? তাই বৃষ্টির কামনায় এদিন ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি ।’
তাঁরা জানান, ব্যাঙের বিয়ের জন্য আগের দিন দুটো কোলা ব্যাঙ ধরে রেখেছিলেন । গ্রামের শিবতলায় বসেছিল বিয়ের আসর । গৃহবধু সন্ধ্যারানী সাহা কন্যাপক্ষের দায়িত্ব পালন করছিলেন । পাত্রপক্ষের দায়িত্বে ছিলেন গৃহবধু চম্পাবতী সাহা । যথা সময়ে তাঁরা পাত্রপাত্রীকে শিবতলায় আনেন । তার আগেই ছাদনা তলায় অপেক্ষা করছিলেন পুরোহিত মলয় চক্রবর্তী ।
পাত্রপাত্রী আসতেই তিনি মন্ত্রোচ্চারণ শুরু করেন, ‘যদেতৎ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম। যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব ।’ এরপর হলুদ বাটা, সুতো, রজনীগন্ধার মালা,মালাবদল কোনো আচারই বাকি ছিল না । বিয়ের শেষে গ্রামবাসীদের জন্য ছিল ভূড়ি ভোজের আয়োজন । মেনুতে ছিল লুচি, পোলাও, সাদাভাত, ডাল, তরকারি, শাকভাজা, মাছ,চাটনি, পাঁপড়, দই,মিষ্টি প্রভৃতি ।
কিন্তু বিয়ের পর ব্যাঙ দম্পতির কি হবে ? বিয়ের দিনে কি মেনু ছিল তাদের জন্য ? গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন,পুরোহিতের বিধান অনুযায়ী ব্যাঙ দম্পতিকে বাসরঘরে দু’দিন রাখা হবে । তারপর মাঠে ছেড়ে দেওয়া হবে । এই দু’দিন তাদের জন্য বিশেষ খাবারেরও আয়োজন করা হয়েছে । খাবারের তালিকায় রয়েছে,আরশোলা, গঙ্গা ফড়িং প্রভৃতি । টাটকা মুরগির মাংসের টুকরো ব্যাঙ দম্পতি পছন্দ করে কিনা সেটাও চেষ্টা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা ।।