এইদিন ওয়েবডেস্ক,শিলিগুড়ি,০৬ অক্টোবর : শনিবার রাতে প্রবল বর্ষণ এবং ভূমিধসের জেরে সমগ্র উত্তরবঙ্গে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জনে । সড়কপথ ও সেতু ভেঙে দেশ ও রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কার্সিয়াং ও কালিম্পংয়ের বেশ কিছু এলাকা । এদিকে রবিবার রবিবার বিকেল থেকে রাত অব্দি কলকাতার রেডরোডে উপস্থিতি ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা৷ বিশেষ করে মমতাকে সঙ্গীতের তালে নৃত্য করতে দেখা গেছে । কখনো দেখা গেছে ভায়োলিন বাজাতে । এমনকি তার আগে তিনি একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছিলেন যে কার্নিভাল “গুরুত্বপূর্ণ” । যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
মমতা ব্যানার্জির ভায়োলিন বাজানোর ছবি পোস্ট করে বিজেপি নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘নিরোকে না দেখার আফসোস ? বাজারে এসে গেছে নিরোর নতুন ভার্সন । দুচোখ ভরে দেখুন আর অন্যদেরও দেখার সুযোগ করে দিন, “যাতে চোখ খোলে” ।’ কার্নিভালে মমতার নৃত্য ও উত্তরবঙ্গের ধ্বংসের ভিডিও সংযুক্ত করে বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি লিখেছেন, ‘কার্নিভাল আগে । উত্তরবঙ্গ পরে। সৌজন্যে মাননীয়া।’
জানা গেছে,প্রবল বৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গের বালাসন, তিস্তা, তোর্ষা, জলঢাকা, রায়ডাক, সংকোশ সহ সমস্ত পাহাড়ি নদীর জলস্তর ব্যাপক বেড়ে গেছে । প্লাবিত হয়েছে মিরিক, দুধিয়া, সুখিয়াপোখরি, নাগরাকাটা, বানারহাট, রামসাই এলাকা । দুধিয়ায় লোহার সেতু ভেঙে দার্জিলিং, মিরিক সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মিরিকে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। নাগরাকাটার বামনডাঙ্গা চা বাগানের মডেল ভিলেজে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে । মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে সুখিয়াপোখরি এলাকা থেকেও ।
উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় নেমেছে ধস। দুধিয়ায় লোহার সেতু ভেঙে দার্জিলিং, মিরিক সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, কোচবিহার, দিনহাটার বিভিন্ন অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
টানা বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে আলিপুরদুয়ার জেলাও। বক্সা টাইগার রিজার্ভের সমস্ত সাফারি বাতিল করা হয়েছে। শালকুমারহাটের শিসামারা নদীর বাঁধ ভেঙে হুহু করে জল ঢুকছে নেপালিবস্তি, নতুনপাড়া, জলদাপাড়া বাজারে। প্রায় এক হাজার বাসিন্দা জলবন্দি। কামাখ্যাগুড়িতে একাধিক বাড়ি জলমগ্ন। দুর্যোগের জেরে বহু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। প্রশাসন পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। এর পাশাপাশি মহানন্দা নদীতে প্রবল জলস্ফীতিতে গতকাল রাত থেকেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে শিলিগুড়ি সংলগ্ন পোড়াঝাড় এলাকা । জলের তোড়ে এই এলাকায় ভেসে যায় অসংখ্য ঘরবাড়ি।”
দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্ত দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার পাশাপাশি তরাই ও ডুয়ার্সে বন্যাকে “রাজ্যস্ত বিপর্যয়” ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে গতকাল(৫ অক্টোবর) একটা চিঠি লিখেছেন৷ চিঠিটি এক্স-এ পোস্ট করে তিনি লিখেছেন,’আজ, আমি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা অফিসিয়ালকে চিঠি লিখে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় সাম্প্রতিক ভূমিধসের পাশাপাশি তরাই ও ডুয়ার্সে বন্যাকে “রাজ্যস্ত বিপর্যয়” ঘোষণা করার অনুরোধ জানিয়েছি। আমার আবেদনটি ২০২৫ সালের ৪ ও ৫ অক্টোবর রাতে প্রবল বৃষ্টিপাতের প্রতিক্রিয়ায়, যা দার্জিলিং পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্স অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করেছে। আমি উল্লেখযোগ্য প্রাণহানি, রাস্তাঘাট ও সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ক্ষতি এবং কৃষিক্ষেত্র, বসতবাড়ি এবং জীবিকার ধ্বংসের কথা তুলে ধরেছি।
ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলির জন্য অতিরিক্ত সম্পদের ব্যবস্থা করার জন্য, আমাদের অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহিত করার জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। আমি ২০২৩ সালের তিস্তা বন্যাকে “দুর্যোগ” ঘোষণা করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ব্যর্থতার বিষয়েও আমার উদ্বেগ প্রকাশ করেছি, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। আমি সমস্ত ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং আরও সহায়তা প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছি।আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্তদের সকল ত্রাণ, সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সহযোগিতা করে সকল অবকাঠামোর সময়মত পুনর্গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করবেন।’
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরকারের তীব্র সমালোচনা করে রাজ্য পুলিশের একটা টুইট ট্যাগ করে লিখেছেন,’মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রতি অবহেলার ও বিমাতৃসুলভ আচরণের আরেকটা জ্বলন্ত উদাহরণ ! উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা ও ধসের কারণে কোচবিহার থেকে কালিম্পং পর্যন্ত অন্তত ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। তারা বাঁধের ওপর গবাদি পশু নিয়ে আতঙ্কে ও আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন, খাবার-জলের অভাবে দুর্ভোগের শেষ নেই। কিন্তু এই সরকারের প্রশাসনের চোখে উত্তরবঙ্গের মানুষের কোনো দাম নেই। তাই দুর্যোগের সময়ে কার্নিভালের প্রাধান্য বেশি।
পর্যটকদের জন্য হেল্পলাইন নম্বর চালু করা অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ, কিন্তু একই সাথে বাধ্য হয়ে জানতে চাইছি স্থানীয়দের জন্য কোনো হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে কি? তারা কী দোষ করলেন? যদি করা হয় সেটাও প্রকাশ করুন। নাকি মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভালের উৎসব উদযাপন, গানের ছন্দে নৃত্য ইত্যাদি শেষ হলে তখন এসব বিষয়ে ভাবার সময় হবে?এখনো পর্যন্ত ২১ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আর কত মৃত্যু হলে এই সরকারের হুঁশ ফিরবে?
ওই টুইটে রাজ্য পুলিশ লিখেছিল, ‘পর্যটকদের সাহায্যে দার্জিলিং পুলিশের হটলাইন। গত রাতে ভারী বৃষ্টির কারণে দার্জিলিং-এর কিছু রাস্তায় ধস নেমেছে, যার ফলে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। রাস্তা পরিষ্কারের কাজ চলছে এবং শীঘ্রই স্বাভাবিক যান চলাচল শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।যে সব পর্যটক আটকে পড়েছেন বা সহায়তার প্রয়োজন, তাঁরা দার্জিলিং পুলিশ কন্ট্রোল রুমে +৯১ ৯১৪৭৮ ৮৯০৭৮ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।।