প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ জানুয়ারী : জঙ্গল ছেড়ে গ্রামে ঢুকে পড়ছে বাঘ। তা নিয়ে ত্রস্ত বঙ্গের কুলতলি এলাকা।তবে এর ঠিক উল্টো ছবি এখন ধরা পড়ছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতার ও আউশগ্রামে।বাঘের আতঙ্ক মুক্ত এখানকার বাসিন্দারা এখন মতেছে জাতীয় পাখি মূরর নিয়ে।গত তিন চার দিন হল ভাতারের রতনপুর ও বামুনারা এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে একটি ময়ূর ও একটি ময়ূরী।সকালে দরজা খুললেই দর্শন মিলছে সেই ময়ূর জোড়ার।আর তা নিয়েই দুই এলাকার আট থেকে আশি, সকলেই আনন্দে আত্মহারা। ময়ূর জোড়ার খাতির যত্নেও খামতি রাখছেন না গ্রামবাসীরা।ঘটনা জানার পর নড়ে চড়ে বসেছে বন দফতর।শুরু হয়েছে সচেতনতা প্রচার।
ভাতারের বামুনাড়া হাটতলা এলাকার বাসিন্দাদের কথায় ,তিন-চার দিন আগে শীতের বিকালে বামুনারা হাটতলায় বেশকিছু লোকজন দাঁড়িয়ে গল্পগুজব করছিলেন। হঠাৎই তাঁরা দেখেন,একদল কাক কিছু একটা দেখে অত্যন্ত কর্কশ ভাবে ডাক পাড়ছে ওই গ্রামবাসী সামনে থাকা গাছের উপরের দিকে তাকাতেই তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়।তাঁরা দেখেন হাটতলায় থাকা তেঁতুল গাছের মগ ডালে বসে আছে একজোড়া ময়ূর। সেই ময়ূয়দের দেখেই কাকগুলি কর্কশ ডাক পাড়ছে। কাকেদের তাড়া খেয়ে ময়ূর দুটি তেঁতুল গাছটি থেকে উড়ে গিয়ে কিছুটা দূরের অন্য একটি গাছে গিয়ে বসে। তার পর থেকে ময়ূর ও ময়ূরী ভাতারের বামুনাড়া ও রতনপুর এলাকার মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে।
জঙ্গলের অতিথির গ্রামে আগমন নিয়ে বাসিন্দারা আনন্দে আত্মহারা হলেও আতঙ্কও তাদের পিছু তাড়া করে বেড়াচ্ছে। মাংসের লোভে কেউ যাতে ময়ূর ও ময়ূরীকে হত্যা না করে দেয় ,সেদিকেই এখন কড়া নজর রেখে চলেছেন গ্রামের যুবকরা। মূলত তাঁরাই ময়ূর ও ময়ূরীকে আগলে রেখেছে। বনদফতরের বর্ধমান ডিভিশনের আধিকারিক সঞ্চিতা শর্মা বলেন,” ময়ূর গুলির বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।
জঙ্গলমহল হিসাবে পরিচিত জেলার আউশগ্রাম। এখানকার জঙ্গলমহলে দলে দলে ময়ূরের দেখা মিলে। বিগত চার- পাঁচ বছর ধরে আউশগ্রামের আদুরিয়া ও তার সংলগ্ন জঙ্গল আবৃত গ্রামগুলিতে ময়ূরের দল দেখা যাচ্ছে।আউশগ্রাম ছাড়াও ভাতারের পশ্চিমাংশে রয়েছে ওড়গ্রাম জঙ্গল। ভাতারের বামুনাড়া গ্রাম থেকে ওড়গ্রাম জঙ্গলের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মত হবে।আর ওড়গ্রাম জঙ্গল থেকে আউশগ্রামের আদুরিয়া জঙ্গলের দূরত্ব হবে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার।
আউশগ্রামের বাসিন্দাদের কথায় জানা যায়, খাবারের সন্ধানে গত বছরে আদুরিয়ার জঙ্গল ছেড়ে একদল ময়ূরকে মঙ্গলকোট এলাকায় গিয়ে ডেরা বাঁধতে দেখা গিয়েছিল।এবছর মঙ্গলকোট এলাকায় আর ময়ূর দেখা যাচ্ছে না।তার বদলে এখন শীতের মরশুমে ময়ূর দেখা যাচ্ছো ভাতারে বামুনাড়া ও রতনপুর গ্রামে।এর আগে গতবছর জুন মাসে জেলার জামালপুর ব্লকে আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মীরেপাড়া গ্রামে ময়ূর দেখা গিয়েছিল।জঙ্গল ছেড়ে বারে বারে লোকালয়ে ময়ূর চলে আসার বিষয়টি বন কর্মদের বিশেষ ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।
এই এলাকার বাসিন্দা সৌরিন হাটি, রাহুল বর্মনরা বলেন,“গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ হঠাৎ বামুনাড়া হাটতলার কাছে একটি গাছে দুটি ময়ূর এসে বসে। কাকের তাড়া খেয়ে ময়ূরগুলি বাবুপাড়া গ্রামের লোকালয়ে চলে আসে। এরপর থেকে গ্রামের ভিতর ও গ্রামের আশেপাশে আম বাগানে ময়ূর জোড়া ঘোরাঘুরি করছে। আমরা ভয়ে আছি মাংসের লোভে ময়ূর দুটিকে কেউ হত্যা না করে দেয়। সেজন্য আমরা ময়ূর গুলির উপর নজর রাখে যাচ্ছি।বনবিভাগেও খবর দিয়েছেন।“ অপর গ্রামবাসী মধুসূদন দে বলেন,” এতদিন চিড়িয়াখানায় বা ছবিতে জাতীর পাখি ময়ূর দেখেছি। আর এখন গ্রামে বসেই ময়ূর ময়ূরী দেখছি। এটা আমাদের কাছে ভীষণ ভাগ্যের ব্যাপার।”রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা রিপধ শেখ ও একই কথা জানিয়েছেন।
ওড়গ্রাম বন বিভাগের কর্মীদের ধারণা ,খাবারের সন্ধানেই হয়তো ময়ূর ময়ূরী আউশগ্রাম জঙ্গল থেকে ভাতারে চলে এসেছে। বনবিভাগ তাদের নিরাপদ এলাকায় পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।কেউ যাতে ময়ূর গুলির কোন ক্ষতি না করেন বা বিরক্ত না করেন তা নিয়ে বনদপ্তরের তরফে মাইকিং করে এলাকার মানুষদের সচেতন করা হচ্ছে। যাতে কোন ব্যক্তি ওই ময়ূরগুলির ক্ষতি না করে।।