প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ অক্টোবর : যাত্রীবাহী টোটোর সঙ্গে বালি বোঝাই লরির মুখোমাখি সংঘর্ষে মৃত্যু হল টোটোর চার আরোহীর । বুধবার দুপুরে ভয়াবহ এই পথ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানর বেলাড়ি গঞ্জ এলাকায় বর্ধমান- কালনা রোডের উপর । দুর্ঘটনার জেরে এদিন বর্ধমান কালনা রোডে ব্যাপক যানজট তৈরি হয় । খবর পেয়ে শক্তিগড় থানার পুলিশ দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে পৌছে মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে সড়কপথে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করে ।লক্ষ্মী পুজোর দিনে চারজনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে ।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতরা হলেন ভৈরব দাস (২৬), নির্মল চট্টোপাধ্যায় ওরফে সোনা (৪৫), অভিজিং পাল ওরফে গণেশ (৪৭)। এক মৃতর নাম ও পরিচয় এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা যায়নি ।মৃতদের মধ্যে ভৈরব দাস হলেন টোটো চালক । বাকিরা সকলেই কালনা গেট এলাকার বিভিন্ন পাড়ার বাসিন্দা । সকলেই নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য । কেউ বিক্রি করতেন লটারি টিকিট ,আর কারুর ছিল ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ।ময়নাতদন্তের জন্য এদিনই মৃতদেহ গুলি পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে। দুর্ঘটনার পরেই লরি ছেড়ে পালার চালক ও খালাসী । পুলিশ টোটো ও বালি বোঝাই লরি বাজেয়াপ্ত করে দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , টোটো চালক ভৈরব দাস তাঁর অ্যাজবেসটার্স চালার
একচিলতে ঘরে লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন করেছিলেন ।পরিবারের অন্য সদস্যরা এদিন বেলায় যখন পুজোর তোড়জোড়ে ব্যস্ত তখন ভৈরব তাঁর টোটো নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। বেলা ১১ টা নাগাদ ভৈরব ও এলাকার অপর তিনজন টোটোয় চেপে শক্তিগড় থানার বেলাড়ির একটি অন-শপ মদের দোকানে যান ।দুপুর ১টা নাগাদ সেখান থেকেই টোটোয় চেপে চারজন বর্ধমান – কালনা রোড ধরে কালনা গেটের দিকে ফিরছিলেন । পথে বৈকন্ঠপুর ১ পঞ্চায়েতের বেলাড়ি গঞ্জ এলাকায় বিপরিত দিক থেকে আসা একটি বালি বোঝাই লরির সঙ্গে টোটোর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।সংঘর্ষের পর টোটোটি সড়ক পথের উপরে উল্টে পড়ার সময়ে টোটোর আরোহীরা লরির চাকার নিচে ছিটকে পড়ে পিষ্ট হন ।টোটোটিও এক প্রকার দুমড়ে মূচড়ে যায় ।ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় টোটো চালক সহ টোটোর চার আরোহীর ।
প্রত্যক্ষদর্শী সুদীপ্ত কোনার ও বাসুদেব দত্ত জানিয়েছেন ,লরি চালকের কোন দোষ ছিল না।লরিটি স্বাভাবিক গতীতেই যাচ্ছিল । টোটো চালক সহ টোটোর সকল আরোহীরা গঞ্জ থেকে মদ খয়ে টোটোয় চেপে ফিরছিলেন ।অত্যধিক মদ খাওয়ার কারণে টোটোর চালক ও আরোহীরা সকলেই বেসামাল ছিলেন। সেই অবস্থায় টোটো চালক টোটো চালিয়ে নিয়ে যাবার সময়ে টোটোর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলেন না । টোটোটি রাস্তার এদিক ওদিক করতে করতে যাচ্ছিল। ওই সময়ে আচমকা টোটটি বিপরিত দিক থেকে আসা লরির সামনে চলে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে । সেই সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই টোটোর চার আরোহীর মৃত্যু হয় ।
টোটো চালক ভৈরব দাসের আত্মীয় সাগর দাস এদিন বলেন, ‘ভৈরব ছিল পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি । তাঁর রোজগারেই স্ত্রী, দুই শিশু সন্তান সহ পরিবারের সকলের জীবিকা নির্বাহ হত । ভৈরবের মৃত্যুতে তাঁর গোটা পরিবারটা অথৈ জলে পড়ে গেল ’। ভৈরবের স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী এদিন চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন ’,তিনি বাড়িতে লক্ষীপুজোর জোগাড়যান্তি করছিলেন । এক্ষুণি আসছি বলে তাঁর স্বামী টোটো নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন । আর তিনি বাড়ি ফিরলেন না’ । অপর এক মৃতর আত্মীয় প্রশেনজিৎ দাস একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন ,’ বেলাড়ি গঞ্জ এলাকার মদের দোকানটাই সব সর্বনাশের মূল কারন।’।