প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ আগষ্ট : র্যাগিং নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন।তবে ছাত্রদেরই র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।গড়ে তুলতে হবে সঙ্গবদ্ধ প্রতিরোধ।বুধবার পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া কলেজের ৭৫ তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে এসে এই কথাই বললেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার।পাশাপাশি তিনি এও বলেন , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৃশংস মানসিকতার এমন কাজ কেউ যাতে আর করতে না পারে তার জন্য যা যা করণীয় সেটা আমাদের সরকার করবে ।
কাটোয়া কলেজের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মন্ত্রী মশাই
যাদপুর বিশ্ববিদ্যাল নিয়ে যখন সরব তখন হেস্টেলের রাঁধুনিকে পাসআউট ছাত্রের হুমকি দেওয়া নিয়ে তোলপাড় পড়লেও “স্পিক টি নট“ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
র্যাগিংয়ের কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-মৃত্যু নিয়ে মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,“সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে
যাদবপুরে জোর করে আলাদা পরিবেশ তৈরি করা হয়। অনেক রকম অন্যায় কাজ হয়। যাঁরা সবসময়
ওইসব সমর্থন করে থাকেন তাঁরা আজ নিশ্চুপ ।
কিন্তু আমাদের সরকার কড়া মনোভাব নিয়েছে।
শোকার্ত ছাত্রের পরিবারের পাশেও রাজ্য সরকার রয়েছে বলে পঞ্চায়েত মন্ত্রী জানান।
নিজের ছাত্র জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন র্যাগিং দীর্ঘদিনের। তিনি যখন কলেজে পড়তেন তখনো এই র্যাগিং হতো।তার প্রতিবাদ ছাত্ররা নিজেরাই করতো ।।
তাই র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে বর্তমানে ছাত্রদের এগিয়ে আসতে হবে। সঙ্গবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিং কাণ্ড নিয়ে মন্ত্রী যখন সরকারের কঠোর মনোভাবের কথা শোনাচ্ছেন ঠিক সেই সময়েই পাসআউট ছাত্রদের নিয়ে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় । এর কারণটাও যথেষ্ট চমকে দেওয়ার মতই।পাসআউট ছাত্রদের হোস্টেলে থাকা নিয়ে মুখ খোলায় এখন হুমকি হজম করতে হচ্ছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেলের এক রাঁধুনিকে। ঘটনার জেরে অন্য রাঁধুনিরাও আতঙ্কেরয়েছেন ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলগুলিতেও পাশ আউট ও বহিরাগত ছাত্রছাত্রীদের থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।যাদবপুর কাণ্ডের পর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলগুলিতে যে সংখ্যায় ছাত্রছাত্রী থাকার কথা তার থেকে বেশি সংখ্যায় ছাত্রছাত্রীদের থাকার অভিযোগ উঠতে শুরু করে। তা নিয়ে এখানকার অরবিন্দ হোস্টেলের রাঁধুনি সোমনাথ সিদাই সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছিলেন বলে এখন তিনি ঘোর বিপাকে পড়েছেন। তাকে হুমকি ও গালিগালাজ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত সুপার সিনিয়র ছাত্র সুদীপ কুমার রায়।তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিন্দ হোস্টেলের আবাসিক বলে জানা গিয়েছে।সোমনাথ সিদাই কে হুমকি দেওয়া হচ্ছে জেনে আতঙ্কিত অন্য হোস্টেলগুলির রাঁধুনিরাও।
তারই মধ্যে আতঙ্ক দূরে সরিয়ে মুখ খুলেছেন চিত্তরঞ্জন হোস্টেলের রাঁধুনি মণিমালা ঘোষ।তিনি জানান,“বহিরাগত ও পাশ আউট ছাত্ররা দীর্ঘদিন ধরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলগুলির রুম দখল করে রেখেছে বলে জানাচ্ছেন।তারা রাতে হোস্টেলে মদ্যপানের আসর বসায় বলেও অভিযোগ মণিমালার“। আর এক রাঁধুনি বিজয় আগরওয়াল জানান, তাঁদের সহকর্মী সোমনাথের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা জেনে তাঁরাও যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন।
যদিও নিজেকে এম ফিল(কমার্স) এর ছাত্র বলে দাবী করে সুদীপ রায় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সুদীপের সাফাই, “আমি শুধু বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম”। এস এফ আই অবশ্য রাঁধুনিকে হুমকি দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বিশ্বিবদ্যালয়ের সহ উপাচার্য আশীষ পানিগ্রাহিও কিছু বলতে অস্বীকার করেন।
তবে হস্টেলে ‘প্রাক্তনী’দের যে দাপট রয়েছে তা কার্যত মেনে নিয়েছেধ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রেজিস্টার সুজিত চৌধুরি সোমবার রাতে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে সাত দিনের মধ্যে বহিরাগত ও প্রাক্তনীদের হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।এমনকি ছাত্র ও ছাত্রী মিলিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি হস্টেলের সুপারকেও এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গবেষক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে হস্টেলগুলির মধ্যে দু’টি হস্টেল বরাদ্দ করা রয়েছে। সহ-উপাচার্য আশিস পাণীগ্রাহী এদিন বলেন, “সিসি ক্যামেরা লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। হস্টেল দেখভাল, অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটির মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কমিটি গঠন করা হবে ।।