এইদিন ওয়েবডেস্ক,হরিশ্চন্দ্রপুর(মালদা),২৭নভেম্বর : গ্রামের রাস্তায় দিনে দুপুরে গুলি চালানোর অভ্যাস করছেন স্বয়ং তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের দেবর তথা সক্রিয় তৃণমূল কর্মী । পাশ থেকে অনেকে তাঁকে উৎসাহ যোগাচ্ছেন । শিখিয়ে দিচ্ছেন কেমন করে চালাতে হয় আগ্নেয়াস্ত্র । মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের এমনই এক ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায়-ভাইরাল হয়েছে । আর এই ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় । যদিও ভিডিওটি নজরে পড়তেই ওই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ । ঘটনা ঘিরে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে এলাকার তৃণমূল নেতারা । যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি ‘এইদিন’ ।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইর্যাল হতে দেখা যায় । ভিডিওতে দেখা গেছে কোনও গ্রামের মধ্যে বছর ত্রিশের এক যুবক একটি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে সামনের কোনও কিছুকে নিশানা করছেন । আরও কিছু লোকজনের গলা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে । তবে তাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না । তারা ওই যুবককে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি গুলি চালানোর ভিডিও রেকর্ড করছে । জানা গেছে,অভিযুক্ত যুবকের নাম আরজাউল শেখ । তাঁর বাড়ি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের মালিওর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় । সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত আরজাউলের বউদি তোরিনা খাতুন মালিওর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান । যদিও ভিডিও নজরে পড়তেই আরজাউলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাঁর আগ্নেয়াস্ত্রটিও ।
এদিকে ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গেছে । বিজেপির অভিযোগ,আজ মালদা জেলা বারুদের স্তুপ হয়ে গেছে । তৃণমূলের লোকজন যেভাবে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে মালদা জেলা যেন চলচিত্রের শ্যুটিংয়ের স্পট হয়ে গেছে । অন্যদিকে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি,এই রাজ্যে আইনের শাসন আছে বলেই পুলিশ দল নির্বিশেষে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারে । কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে শাসকদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই নেওয়া হয় না ।
কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব যাই দাবি করুক না কেন, হরিশ্চন্দ্রপুরের ব্লকের মালিওর অঞ্চলের বাস্তব চিত্রটা কিন্তু যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের । দিন কয়েক আগেই ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কাতলামারির আব্দুল বাসীর ও মহম্মদ উনসাহাক গোষ্ঠীর বিবাদে দুজন গুলিবিদ্ধ হয় । দুই গোষ্ঠীই তৃণমূলের আশ্রিত । গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলকে ঘিরে ফের ওই দুই গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে দাবি স্থানীয়দের ।
প্রসঙ্গত,গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর মালিওর-২ পঞ্চায়েতে বাম ও কংগ্রেস জোট বোর্ড গঠন করেছিল । যদিও তার অব্যবহিত পরেই প্রধান ও বাকি সদস্যরা শাসক শিবিরে নাম লেখান । এরপর প্রধানের বিরুদ্ধে দলেরই একাংশ অনাস্থা পেশ করে। কিন্তু প্রধান আদালতের দ্বারস্থ হলে অনাস্থায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় । আর তার পর থেকেই এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা চলছে । মালিওর পঞ্চায়েতের এই টানাপোড়েনের মাঝে প্রধানের দেবরের আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হতেই হইচই পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে । চিন্তার ভাঁজ পুলিশের কপালেও । স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়,আরজাউল শেখের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ার প্রশিক্ষণ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । বরঞ্চ এর পিছনে আরও বড়সড় কোনও ঘটনার ইঙ্গিত ইঙ্গিত রয়েছে বলে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন । ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।।
ছবি : ভিডিও থেকে স্ক্রীন শর্ট নেওয়া ।