এইদিন ওয়েবডেস্ক,বার্লিন,২৭ জানুয়ারী : জার্মানির স্লেসউইগ-হলস্টেইনে (Schleswig-Holstein) একটি আঞ্চলিক ট্রেনে দুই যাত্রীকে শিরোচ্ছেদ করে খুন করল ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু । আহত হয়েছে আরও ৫ জন রেলযাত্রী । শ্লেসউইগ-হলস্টেইন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন । তিনি জার্মানিতে এই ধরনের ঘটনা লাগাতার ঘটতে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । পুলিশ ৩৩ বছর বয়সী বয়সী ইব্রাহিম এ নামে ওই হামলাকারীদে গ্রেফতার করেছে । পুলিশের মুখপাত্র বলেছেন,’একজন যাত্রী কিয়েল থেকে হামবুর্গ পর্যন্ত আঞ্চলিক এক্সপ্রেসের যাত্রীদের ছুরিকাঘাত করে, অন্তত পাঁচজন আহত এবং দুইজন নিহত হয়েছে ।’ জানা গেছে,বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টে নাগাদ ওই হামলার ঘটনাটি ঘটেছে ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে,ট্রেনটি নিউমুন্সটার এবং হামবুর্গের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় ওই যুবক একের পর এক রেলযাত্রীর উপর ছুরি দিয়ে হামলা চালায় । বাকি যাত্রীরা তাক্র ট্রেনের মধ্যে ফেলে ব্যাপক মারধর শুরু করে ৷ পরে পুলিশ হামলাকারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে হামলাকারীর সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের যোগসূত্র নেই । তবে পুলিশ জানিয়েছে যে হামলাকারীর বিভিন্ন যৌন অপরাধ সহ সহিংস পটভূমি রয়েছে । একই রকম ভাবে ছুরি দিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগে কয়েকদিন আগে সে পুলিশ হেফাজতে ছিল ।
ব্যাড ব্রামস্টেডের একজন মহিলা তার ১৮ বছর বয়সী মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রেলস্টেশনে । মেয়েটি ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্রী । ট্রেনটি রেলস্টেশনে আসতেই মায়ের সামনেই মেয়েকে শিরোচ্ছেদ করার চেষ্টা করে হামলাকারী । মেয়েটির শ্বাসনালী কেটে গেলেও বরাত জোরে সে প্রাণে বেঁচে যায় । তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ছাত্রী কথা বলতে পারছেন না বলে জানা গেছে । সে যা দেখেছে তা লিখে পুলিশকে জানিয়েছে । এদিকে ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন শ্লেসউইগ-হলস্টেইন প্রধানমন্ত্রী ড্যানিয়েল গুন্থার । তিনি বলেছেন, ‘ভয়ানক ঘটনা এটি । এরকম কিছু যে ঘটেছে তা ভেবেই আমরা হতবাক এবং আতঙ্কিত । এটা স্পষ্ট যে ভয়ঙ্কর কাজটি সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধে পরিচালিত ।’
উল্লেখ্য,জার্মানির বাসিন্দারা গত বছরগুলিতে প্রচুর পরিমাণে অভিবাসীদের ছুরি হামলার শিকার হয়েছে । ২০২২ সালে দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ টি করে হামলার ঘটনা ঘটেছিল । গত মাসে দুই জার্মান স্কুল ছাত্রীকে এক ইরিত্রিয়ান অভিবাসী ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়েছিল । তার মধ্যে একজন ছাত্রীর মৃত্যু হয় । দুই মাস আগে জর্ডান থেকে আসা এক অভিবাসী ইউক্রেনের এক উদ্বাস্তু নারীকে ছুরিকাঘাত করে। ওই বছর জুন মাসে একজন আফগান নাগরিক হামবুর্গের একটি বাস স্টপে এক মহিলার মাথায় ছুরি দিয়ে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করে । গত মাসে জার্মানির এসেনে দুই নাইজেরিয়ান একজন জার্মান ট্রেনের কন্ডাক্টরকে অজ্ঞান করে মারধর করে । দুই মাস আগে ড্রেসডেনে একজন টিকিট পরিদর্শককে ছুরিকাঘাত করেছিল এক সিরিয়ান অভিবাসী। গত বছরের মে মাসে সন্ত্রাসের নজরদারির তালিকায় থাকা একজন ইরাকি ব্যক্তি আচেনে একটি আঞ্চলিক ট্রেনে পাঁচজন জার্মানকে ছুরিকাঘাতে আহত করেছিল।
গত বছরের নভেম্বরে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত একজন সিরীয় অভিবাসী হামবুর্গ যাওয়ার পথে একটি হাই-স্পিড আইসিই ট্রেনে চারজনকে ছুরিকাঘাত করেছিল । ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে বার্লিনের অটোবাহনে মোটরসাইকেল চালকদের ধাক্কা দিয়ে “আল্লাহু আকবর” শ্লোগান দিতে শোনা গিয়েছিল একজন ইরাকি আশ্রয়প্রার্থীকে । একই বছরে একজন সোমালি ব্যক্তি তার ১১ 1বছর বয়সী মেয়ের সামনে তিনজন জার্মান মহিলাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছিল । পুলিশের জেরার সে স্বীকার করে সে জিহাদ অর্জনের জন্য এই আক্রমণ করেছিল ৷ফেডারেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার ইসলামি চরমপন্থাকে দেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ।
ডাচ সাংসদ গির্ট ওয়াল্ডার্স টুইটারে লিখেছেন, ‘তারা আমাদের আক্রমণ করে এবং আমাদের হত্যা করে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এবং এটি কখনই থামবে না যদি না আমরা তাদের থামাই এবং আমাদের সীমান্ত বন্ধ করি। যতক্ষণ না আমরা আরও বেশি ইসলামিক সহিংসতা আমদানি বন্ধ না করি, আমাদের জনগণ, গীর্জা, ধর্মযাজক, নারী ও শিশুরা নিরাপদ থাকবে না। আমাদের এখন তাদের থামাতে হবে ।’।