বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হিন্দু যুবক দিপু চন্দ্র দাশ (৩০)কে ধর্মনিন্দার মিথ্যা অভিযোগে নৃশংসভাবে পিটিয়ে গাছে ঝুলিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে । সেই নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । বলা হচ্ছে যে ময়মনসিংহের ভালুকার সংশ্লিষ্ট এলাকার থাকা থেকে ওই হিন্দু যুবককে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয় । আর পুলিশ ছিল নির্বাক দর্শকের ভূমিকায় । এই নৃশংসতার নিন্দা হচ্ছে ভারতের একাংশের মধ্যেও । কিন্তু যথারীতি আশ্চর্যজনক ভাবে চুপ নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করা সিপিএম-কংগ্রেস ও পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস । যারা ফিলিস্তিনের সমর্থনে প্রতিবাদের কন্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল,রাজ্যে মহম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে মিছিল ও প্রতিবাদ সভা হয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকার বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব এনেছিল,কংগ্রেস ইসরায়েলের কথিত “আধিপত্যবাদ” নিয়ে গলা ফাটিয়েছিল,আজ তারা চুপ । ধর্মনিরপেক্ষতা দেখাতে গোমাংস ভক্ষণকারী সিপিএমের বিকাশ ভট্টাচার্য ও তৃণমূলের সুবোধ সরকার আজ খোলসে ঢুকে গেছে ।
ফিলিস্তিনের সমর্থনে গলা ফাটানো সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম,সুজন চক্রবর্তী, মীনাক্ষী মুখার্জি, দীপান্বিতা ধরেদের আজ দেখা নেই । “সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষা দিবস” নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টার লিখলেও দিপু চন্দ্র দাশের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নৃশংস নিয়ে নিয়ে নীরব পশ্চিমবঙ্গের কথিত ধর্মনিরপেক্ষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । কথায় কথায় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলা কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষেরা একটা শব্দও খরচ করেননি এখনো পর্যন্ত ।
“সেভ প্যালেস্টাইন” লেখা ব্যাগ কাঁধে ঘুরে বেড়ানো কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদ্রা, প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীরা নীরব । শুধু তাই নয়, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামি এজেন্ডা চালানো বামপন্থী পোর্টাল দ্য ওয়্যারের সম্পাদক আরফা খানুম শেরওয়ানী, কংগ্রেসের “দালাল” বলে পরিচিত বামপন্থী এজেন্ডা চালানো রবীশ কুমারের মত সাংবাদিকরা আজ নীরব । বস্তুতপক্ষে ভারতের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ও বামপন্থী বাস্তুতন্ত্র ময়মনসিংহের ভালুকার হিন্দু যুবক দিপু চন্দ্র দাশের নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আজ নীরব ।
শুধু নিন্দা ও প্রতিবাদ হচ্ছে ভারতের বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি থেকে । উলটে বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি ইনচার্জ অমিত মালব্য ময়মনসিংহের ভালুকার ঘটনার কথা উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে “ঘৃণ্য রাজনীতি”ও করতে দেখা যায় ।
অমিত মালব্য এক্স-এ লিখেছেন,’বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ইসলামপন্থীরা দীপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। তাকে হত্যার পর তার দেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ভয়াবহ ঘটনাটি ইসলামী চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণ না করলে এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হলে কী ঘটে তার নির্মম বাস্তবতা প্রকাশ করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক এই দিকেই পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের ঠেলে দিচ্ছেন – এমন এক ভবিষ্যতের দিকে যেখানে হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হবে, তাদের কণ্ঠস্বর বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তাদের মাতৃভূমির সাথে আপোস করা হবে, সবই তার রাজনৈতিক ক্ষমতার নিরলস সাধনা তৃপ্ত করার জন্য। ইতিহাস আমাদের তুষ্টির রাজনীতির পরিণতি দেখিয়েছে। আজ সতর্কতামূলক লক্ষণ উপেক্ষা করলে আগামীকাল কেবল বিপর্যয়ই ডেকে আনবে।’
তার এই পোস্টের জবাবে তৃণমূলের কুণাল ঘোষ লিখেছেন,’অমিত মালব্যের এই পোস্টটি বিপজ্জনক। তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের সাথে তুলনা করছেন। এটি কেবল আমাদের রাজ্যের অপমানই নয়, এটি স্পষ্ট উস্কানিও। পুলিশের উচিত এই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা এবং জরুরি ভিত্তিতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া। বাংলেশের পরিস্থিতি গুরুতর বলে জানা গেছে। যেহেতু এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়, তাই আমরা এখন কোনও মন্তব্য করছি না। আমাদের নেতৃত্ব ঘটনাস্থলের দিকে নজর রাখছেন, জাতীয় স্বার্থে, আমরা ভারত সরকারের গৃহীত অবস্থানকে সমর্থন করি। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু, ভারতীয় এবং সেই সাথে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদেরও যথাযথভাবে রক্ষা করা উচিত। কিছু অমানবিক প্রতিবেদন এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে, কোনটি সত্য, কোনটি নয় তা জানা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, একটি বিবৃতি জারি করা উচিত। এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়, তাই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
কুণালের কথায় ভালুকার হিন্দু যুবক দিপু চন্দ্র দাশের নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক বিষয় । তাহলে প্রশ্ন উঠছে যে ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ কি ভারতের জাতীয় ইস্যু ছিল ? কেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব পাশ করা হয়েছিল ?
কুণাল ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া দিপু চন্দ্র দাশের নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ভিডিও নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন । যা তার দলের তোষামোদি রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ । ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার । আর এই ভন্ডামি বন্ধ হলে দেশের জন্যই মঙ্গল হবে৷।

