এইদিন ওয়েবডেস্ক,পাকিস্তান,২৬ ফেব্রুয়ারী : পাকিস্তানের ইসলামি মৌলবাদ চরম সীমায় পৌঁছে গেছে । দেশ আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে,কর্মসংস্থান নেই,দ্রুত বাড়ছে দরিদ্রের সংখ্যা- এরই মাঝে পাকিস্তানে ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে ইসলামি সন্ত্রাসবাদ ও কট্টরপন্থী মানসিকতা । এক তরুনী আরবি শব্দ লেখা পোশাক পরে বাসে ভ্রমণ করছিলেন । মৌলবাদীরা সেই শব্দকে কোরানের আয়াত মনে করে তরুনীর বিরুদ্ধে ধর্মনিন্দার অভিযোগ তুলে ‘শর-তন-সে-জুদা’র আওয়াজ তোলে । যদিও যথা সময়ে পুলিশ চলে এসে তরুনীর প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয় । অবশ্য অপরাধ না করেও স্থানীয় ইমামের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হয় ওই তরুনীকে । ঘটনাটি পাকিস্তানের লাহোরের ইচরা বাজার এলাকার ।
ঘটনা প্রসঙ্গে ফারাজ পারভেজ নামে এক পাকিস্তানি লিখেছেন,’পাকিস্তানে অজ্ঞ লোকের অভাব নেই। মহিলাটিকে বিক্ষুব্ধ মুসলিম জনতা ঘিরে রেখেছে কারণ তারা ভেবেছিল যে সে একটি পোশাক পরেছিল যাতে কোরানের আয়াত লেখা আছে, তারা ধর্মনিন্দার অভিযোগ করেন এবং যদি পুলিশ ঘটনাস্থলে না পৌঁছাত, তবে তাকে হয়তো তখনই হত্যা করা হত, পুলিশ বিক্ষুব্ধ মুসলিমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল।’ তিনি লিখেছেন,’পোশাকটিতে লেখা শব্দ আসলে কোরানের আয়াত নয় বরং আরবি ক্যালিগ্রাফির নকশা, যা সৌদি আরবে প্রচলিত। আর উপরে লেখা আছে আরবি হালওয়া (حلوہ) যার অর্থ সুন্দর ও মিষ্টি।’
ইসলামি কট্টরপন্থী মানসিকতার কট্টর সমালোচক ইমতিয়াজ মেহেমুদ লিখেছেন, ‘পাকিস্তানি ইসলামপন্থীরা আরবি লেখা সহ পোশাক পরা এক মহিলার উপর হামলা করে, একে ব্লাসফেমি বলে। পুলিশ যখন হস্তক্ষেপ করছে, তখন জনতাকে চিৎকার করতে শোনা যায় “ধর্ম নিন্দাকারীদের জন্য শুধুমাত্র একটি শাস্তি: তাদের মাথা কেটে ফেলুন।” পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান ইসলামবাদে নতুন ঘটনা নয় । ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে তাকে পুলিশ হেফাজতে ইসলামপন্থীদের সামনে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হচ্ছে ।’
মৌলবীদের মাঝে আপাদমস্তক ঢাকা ওই তরুনীকে ক্ষমা চাওয়ার একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে । সেখানে তখন পুলিশও উপস্থিত ছিল । ভীত সন্ত্রস্ত তরুনী বলেন যে তিনি লেখাটি সম্পর্কে জানেন না, এটি অনিচ্ছাকৃত এবং তিনি ওই পোশাক আর কখনও পরবেন না ।
জানা গেছে,ঘটনাটি পুরনো । সম্প্রতি ভিডিও গুলি প্রকাশ করা হয় । ঘটনার দিন ওই পোশাক পরে বাসে ভ্রমণ করছিলেন তরুনী । আর তখনই তার সহযাত্রী কট্টরপন্থীদের দল ঘিরে ধরে । ভিডিওতে তরুনীকে বাসের পিছনে একটা সিটে বসে সম্ভাব্য পরিনতির আশঙ্কায় কাঁপতে দেখা যায় । তখন আশেপাশে জুটে যায় আরও কট্টরপন্থীদের দল । কোনো রকমভাবে তরুনীকে বাস থেকে উদ্ধার করে লাহোরের ইচরা বাজারের একটা দোকানে ঢুকিয়ে শাটার নামিয়ে দেওয়া হয় । তখন বাইরে উন্মত্ত ধর্মান্ধদের দল ‘শর তন সে জুদা’ শ্লোগান তুলতে থাকে । শেষে পুলিশ গিয়ে তরুনীকে কোনো রকমভাবে সেখান থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ৷
এই ঘটনায় ফারাজ পারভেজ তীব্র ক্ষোভের সাথে লিখেছেন,’দুঃখের বিষয় যে এই মহিলাকে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল, মিথ্যা ধর্মনিন্দার অভিযোগের হাত থেকে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য ক্ষমা চাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে তিনি মনে করেছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তান খারাপভাবে ব্যর্থ হয়েছে, বন্ধুরা, এই দেশ ছেড়ে যাওয়াই ভাল।’।