এইদিন ওয়েবডেস্ক,ইসলামাবাদ,১৬ ডিসেম্বর : অন্যের স্ত্রীকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করার মামলায় পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তলব করল ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা আদালত । আগামী ১৬ ডিসেম্বর তাকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । যদিও যে মহিলাকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেই বুশরা বিবিকে সেদিন আদালতে উপস্থিতি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে । সিনিয়র সিভিল জজ কুদরতুল্লাহ এক পৃষ্ঠার এই লিখিত আদেশ দেন । তবে আদেশে বলা হয়েছে যে বুশরা বিবিকে একদিনের উপস্থিতি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে জামানত হিসাবে ৫০,০০০ টাকার একটি ব্যক্তিগত বন্ড জমা দিতে হবে । পিটিআইয়ের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইমরান খান দুর্নীতি মামলায় বর্তমানে আদিয়ালা কারাগারে বন্দি আছেন ।
এর আগে ১৪ ডিসেম্বর অবৈধ বিয়ের মামলার শুনানির আদেশ জারি করা হয় । আদেশে বলা হয়, আবেদনকারীর আইনজীবী রিজওয়ান আব্বাসি আদালতে হাজির হয়ে বলেছেন যে এই মামলায় আমাদের চারজন সাক্ষী আছে, আমরা একই দিনে চারজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করতে পারব, তাদের হাজির করার জন্য আমাদের একটি তারিখ রয়েছে। পরে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আদালত।
উল্লেখ্য,১১ ডিসেম্বর ইসলামাবাদের স্থানীয় আদালত পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের(পিটিআইয়ের) প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইমরান খান এবং তার স্ত্রী বুশরা বিবির বিরুদ্ধে খাওয়ার মানিকের দায়ের করা অবৈধ বিয়ের মামলাটিকে গ্রহণযোগ্য ঘোষণা করে এবং বুশরা বিবিকে নোটিশ জারি করে ।
এর আগে, ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত শুনানিতে খাওয়ার মণিকার গৃহকর্মী ও মামলার সাক্ষী মোহাম্মদ লতিফ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আগের শুনানিতে নিকাহ খান মুফতি সাঈদ এবং আওন চৌধুরী তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেছিলেন।
উল্লেখ্য, বুশরা বিবির প্রাক্তন স্বামী খাওয়ার মানিকা ২৫ নভেম্বর ইসলামাবাদের সিভিল জজ কুদরতের আদালতে হাজির হয়ে ইমরান খান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইদ্দা বিবাহ ও অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন ।
আবেদনে বলা হয়েছে যে, আমি পাকপত্তনের মানিকা পরিবারের সদস্য, বুশরা বিবির সঙ্গে ১৯৮৯ সালে বিয়ে হয়েছিল, যা বুশরা বিবির ভগ্নিপতির মাধ্যমে ইমরান খান ইসলামাবাদে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মসৃণ ও ভালোভাবে চলছিল। খাওয়ার মানিকা বলেছিলেন যে পিটিআই চেয়ারম্যান পরী মুরিদির ছদ্মবেশে অভিযোগকারীর বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন এবং ঘন ঘন বাড়িতে আসতে শুরু করেছিলেন এমনকি তার অনুপস্থিতিতেও তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা বাড়িতে থাকতেন যা অনৈতিক এবং ইসলামী সমাজের নিয়মেরও পরিপন্থী ।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে যে সময়ের সাথে সাথে, ইমরান খান বৈবাহিক জীবনে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছিলেন যদিও তাকে সতর্ক করা হয়েছিল এবং এমনকি তাকে অনুপযুক্ত উপায়ে বাড়ির চত্বর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
খাওয়ার মানিকা আবেদনে বলেছিলেন যে একদিন হঠাৎ তার বাড়িতে গিয়ে দেখেন জুলফি বুখারি তার শোবার ঘরে একা, তিনিও প্রায়ই ইমরান খানের সাথে আসতেন।
আবেদনে তিনি বলেন, বুশরা বিবি আমার অনুমতি ছাড়াই বনি গালায় যাওয়া শুরু করলেও আমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
এতে আরও লেখা হয়েছে যে বুশরা বিবির কাছে বিভিন্ন মোবাইল ফোন এবং সিম কার্ড ছিল, যেগুলো পিটিআই চেয়ারম্যানের নির্দেশে ফারাহ গগি দিয়েছিলেন। খাওয়ার মানিকা আবেদনে বলেছেন, তথাকথিত বিয়ের আগে দুজনেরই একে অপরের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল,আর এই ঘটনার কথা আমাকে কর্মচারী লতিফ জানিয়েছিলেন ।
পিটিশনে আরও বলা হয়েছে যে পরিবারের স্বার্থে পরিস্থিতির উন্নতি করার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু সবই ব্যর্থ হয়েছে এবং অভিযোগকারী ২০১৭ সাকের ১৪ নভেম্বর বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছিলেন। খাওয়ার মণিকার অনুরোধ অনুযায়ী, বুশরা বিবি ইমরান খানের সাথে ২০১৮ সালের পয়লা জানুয়ারী ঈদের সময় বিয়ে করেছিলেন, এই বিয়ে অবৈধ এবং ইসলামিক রীতির পরিপন্থী।
এতে আরও লেখা হয়েছে যে, ইদ্দতের সময় বিয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর, তারা দুজনেই ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুফতি সাঈদের মাধ্যমে তারা পালিয়ে গিয়ে পুনরায় বিয়ে করেন, তাই বিয়ের আগে উভয়েই পাকিস্তান দণ্ডবিধির ৪৯৬/৪৯৬বি ধারায় এটি একটি গুরুতর অপরাধ। আবেদনে ইমরান খান ও বুশরা বিবিকে তলব করে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়।।