এইদিন ওয়েবডেস্ক,ইসলামাবাদ,০৯ ফেব্রুয়ারী : নাবালক ছাত্রের দায়ের করা ‘ধর্মনিন্দা’র (Blasphemy) মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে নোটন লাল (Notan Lal) নামে এক হিন্দু শিক্ষককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিল পাকিস্থানের আদালত । অভিযোগকারী পড়ুয়ার নাম মুহাম্মদ ইহতিশাম (Muhammad Ihtisham) । তার অভিযোগ ছিল,ক্লাসে উর্দু পড়ানোর ওই শিক্ষক নাকি নবী সম্পর্কে অবমাননার মন্তব্য করেছিলেন । যদিও পরে অভিযোগকারীর ছাত্র নিজেই জানায় সে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে । তা সত্ত্বেও হতভাগ্য শিক্ষকের সাজা থেকে নিষ্কৃতি মেলেনি । মঙ্গলবার পাকিস্থানের শুক্কুরের(Sukkur) একটি আদালত নোটন লালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের (২৫ বছর) নির্দেশ দিয়েছে । সেই সঙ্গে জরিমানা ধার্য্য করা হয়েছে ৫০,০০০ টাকা । অনাদায়ে ৪ মাসের অতিরিক্ত কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে ।
পাকিস্থানের ঘোটকির( Ghotki) সিন্ধু পাবলিক স্কুল নামে একটি বেসরকারি ইংরাজী মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন নোটন লাল । ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মহম্মদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল স্থানীয় ঘোটকি থানায় । অভিযোগটি দায়ের করেছিল মুহাম্মদ ইহতিশাম নামে ওই স্কুলের এক নাবালক পড়ুয়া । এদিকে ঘটনার কথা চাওড় হতেই ঘোটকির মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন তিনটি মন্দির, একটি বেসরকারি স্কুল এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের একাধিক বাড়ি ভাঙচুর করে । হিন্দুদের উপর অত্যাচার দেখে “হিন্দু সম্প্রদায় বিপদে আছে” বলে ট্যুইট করে পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন । শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পুলিশ পাকিস্তান দণ্ডবিধির ২৯৫ (সি) ধারায় নোটন লালকে গ্রেফতার করে । জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় অভিযোগকারী কিশোর শিশু মুহাম্মদ ইহতিশামকেও । তখনও সে পুলিশের কাছে জানায় উর্দু পাঠের সময় নবীর জীবন ও এবং দুটি পবিত্র শহরে তাঁর ভ্রমণ সম্পর্কে বর্ণনা করার সময় ওই শিক্ষক নবী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন ।
কিন্তু বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়া এবং পাকিস্তানের অন্যান্য অংশে বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে পড়লে চাপে পড়ে যায় মুহাম্মদ ইহতিশামের পরিবার । তখন ওই কিশোর স্বীকার করে সে মিথ্যা বলেছে । এনিয়ে ছাত্রটি একটি ট্যুইটও করে । তাতে সে লেখে, “নোটন স্যার এমন কিছু বলেননি । আমার পড়া না করায় স্যার বকেছিলেন । তাই আমি রেগে গিয়ে একটা ভিডিও তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিয়েছিলাম । আমায় ক্ষমা করে দেবেন । আমি বুঝতে পারিনি যে বিষয়টি এতদুর পৌঁছে যাবে । নোটন স্যার আমায় ক্ষমা করে দেবেন । অনুগ্রহ করে কেউ ভিডিওটি শেয়ার করবেন না । ভিডিওটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ।’ কিন্তু অভিযোগকারীর অকপট স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও বিনা অপরাধে সাজা পেতে হল ওই নির্দোষ হিন্দু শিক্ষককে ।
প্রসঙ্গত,পাকিস্থানে এটি নতুন ঘটনা নয় । ধর্ম নিন্দার মিথ্যা অভিযোগ তুলে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু খ্রিস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর হামলা করা, জেলে পাঠানো এবং এমনকি খুন করা খুবই সাধারণ ঘটনা । একই অভিযোগ তুলে ২০২১ সালে এক শ্রীলঙ্কান নাগরিককে নৃসংসভাবে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে মেরে ফেলে উন্মত্ত জনতা ।
ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)-এর এই রিপোর্ট অনুসারে,ধর্ম নিন্দার অভিযোগে ১৯৯০ সাল থেকে এযাবৎ ৭৫ জনেরও বেশি মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে । আজীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন অথবা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে ৪০ জনেরও বেশি মানুষকে ।।