এইদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক,১৫ ডিসেম্বর : রবিবার (১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫) সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি সমুদ্র সৈকতে ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব হনুক্কা উদযাপনের সময় সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এই হামলা চালানো সন্ত্রাসবাদীদের নাম নাভিদ আকরাম (২৪) এবং সাজিদ আকরাম (৫০) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বাবা-ছেলে। বাবা সাজিদ আকরাম ঘটনাস্থলেই নিকেশ হয়, আর তার ছেলে নাভিদ আকরাম গুরুতর আহত হয়েছে ।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে নাভিদের পাকিস্তানি ধর্মীয় শিক্ষা এবং ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (ISIS) দ্বারা অনুপ্রাণিত উগ্র ইসলামি মানসিকতা এই হত্যাকাণ্ডের কারণ, আর সাজিদ অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে হামলাকারীদের শনাক্ত করে। ৫০ বছর বয়সী সাজিদ আকরাম এবং তার ছেলে নাভিদ আকরাম (২৪) পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বাবা-ছেলে। তারা সিডনির পশ্চিম উপকণ্ঠ বনিরিগে থাকত । পুলিশ তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এলাকাটি সিল করে দিয়েছে।
সিডনি সন্ত্রাসী হামলায় নিকেশ হওয়া নাভিদের বাবা সাজিদ আকরাম একটি ফলের দোকান চালাত এবং তার নামে ছয়টি বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র নিবন্ধিত ছিল। পুলিশ মনে করে যে এগুলিই হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র। সাজিদের কাছে ১০ বছর ধরে লাইসেন্স ছিল। কমিশনার মাল ল্যানিয়ন বলেন,”মনে করা হচ্ছে যে এই ছয়টি অস্ত্র হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল।” পুলিশ এখন তদন্ত করছে কিভাবে অস্ত্রগুলো পাওয়া গেছে। সাজিদ অস্ট্রেলিয়ায় পর্যটন ভিসায় এসেছিলেন বলে জানা গেছে।
নাভিদ আকরাম তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে জন্মগ্রহণ করে এবং সেখানকার হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে । সে বেশ কয়েক বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় আসে । ২০১৯ সালে, তাকে আইএসআইএস সন্ত্রাসী মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং তার উপর নজরদারি চালানো হয়। ২০১৯ সালে,সে আল-মুরাদ ইসলামিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়, যেখানে সে কোরান এবং আরবি ভাষায় ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করে । এরপর সে ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় । তবে, বর্তমানে আল-মুরাদ ইসলামিক ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে কোনও আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলছে না।
মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, নাভিদ কয়েক মাস আগে আইসিসে যোগ দেয়। তার বাবা সাজিদ পাকিস্তান থেকে এই ষড়যন্ত্রের মূল পরিকল্পনাকারী। পরিবার জানিয়েছে যে তারা দুজন সিডনি থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে জার্ভিস বেতে মাছ ধরতে গিয়েছিল, কিন্তু তারা আসলে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘটনাস্থলে একটি আইসিসের পতাকাও পাওয়া গেছে। পুলিশ কমিশনার মাল ল্যানিয়ন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “রাতভর তদন্তের পর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ আক্রমণকারীদের এবং আক্রমণে ব্যবহৃত অস্ত্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিশ্চিত করেছে এবং ঘটনাটিকে ইহুদি সম্প্রদায়কে নিশানা করে সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা করেছে।”
এদিকে আইসিসের পতাকা এবং আইইডি আবিষ্কারের ফলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ঘটনাস্থলের কাছে দুটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) পাওয়া গেছে, যা সিডনির বোম স্কোয়াড নিষ্ক্রিয় করেছে। ল্যানিয়ন বলেন, “ঘটনার কাছে দুটি সক্রিয় ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) পাওয়া গেছে, যা বোম স্কোয়াড নিষ্ক্রিয় করেছে।” আক্রমণটি ইহুদি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে করা হয়েছিল, যারা হনুক্কা উদযাপনে ব্যস্ত ছিল বলে তিনি জানান ।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, “গতকাল আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি কালো দিন ছিল। কিন্তু যারা এই কাজ করেছে তাদের চেয়ে আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা তাদের আমাদের বিভক্ত করতে দেব না। অস্ট্রেলিয়া কখনও বিভাজন, হিংসা বা ঘৃণার কাছে মাথা নত করবে না এবং একসাথে আমরা এই সংকট কাটিয়ে উঠব।”
উল্লেখ্য, রবিবার সন্ধ্যা ৬:৪০ মিনিটে সিডনির বন্ডি সমুদ্র সৈকতে হনুক্কা উদযাপনের সময় হঠাৎ করেই গুলিবর্ষণ শুরু হয়। নিরীহ পরিবারগুলি তখন আনন্দময় ইহুদি উৎসব উদযাপন করছিল, ঠিক সেই সময় দুই সন্ত্রাসী নির্বিচারে গুলি চালায়। এই হামলায় ষোল জন নিহত হয়, যার মধ্যে একজন নিরীহ শিশু এবং একজন ইসরায়েলি নাগরিকও রয়েছে। প্রায় ৪০ জন আহত হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসা চলছে। এটি অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ।।

