প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৭ জুন : কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন করানো নিয়ে হঠাৎ করেই যেন এক সুর মোদি ও দিদির টিমের তারকাদের গলায়। তফাত শুধু নিশানায়। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করাতে আপত্তি তোলার জন্য রুদ্রনীল তুলোধনা করলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে।আর কমিশণের দাবি মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী এখনও রাজ্যে না এসে পৌছানোর জন্য সায়নী বাক্যবানে বিঁধলেন কেন্দ্রকে । কেন্দ্রীয় বহিনী নিয়ে একেবারে ভিন্ন মেরুর জুজু ধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতা ও নেত্রীর এই সুর মিলান্তি শোরগোল ফেলে দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে । আর সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম তো স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েয় রাখলেন ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ না হলে চোরেদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার মতো গন অভ্যুত্থান ঘটবে ।
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষনার দিনেই রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা রাজ্য পুলিশ দিয়ে
এক দফায় ভোট করানোর কথা ঘোষণা করেন। তাতেই আপত্তি তোলে বিজেপি সহ অন্য বিরোধী দলগুলি । তারা সন্ত্রাস ও হিংসা হানাহানির অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর দাবিতে সরব হন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর জন্য কমিশনকে নির্দেশ দেয় ।যদিও তার পরেও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে কমিজনের কাজিয়া চলছেই ।
ভোটের প্রচারে নেমেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রসঙ্গ তুলে ধরে রাজ্য নির্বাচন কে তুলোধনা করতে ছাড়ছেন না বিজেপি নেতারা। রবিবার সন্ধ্যায় পূর্ব বর্ধমানের রায়না-১ ব্লকের শ্যামসুন্দর অঞ্চলে নির্বাচনী প্রচারে যোগদিয়ে বিজেপির তারকা নেতা রুদ্রনীল ঘোষ আগাগোড়াই শাসক দলের পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। পরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে দালাল বলে কটাক্ষ করেন ।তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে ওনার তো খুশি হওয়া উচিত।কিন্তু দালাল বলেই উনি খুশি নন। এখানেই থেকে থাকেন নি বিজেপি নেতা রুদ্রনীল । আরে একধাপ সুর চড়িয়ে রুদ্রনীল বলেন,রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার নিশ্চয়ই চুরির ভাগ পান।নইলে কেন্দ্রীয় বাহিনীতে ওনার আপত্তি কেন? ভোট ঘোষণার পর থেকে রাজ্যে হিংসা হানির ঘটনা বাড়েছে বলে অভিযোগ তুলে রুদ্রনীল ঘোষ রাজ্য পুলিশের কড়া সমালোচনা করেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কামাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি রুদ্রনীল । তিনি বলেন, অন্য অনেক কিছুর মতই অভিষেক পুলিশ চোর।
একই দিনে রায়না-২ ব্লকের বড়বৈনান অঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারে যোগদেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। রোড শো ও সভা শেষে সায়নী ঘোষ সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন। দাবি মত কেন্দ্রীয় বাহিনী এখনও রাজ্যে না এসে পৌছানো নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সায়নী ঘোষ বলেন,’লজ্জা লাগা দরকার ।’ বিজেপি সহ বিরোধীদের নিশানা করে এরপর সায়নী বলেন,
‘প্রথমে ওরা বলে, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে হবে। তারপরে ওরা নিজেরাই বলে কেন্দ্র বাহিনী দিতে পারছে না। এরা যদি ভোট করানোর জন্য বাহিনী দিতে না পারে তাহলে মানুষের সুরক্ষার জন্য বাহিনী কোথা থেকে দেবে?এই মন্তব্য করার পরে বিরোধীদের কটাক্ষ করে সায়নী বলেন,যাঁরা বুথে বুথে প্রার্থী দিতে পারে নি তারা আবার ভোট করবে !’
একই ভাবে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবির কথা তুলে কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। সোমবার বিকালে জেলার মন্তেশ্বরে বামফ্রন্ট ও তাঁদের সহযোগী দলগুলির প্রার্থীদের সমর্থনে আয়োজিত জনসভায় যোগ দিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন,সব প্রার্থীরা যাতে শান্তিতে প্রচার করতে পারে, সাধারণ মানুষ যাতে সুষ্ঠ ভাবে ভোটে অংশ নিতে, যে যার নিজের পছন্দমত প্রার্থকে ভোট দিতে পারে , গননায় যাতে লুটপাট না হয় সেটা সুনিশ্চিৎ করার দায়িত্ব সংবিধান রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন প্রথম থেকেই সেই ব্যাপারে ন্যাস্টামি করছে । তার জন্য কমিশন তাড়া খেয়েছে, কনমোলা খেয়েছে,চড় খেয়েছে। এর পরেও কমিশনের যদি শিক্ষা না হয় তাহলে মানুষ শিক্ষা দিয়ে দেবে। তার জন্য মানুষ প্রস্তুত হচ্ছে। আর মানুষ যদি ক্ষিপ্ত হয় তাহলে পুলিশ বা মিলেটারি কেউই চোরেদের রক্ষা করতে পারবে না। শ্রীলঙ্কা তার উদাহরণ বলে মহম্মদ সেলিম জানিয়ে দেন।।