এইদিন ওয়েবডেস্ক,পূর্ব মেদিনীপুর,১৯ অক্টোবর : রাজ্য সরকারের দেওয়া ১০ হাজারি স্মার্টফোন নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ শুরু করে দিলেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা ৷ ফোন ব্যবহার করার জন্য যে ‘কঠিন শর্ত’ আরোপ করা হয়েছে মূলত তা নিয়েই শুরু হয়েছে তীব্র অসন্তোষ । শনিবার দুপুরে তিন শতাধিক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট ব্লক কার্যালয়ের সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখান । সরকারি ১০ হাজারি স্মার্টফোন রক্ষণাবেক্ষণের শর্ত নিয়ে মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন তারা ৷ বিক্ষোভকারীরা সাফ জানিয়ে দেন যে ওই শর্তপূরণ করা অসম্ভব৷ তাই তারা সরকারি স্মার্টফোন নেবেন না বলে ঠিক করেছেন ।
প্রসঙ্গত,বৃহস্পতিবার নবান্নে রাজ্যের ১ লক্ষ ৫ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও ৭২ হাজার আশা কর্মীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্মার্টফোন কেনার জন্য ১০,০০০/- টাকা করে টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে শুরু হয়ে গেছে স্মার্টফোন কেনার জন্য টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া । কিন্তু টাকা দেওয়ার আগে বিডিও অফিসে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের একটি ‘মুচলেকা’য় স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হচ্ছে৷ যেখানে উল্লেখ রয়েছে কঠিন শর্তাবলী ।
সেই শর্তে বলা হয়েছে যে ১০,০০০ টাকার মধ্যেই স্মার্টফোন ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী কিনতে হবে। স্মার্টফোনটি হতে হবে লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের । স্ক্রীন সাইজ হবে ৬ ইঞ্চি বা তার অধিক ।ডিভাইস র্যাম(আর এ এম) ৪ জিবি বা তার অধিক । ইন্টারন্যাল স্টোরেজ এন্ড প্রফেসর (আর ও এম) হতে হবে ৬৪ জিবি বা তার বেশি । ব্যাটারি হতে হবে নুন্যতম ৪৮০০ এমএইচএ । কানেকটিভিটি হতে হবে ২-জি,৩-জি,৪-জি, ওয়াইফাই এবং এমনকি ৫-জি । এছাড়া ইংরাজি এবং যেকোনো ভারতীয় ভাষার ইউনিকোড সমর্থনযোগ্য হতে হবে। কিন্তু ১০,০০০ টাকার মধ্যে কোনো নামি কোম্পানির ওই সমস্ত সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোন কেনা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েই ধন্দ্বে আছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা ।
তবে স্মার্টফোনের মালিকানা অধিকার দেওয়া হয়নি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের । ফোনগুলির আসল মালিকানা থাকবে হবে রাজ্য সরকারের শিশু উন্নয়ন অফিস প্রকল্প কর্মকর্তা । অর্থাৎ স্মার্টফোনগুলির কার্যত “কেয়ারটেকার”- এর ভুমিকা পালন করতে হবে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের । তার উপর ফোন দেখভালের জন্য যে কঠিন শর্তাবলী আরোপ করা হচ্ছে তা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সঙ্গে “সরকারি প্রহসন” বলে মন্তব্য করছেন কেউ কেউ ।
শর্তাবলিতে বলা হয়েছে, স্মার্টফোন ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশুবিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দপ্তরের সম্পত্তি ও কেবলমাত্র পোষণ অভিযানের বিভিন্ন তথ্য আপলোড করা ও অঙ্গনওয়াড়ী-আশা কর্মী হিসাবে অফিস সংক্রান্ত অন্যান্য কাজেই ব্যবহার করা যাবে। স্মার্টফোনসহ সকল সামগ্রীর সুরক্ষা, রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক ব্যবহারের দ্বায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের উপর বর্তাবে । স্মার্টফোন ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী যদি হারিয়ে যায়, চুরি হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলের তার দায়ভার নিতে হবে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের । এমনকি সাম্মানিক থেকে ১০,০০০ টাকা কেটে নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে ৷ কোনো কর্মী পদত্যাগ করলে, বরখাস্ত হলে, অন্য প্রকল্পে বদলী হলে বা অবসর গ্রহণের সময় (আকস্মিক প্রয়াণে উত্তরাধিকারী কর্তৃক) এই স্মার্টফোন ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী প্রকল্প অফিসে ফেরৎ দিতে হবে । যদি কেউ এই শর্ত লঙ্ঘন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোলাঘাট ব্লক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখানো সুমিতা গুছাইত বলেন,’কেউ মারা গেলে বা অবসর নিলে ফোন অফিসকে ফেরত দিতে হবে৷ চুরি হলে ১০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে । এই শর্ত মানা অসম্ভব । তাই আমরা ঠিক করেছি যে আমরা সরকারি ফোন নেব না ।’
মিতালি খাতুন বলেন,’এতদিন আমাদের ব্যক্তিগত মোবাইল দিয়ে জোর করে কাজ করিয়েছে । আমরা তো আমাদের ফোনের রিচার্জ করছি । কিন্তু নতুন ১০ হাজার টাকার ফোনের সিম কে দেবে ? ফোনটা যখন অফিসের তখন অফিস থেকে সিম দিক,আমার নামে তো সিম নেব না । এছাড়া ১৬৬ টাকায় কোন রিচার্জ আছে সেটা সরকার বলে দিক ।’ তার অভিযোগ, ‘আমাদের উপর রীতিমতো অত্যাচার করছে । আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ।’ তারা ছাড়াও নুপুর দত্ত,বিজয়া দাস মিশ্রসহ বাকি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা সরকারি ১০ হাজারি স্মার্টফোন নেবেন না । বিষয়টি তারা বিডিওকে জানাবেন বলেও জানিয়েছেন ।।

