এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৭ নভেম্বর : বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর কার্যত রাষ্ট্র পরিচালিত হামলা শুরু হয়েছে ৷ সাম্প্রদায়িক হিংসার এপিসেন্টার চট্টগ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে রাখা হয়েছে । সেকারণে বাংলাদেশের সেনা পুলিশের পাশাপাশি ইসলামি চরমপন্থী সংগঠন জামাত ইসলামি, হিজবুতি এবং বিএনপি(বাংলাদেশ ন্যাশানাল পার্টি)-এর জঙ্গিরা রাতভর হিন্দুদের উপর কি প্রকার অত্যাচার চালিয়েছিল তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি৷ তবে একজন এক্স ব্যবহারকারী (@ATeam_1971) লিখেছেন,’সেনাবাহিনী এবং পুলিশ হিন্দু পরিবারগুলির উপর অভিযান চালাচ্ছে, এলাকাটিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করার জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করছে। সামনের সারিতে রয়েছে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। এটি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও রাজাকারদের নৃশংস আক্রমণ অপারেশন সার্চলাইটের পুনরাবৃত্তির মতো অনুভূত হচ্ছে৷’
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আজ বুধবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটা ভিডিও শেয়ার করেছেন । সেই ভিডিওতে পুলিশ ও সেনার পাশাপাশি সশস্ত্র মুসলিমদের হামলা চালাতে দেখা গেছে চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করা হিন্দুদের উপর৷ শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন। হিন্দু মন্দিরে হামলা। হিন্দু নেতাদের এবং সম্প্রদায়ের প্রতিবাদী সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। হিন্দুদের উপর পুলিশের অত্যাচার ও হেফাজতে সহিংসতা। হিন্দু আবাসিক এলাকায় কট্টরপন্থী জনতার সহিংস আক্রমণ। হিন্দু মালিকানাধীন দোকান লুট। হিন্দু মালিকানাধীন সম্পত্তি ভাংচুর। আমি চালিয়ে যেতে পারি… আমি এখনও এটিকে গণহত্যা হিসাবে লেবেল করা বন্ধ করব, তবে তা সত্ত্বেও এটি একটি মানবিক সংকট ।’ তিনি “অল আইজ ফর বাংলাদেশি হিন্দাস” হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছেন ।
মঙ্গলবার কলকাতায় শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি একটা মিছিল করে চিন্ময় প্রভুর মুক্তি এবং বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর অত্যাচার বন্ধের দাবি জানায়৷ আজ কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের অফিসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার কথা বিজেপির ।
মঙ্গলবার ‘সংবাদ সম্মেলনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি‘তে বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতন নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘বিগত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের হিন্দু এবং হিন্দুদের আস্থা কেন্দ্রগুলির উপর লাগাতার পরিকল্পিত হামলা চলছে এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেখানে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা তথা হিংসা দমন করতে বিফল। প্রতিদিন মিডিয়ায় হিন্দুদের উপর হামলা এবং হিন্দু মন্দিরে হামলার খবর দেখতে পাওয়া যায়। গতকাল, সোমবার, অকারণে বাংলাদেশ ইসকনের প্রমুখ ধর্মগুরু প্রভু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতার করে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী প্রভু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে এক মাস আগের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশদ্রোহিতার মিথ্যা মামলায় কোন ওয়ারেন্ট ছাড়াই ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রভু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কেবলমাত্র বাংলাদেশ ইসকনের প্রমুখ ধর্মগুরুই নন, তিনি বাংলাদেশে লাগাতার সনাতন সংস্কৃতির উত্থানের কাজে নিয়োজিত। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানবতার খাতিরে ইসকন সহ একাধিক হিন্দু সংস্থা প্রভু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে কোন সামাজিক বিভেদ ছাড়াই মানুষের সেবা করেছেন। কিন্তু এখন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত আধ্যাত্মিক এবং মানবতাবাদী সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম ইসকনকে জঙ্গি সংগঠনের রূপ দিয়ে কুৎসিত প্রচারের চেষ্টা চলছে। এমন কাজ কেবল মানবতার ওপর নয়, পুরো মানবজাতির ওপর এক নিষ্ঠুর উপহাস।’
তিনি লিখেছেন,’বাংলাদেশে ইসকনের সাতাত্তরের বেশি মন্দির আছে। প্রায় পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত। ইসকন বাংলাদেশের একটি অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ ধার্মিক সংগঠন যারা সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য, ধার্মিক সহিষ্ণুতা এবং মানব কল্যাণের জন্য সমর্পিত। ইসকন একটি ভক্তি আন্দোলন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসকনের একাধিক শাখা রয়েছে এবং প্রতিটি জায়গায় মানবতার সেবা এবং ভক্তির প্রচার ও প্রসারের জন্য এনারা সমর্পিত। ইসকন কিংবা কোন সনাতনী কখনোই জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেনা। এমন তথ্যহীন অভিযোগ অপমানজনক। যেভাবে অকারণে ধর্মগুরু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে বোঝা যায় কিভাবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের দমন করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রভু চিন্ময় দাসকে মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর অস্ত্র সহ হামলা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশের সরকারের উচিত এমন কট্টরপন্থী সংগঠনগুলির হাত থেকে ইসকনের মতো মানবতাবাদী সংগঠনকে রক্ষা করা, কিন্তু, নিজেদের আভ্যন্তরীণ কারণে তারা এমন করছে না।’
সবশেষে তিনি বলেন,’আমরা প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। আমরা কোন দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না কিন্তু এই ঘটনা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলার ঘটনার থেকে অন্য। এটা একটি ভক্তি আন্দোলনকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার নির্মম প্রয়াস। তাই ভারতীয় জনতা পার্টি বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করছে যে তারা যেন স্বামী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুকে অবিলম্বে মুক্তি দেয় এবং তার বিরুদ্ধে সমস্ত মিথ্যা মামলা যেন সরিয়ে নেওয়া হয়। তার সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে বাংলাদেশের সমস্ত হিন্দু এবং হিন্দু মন্দির যেন সুরক্ষিত থাকে এবং সংখ্যালঘুদের যেন পলায়ন না করতে হয়। এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে সংখ্যালঘুরা যেন নিজেদের সুরক্ষার কথা ভেবে বিচলিত না হয়ে নিজেদের বাড়িতে নির্ভয়ে থাকতে পারে। আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর লাগাতার অত্যাচার লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশের সরকারের অবিলম্বে উচিত তাদেরকে সুরক্ষা প্রদান করে তাদের একটি সম্মানজনক জীবন যাপন করার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। আমরা ভারত সরকারকে এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাই।’।