জ্বালানি তেল ও গ্যাসের জন্য ভারত মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ও রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল । কিন্তু উত্তরপ্রদেশ থেকে এমন একটা খবর এসেছে যা রীতিমতো অবাক করে দেওয়ার মত । ওএনজিসি উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় রাশিয়ার প্রায় সমান অপরিশোধিত তেলের মজুদ আবিষ্কার করেছে, যা শত শত বছর ধরে ভারতের তেলের চাহিদার ৭৫% পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে । বালিয়ায় গঙ্গানদীর অববাহিকায় আবিষ্কৃত এই বিশাল অপরিশোধিত তেলের মজুদ ভারতে একটি নতুন শক্তি বিপ্লবের সূচনা হতে পারে । এখন উত্তরপ্রদেশের বালিয়া দেশের জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণতায় আশা জাগিয়েছে৷
তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কর্পোরেশন (ONGC) গঙ্গা অববাহিকায় বিশাল অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ আবিষ্কার করেছে। এই ভান্ডারটি বালিয়া থেকে প্রয়াগরাজ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে এবং কয়েক দশক ধরে ভারতে জ্বালানি সরবরাহ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ওএনজিসি দল বালিয়ার সাগরপালি এলাকায় খননের কাজ শুরু করেছে এবং এখানে ৩০০০ মিটারেরও বেশি গভীরতার একটি কূপ খননের প্রক্রিয়া চলছে, এবং বৃহৎ পরিসরে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে। যার কারণে আগামী সময়ে এই এলাকা থেকে তেল উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই আবিষ্কার দেশজুড়ে জ্বালানি বিপ্লব আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং ভারতকে তেল আমদানির উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। গঙ্গা অববাহিকায় এই তেলের মজুদ উত্তর প্রদেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও আশীর্বাদ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। সরকার এবং ওএনজিসি এই প্রকল্পটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যা স্থানীয় জনগণের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করবে। জ্বালানি খাতে এই গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের উপর বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় সরকার প্রশাসন গভীর নজর রাখছেন। যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুসারে চলে, তাহলে এই আবিষ্কার আগামী বছরগুলিতে ভারতকে জ্বালানি ক্ষেত্রে স্বনির্ভর করে তোলার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। কাছাকাছি খাদ্য উৎপাদনকারীদের জমি অধিগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। এটি খাদ্য উৎপাদকদের ধনী করে তুলতে পারে। বালিয়ায় স্বাধীনতা সংগ্রামী চিত্তু পাণ্ডের পরিবারের জমিতে অপরিশোধিত তেলের বিশাল মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে। গঙ্গা অববাহিকায় তিন মাস ধরে পরিচালিত জরিপের পর এই ভূমিতে ৩,০০০ মিটার গভীরে তেলের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। ওএনজিসি ওই পরিবারের কাছ থেকে সাড়ে ছয় একর জমি তিন বছরের জন্য লিজ নিয়েছে এবং বার্ষিক ১০ লক্ষ টাকা দিচ্ছে।
ওএনজিসি কর্মকর্তাদের মতে, এখানে তেলের মজুদ আছে, তবে তা খুব গভীরে। এর জন্য ৩,০০১ মিটার গভীর খনন করা হচ্ছে। এই খননের জন্য প্রতিদিন ২৫,০০০ লিটার জল ব্যবহার করা হচ্ছে। কর্মকর্তাদের মতে, খননের কাজ খুব দ্রুত এগিয়ে চলেছে, আশা করা হচ্ছে এপ্রিলের শেষ নাগাদ তেলের উপরিভাগ পর্যন্ত খননের কাজ শেষ হবে। এখান থেকে ইতিবাচক রিপোর্ট পাওয়ার পর, গঙ্গা অববাহিকায় চিহ্নিত অন্যান্য স্থানেও একই রকম কূপ খনন করা হবে।
জমির মালিক নীল পান্ডে বলেন, ওএনজিসি কোম্পানি আমাদের জমির জন্য ৩ বছরের জন্য বার্ষিক ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার চুক্তি করেছে। ৩ বছর পর, এটি আরও ১ বছরের জন্য বাড়ানো হবে। অপরিশোধিত তেল সংরক্ষণের সম্ভাবনা নিয়ে এখানে খনন কাজ চলছে। যদি খননকাজে তেল পাওয়া যায়, তাহলে ওএনজিসি কোম্পানি আশেপাশের সমস্ত জমি চড়া দামে অধিগ্রহণ করবে, যা কৃষকদের ব্যাপকভাবে উপকৃত করবে।
ওএনজিসি ১২ বিঘা জমিও অধিগ্রহণ করেছে। এই অধিগ্রহণ করা ১২ বিঘা জমিটি বালিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামী চিত্তু পান্ডের। স্বাধীনতা সংগ্রামী চিত্তু পাণ্ডের প্রপৌত্র বিনয় পাণ্ডের মতে, তার পরিবারের প্রায় ১২ বিঘা জমি ৩ বছর ধরে অধিগ্রহণ করা হয়েছে, যার জন্য প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে।এখন দেখার বিষয় হলো, ওএনজিসির এই সাইটটি ভারতীয় বাজারে কতটা তেল ও গ্যাস সরবরাহ করতে সক্ষম।।