এইদিন ওয়েবডেস্ক,ফ্রান্স,১৪ অক্টোবর : উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের আরাস শহরের একটি স্কুলে এক হামাসপন্থীর দ্বারা জিহাদি হামলার ঘটনা ঘটেছে । চেচেন বংশোদ্ভূত একজন শিক্ষককে নির্মমভাবে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে মোহাম্মদ মোগুচকভ (২০) নামে এক সন্ত্রাসবাদী । হত্যার সময় সে “আল্লাহু আকবর”(ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ) শ্লোগান দিতে দিতে শিক্ষকের গলা ও বুকে ছুরিকাঘাত করে বলে জানা যায় । হামলাকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে । পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার মোট ৮ জনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে ।ধৃতদের মধ্যে মোহাম্মদ মোগুচকভের ১৭ বছর বয়স্ক এক ভাই এবং তার বোনও রয়েছে ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই হামলাকে “ইসলামবাদী সন্ত্রাস” বলে নিন্দা করেছেন । ম্যাক্রন স্কুল পরিদর্শন করার পরে বলেছিলেন,এই স্কুলটি ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বর্বরতায় শিকার হয়েছে । আক্রমণকারীকে আটকানোর জন্য সাহসিকতার সাথে ওই শিক্ষক নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন,সম্ভবত অনেক জীবন বাঁচিয়ে গিয়েছেন তিনি । ম্যাক্রোঁ বলেন, অন্য একটি অঞ্চলে আরেকটি আক্রমণের চেষ্টা নিরাপত্তা বাহিনী রুখে দিয়েছে ।
উল্লেখ্য, আরাস শহরে বিশাল সংখ্যক ইহুদি ও মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে । ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেন যে সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটছে এবং আরাস শহরের এই ঘটনার মধ্যে তার একটি যোগসূত্র রয়েছে ।জাতীয় সন্ত্রাসবিরোধী প্রসিকিউটর ঘোষণা করেছে যে তারা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী প্রসিকিউটর জিন-ফ্রাঙ্কোইস রিকার্ড বলেছেন,আহতদের মধ্যে একজন স্কুল সিকিউরিটি এজেন্ট রয়েছেন, যার শরীরে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে । তার অবস্থা আশঙ্কাজনক । একজন শিক্ষক কম গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন । এছাড়া একজন ঝাড়ুদারও ক্লিনারও আহত হয়েছেন । পুলিশের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, স্কুলের কোনো শিক্ষার্থী আহত হয়নি।
জানা গেছে,ঘাতক সন্ত্রাসবাদী মোহাম্মদ মোগুচকভ মূলত রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চল চেচনিয়ার বাসিন্দা। ইতিমধ্যে একটি সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি হিসাবে “ফিচে এস” নামে পরিচিত একটি ফরাসি জাতীয় রেজিস্টারে নাম রয়েছে তার । ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা, ডিজিএসআই দ্বারা ইলেকট্রনিক এবং শারীরিক নজরদারির অধীনে ছিল মোগুচকভ ।
প্রসঙ্গত,ফ্রান্স ২০১৫ সাল থেকে ইসলামপন্থী উগ্রপন্থীদের দ্বারা ধারাবাহিক আক্রমণের শিকার হয়েছে । যার মধ্যে ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিসে আত্মঘাতী এবং বন্দুক হামলার ঘটনা রয়েছে । ইসলামিক স্টেট (আইএস) দাবি করেছে যে ওই হামলায় ১৩০ জন নিহত হয়েছে । পরে ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর প্যারিসের শহরতলিতে স্কুলের কাছে একজন চেচেন দ্বারা শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটির শিরশ্ছেদ করা হয় । সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইসলামি জিহাদি কর্মকাণ্ডে কিছুটা শিথিলতা দেখা দিলেও কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে হুমকি রয়েই গেছে ।
গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ম্যাক্রোঁ বলেছেন যে ফ্রান্সের ৫৮২ টি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনা ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে । আরাস শহরের হামলার ঘটনার পর তিনি ফরাসিদের “কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে” এবং “একতাবদ্ধ থাকার” বার্তা দিয়েছেন । ফরাসি শিক্ষামন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আটাল আঞ্চলিক শিক্ষা আধিকারিকদের একটি বার্তায় বলেছেন যে স্কুলগুলিতে “বিলম্ব না করে” নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত।
জানা গেছে,ফরাসি সরকারের নির্দেশ অমান্য করে, কয়েকশ মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মধ্য প্যারিস এবং অন্যান্য ফরাসি শহরে সমবেত হয়ে ফিলিস্তিনিপন্থী এবং ইসরায়েল-বিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছিল । প্যারিসে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে এবং বলেছে যে তারা উপস্থিত প্রায় ৩,০০০ জনের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।।