এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১৪ মার্চ : বাংলাদেশের একের পর এক জেলা থেকে শিশুকন্যাকে ধর্ষণের খবর পাওয়া গেছে । তবে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ও মানবতাকে লজ্জিত করার মত ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ৷ গভীর রাতে স্ত্রী যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল তখন পাশে ঘুমে আচ্ছন্ন নিজের শিশুকন্যার মুখ চেপে ধরে পাশবিক নির্যাতন চালায় বাবা জয়নাল আবেদীন । যদিও শিশুটির মা তার স্বামীর এই কুকীর্তির কথা টের পেয়ে যায় । চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার বড়দিঘির উত্তর পাড়ের ঘটনা । সোমবার(১০ মার্চ) গভীর রাতে এই ঘটনার পরের দিন হাটহাজারী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করে শিশুটির মা । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্ত বাবাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায় । শিশুটি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে বাংলাদেশের হাজারি দর্পন ২৪ ডট কম নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলের প্রতিবেদক জানান,জয়নাল আবেদীনের বাড়ি মানিকছড়ির সাপমারা এলাকায় । তার স্ত্রীর বাড়ি চাতুর জেলায়৷ ট্রাকের খালাসির কাজ করে জয়নাল আবেদীন । সেই সূত্রে পরিবার নিয়ে বড়দিঘির উত্তর পাড়ে একটা ভাড়াবাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে সে । ওই নরপশু বাবার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি ।
তবে বাংলাদেশে নিজের মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা এই প্রথম নয় । দিন কয়েক আগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রামপুরায় ১৩ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মেয়েটির নিজের বাবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।রামপুরার পূর্ব হাজীপাড়ায় বউ বাজারে ভাড়া বাড়িতে থাকে নির্যাততা কিশোরীর পরিবার। বাবা ও দুই ভাই-বোনের সংসার তাদের। গত শনিবার গভীর রাতে এক প্রতিবেশী বিষয়টি টের পান। এরপর কিশোরীকে উদ্ধার করতে পুলিশকে খবর দেন।এছাড়া বাংলাদেশে একের পর এক মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ।
গাজীপুরে ধর্ষণের ঘটনা :
বাংলাদেশের গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার হরিদেবপুর এলাকায় প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে এসে ধষর্ণের অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন এক তরুণী। মামলায় প্রেমিক ফরিদ পালোয়ান সহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন। অভিযুক্ত প্রেমিক ফরিদ পালোয়ান উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের হরিদেবপুর গ্রামের মৃত মিয়ার উদ্দিন পালোয়ানের ছেলে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে ফরিদ পালোয়ানের এক বছর আগে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয়। সেখান থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ফরিদ তরুণীকে সামনাসামনি দেখা করতে বলেন। পরে ওই তরুণী কুমিল্লা থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের হরিদেবপুর গ্রামে প্রেমিক ফরিদ পালোয়ানের বাড়ির কাছে দেখা করতে আসেন। একপর্যায়ে ফরিদ স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতায় তরুণীকে ধর্ষণ করে এবং তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। পরে ওই তরুণী নিজ বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কাছে বিষয়টি জানালে পরিবার ভুক্তভোগী তরুণীকে থানায় মামলা করতে বলে। পরে ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে বুধবার দিবাগত রাতে সাতজনকে অভিযুক্ত করে কালীগঞ্জ থানায় একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘মেয়েটি বুধবার দিবাগত রাতে থানায় এসে সাতজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছে। পরে সেই মামলার প্রেক্ষিতে হরিদবপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে পারভীন বেগম (৫১) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
মেহেরপুরে ৯ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ :
মেহেরপুরে ৯ বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণের মামলায় জামিন পেয়ে ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আসামিদের বিরুদ্ধে। এর আগে ভুক্তভোগীর পরিবার প্রতিকার চেয়ে থানায় অভিযোগ করে। কিন্তু পুলিশের এক এসআই অভিযুক্ত ধর্ষককে বাঁচাতে পক্ষপাতিত্ব করেছেন বলে অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে সদর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। পরে পুলিশ সুপারের আশ্বাসে থানা চত্বর ত্যাগ করে বিক্ষোভকারীরা।
জানা যায়, সদর উপজেলার একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাসকারী পরিবারের ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে সহযোগীর মাধ্যমে ভিডিও ধারন করে বায়েজিদ নামের এক যুবক। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ, আলামিন ও বরকত আলী নামের তিনজনকে আসামি করে মেহেরপুর আদালতে ধর্ষণ মামলা করেন। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, এরপর আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের হুমকি দিয়ে বাদীকে মামলা তুলে নিতে বলে। ধর্ষণ মামলার বাদী প্রতিকার চেয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলে মীমাংসার জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর থানার এসআই সুজয় কুমার উভয় পক্ষকে নিয়ে থানায় বসেন। এসময় এসআই সুজয় কুমার আসামিদের পক্ষ থেকে বাদীকে চাপ দিতে থাকেন। খবর পেয়ে থানায় গিয়ে প্রতিবাদ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী তুষার ও সিয়াম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই সুজয় কুমার থানার মধ্যেই তুষার ও সিয়ামকে মারধর করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থানা ঘেরাও করে এবং এসআই সুজয় কুমার ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে থানা এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এদিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেনাবাহিনীর একটি দল থানায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। মেহেরপুর পুলিশ সুপার মাকছুদা খানম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে পুলিশ সুপারের বক্তব্য প্রত্যাখান করে।
পরে পুলিশ সুপার এসআই সুজয়কে সাময়িক বরখাস্ত, ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে থানা চত্বর থেকে বের হয়ে আসে ছাত্র-জনতা। মেহেরপুর পুলিশ সুপার মাকছুদা খানম এই তথ্য জানান।
নারায়ণগঞ্জের ৭ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চকলেট কিনে দেওয়ার কথা বলে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক কাঁচামাল ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার তারাব পৌরসভার রূপসীর একটি এলাকার এই ঘটনায় শিশুর বাবা ও মাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বাড়ির মালিকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, পরে বিষয়টি জানতে পেরে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। রূপগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে ডাক্তারি পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে। পাশাপাশি জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে রুপসীর ওই এলাকায় সাত বছরের ওই শিশুকে চকলেট কিনে দেওয়ার কথা বলে কাঁচামাল ব্যবসায়ী তাঁর দোকানের ভেতরে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। এসময় এক নারী বিষয়টি দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের জানান। শিশুটিও তার বাবা ও মাকে এ ঘটনা জানায়। পরে শিশুদের বাড়িওয়ালাসহ স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন মিলে ধর্ষণের ক্ষতিপূরণ বাবদ শিশুর পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা দেবেন বলে আশ্বাস দেন। রাত নয়টার দিকে এলাকাবাসী ধর্ষণের বিষয়টি জানতে পেরে বিক্ষোভ করেন। এসময় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বাড়িওয়ালাসহ স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ওই ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে বের করে পালাতে সহযোগিতা করেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, শিশুটিকে উদ্ধারের পর চিকিৎসার জন্য পুলিশ হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
সিরাজগঞ্জে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ :
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গত ৯ মার্চ উপজেলার পাঙ্গাসি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিশুকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত স্কুলছাত্র। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে,শিশুটি যে স্কুলে পড়ে অভিযুক্ত (১৫) সেই স্কুলের শিক্ষিকার ছেলে। তাঁর বাড়িতেই ঘটেছে ঘটনা।রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি মহম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, গত রবিবার সকালে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শিশু যত্ন কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় একটি এনজিও পরিচালিত আঁচল স্কুলে পড়তে যায়। ওই স্কুলের শিক্ষিকার বাড়িতে স্থাপিত স্কুলে পড়তে যাওয়া শিশুটিকে একা পেয়ে শিক্ষিকার ছেলে ধর্ষণ করে বলে জানায় ভুক্তভোগীর অভিভাবকেরা। ওসি বলেন, ওইদিন দুপুরে ভুক্তভোগী শিশুটি বাড়িতে গেলে তার পরিবারের লোকজন বিষয়টি বুঝতে পারলে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের চিকিৎসা নেয়। এতে অবস্থার উন্নতি না হলে মঙ্গলবার রাতে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে ।।