প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৬ জুন : বন্দুক ও গুলির লড়াইয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা বন্দির দৌলতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে তৈরি হল নতুন ইতিহাস। তাও আবার যে সে বন্দি নয়।এই বন্দি হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম।একদা রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের ঘুম কেড়ে নেওয়া মাওবাদী নেতা অর্ণব বুধবার ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি’র জন্য ইন্টারভিউ দিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে।যাঁর ইন্টারভিউ নিলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইতিহাস বিভাগের দিকপালরা অধ্যাপকরা।আর তা নিয়েই এদিন সরগরম থাকলো বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বর।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অর্ণব দামের এখন শ্রীঘর বাসী।পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত হয় অর্ণব।গত ২৯ ফেব্রুয়ারী সাজা ঘোষণার পর প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেল,পরে গত ১৭ মার্চ থেকে অর্ণবের ঠিকানা হুগলীর চুঁচুড়ার সংশোধনাগার। সেখানে লাইব্রেরী আছে। সেখান থেকে বই নিয়ে অর্ণব পড়াশোনা চালান। তাঁকে পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়ার তিনি আর্জি জানান।বিচারক তাঁর আদেশে সেই আবেদনের বিষয়টি নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা বিবেচনা করতে বলেন। কিন্তু সংশোধনাগারে কেউ অর্ণবের আবেদনকে পাত্তা দিচ্ছিল না বলে অভিযোগ ওঠে ।তবে নিজের দাবিতে অনড় থাকেন অর্ণব। দাবি আদায়ের জন্যে অর্ণব গত সোমবার অনশন প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরুর কথা ঘোষণা করেন।
এমনটা জেনে বন্দি অর্ণবের পাশে দাঁড়ায় এপিডিআর সংগঠন। তারা অর্ণবের দাবির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে হুগলি জেল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায়। দাবি না মানলে ভেতরে-বাইরে একযোগে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেয় এপিডিআর।এমত অবস্থায় জেল প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। অর্ণবের পিএইডির ইন্টারভিউর ব্যবস্থা করে।সেইমত বুধবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ণবের ইন্টারভিউ নেওয়া হল।
নিদিষ্ট সময়ের আধ ঘন্টা আগে সকাল সাড়ে ৯ টা অর্ণব দাম বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে সশরীরে হাজির হন। তাকে ঘিয়ে থাকে পুলিশের কড়া পাহারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিষ্ঠ উন্নয়ন আধিকারিক ও কলা অনুষদের সচিব ইন্দ্রজিৎ রায় জানান,উনি অর্ণব ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি (ইগনু) থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হয়েছেন। নিয়ম মেনেই উনি আবেদন করেছিলেন। আমরা সেই আবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের গোচরে আনি।ঠিক হয় অর্ণব ইউ জি সি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মাবলী মেনে আবেদন করলে তাকে সুযোগ দেওয়া হবে। সেইমত হুগলী জেলা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে জানান হয়। তারা সব ব্যবস্থা করে এদিন তাকে নিয়ে আসেন। সব কিছু ঠিক থাকলে অর্থাৎ ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হলে অর্ণব পিএইচডি করার সুযোগ পাবেন।।