জয়দীপ মৈত্র,দক্ষিণ দিনাজপুর,২৭ নভেম্বর : উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ঐতিহ্যপূর্ণ শতাব্দী প্রাচীন ‘বোল্লা রক্ষা কালী’ বা ‘বোল্লা কালী’ পুজো শুরু হল । শুক্রবার সাড়ম্বরে পূজিতা হলেন বোল্লা কালী মাতা । শনিবার পূজোর দ্বিতীয় দিন । সন্ধ্যা নামতেই দেখা গেল তিল ধারনের জায়গা নেই মন্দির প্রাঙ্গনে । কয়েক হাজার পূণ্যার্থী পূজো দেখতে বোল্লা কালী মন্দিরে এসে ভিড় করেন ।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বোল্লা গ্রামে অবস্থিত ঐতিহ্য ও মাহাত্ম্য সমৃদ্ধ রক্ষাকালী মন্দির বোল্লা কালী বলেই সুপ্রসিদ্ধ । প্রতিবছর রাসপূর্ণিমার পরবর্তী শুক্রবারে মায়ের বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয় ও সোমবারে মায়ের বিসর্জন হয় । এই কয়েকদিন যাবৎ মায়ের পুজোকে ঘিরে এলাকা উৎসব মুখর হয়ে থাকে। এছাড়াও সারাবছর নিয়মের সাথে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও মঙ্গলবারে পুজো হয় । বোল্লা কালী পূজোয় যে মেলা বসে তা উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা হিসাবে পরিচিত । দুই দিনাজপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা ও রাজ্য, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ এই পুজো দেখতে আসেন।
উল্লেখ্য, গত দু’বছর ধরে চলতে থাকা করোনা আবহের জেরে এবছর বোল্লা কালী পুজো হলেও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রশাসনের নির্দেশে মেলা বন্ধ রয়েছে । এবারও মেলা হয়নি । সেই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে সাথে মানতের পাঁঠা বলিও । তবে করোনা প্রটোকলকে প্রাধান্য দিয়ে বোল্লা কালী পুজো সাড়ম্বরে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।
কথিত আছে তৎকালীন বল্লভ মুখোপাধ্যায় নামের এক জমিদারের নাম থেকে অঞ্চলটির নাম হয় বোল্লা । ওই জমিদারের সময় থেকেই সূচনা হয় বোল্লা গ্রামের রক্ষা কালীপূজোর । বোল্লা গ্রামে অবস্থিত বলে মাতা ‘বোল্লা রক্ষা কালী’ বা ‘বোল্লা কালী’ নামে ভক্ত মহলে সুপ্রসিদ্ধ । দেবীর হাতের খর্গটি সোনার তৈরি । খর্গসহ প্রায় আড়াই টনের গহনা পড়ানো থাকে দেবীর শরীরে । পূজোর প্রসাদের মধ্যেও রয়েছে অভিনবত্ব । কদমা ও বাতাসাকে দেবীর প্রধান প্রসাদ হিসাবে মানা হয় । চিনির তৈরি ওই প্রসাদ বিভিন্ন প্রাণীর অবয়বে প্রস্তুত করা হয় । পাশাপাশি মানতের বিভিন্ন আকারের ছোট-বড় বোল্লা কালীর পুজোও দেওয়া হয় । দেবীকে খুবই জাগ্রত বলে মানেন এলাকার বাসিন্দারা । সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এই কালীপূজোয় মেতে ওঠেন ।
এই পূজো ঘিরে শুক্রবার থেকে উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে এলাকাসহ গোটা জেলা । পূজো কমিটির তরফ থেকে মন্দিরে ঢোকার মুখেই বিশাল তোরন নির্মান করা হয়েছে । রঙবেরঙের বৈদ্যুতিক বাতিতে সাজানো হয়েছে দেবীর মন্দিরসহ গোটা চত্বর । মেলা না বসলেও পূণ্যার্থীদের মধ্যে উৎসাহের কোনও খামতি নেই । সারা দিন ধরেই পূণ্যার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন মন্দিরে । বিশেষ করে সন্ধ্যা নামতেই হাজার হাজার পূণ্যার্থী দেবীকে দর্শনের জন্য আসছেন । এদিকে পুলিশি তৎপরতাও তুঙ্গে । বোল্লা মন্দির চত্বরও বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। পূজো প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাদা পোশাকের কয়েকশো পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে । পাশাপাশি চলছে সিসিটিভির নজরদারি ।।